হেলমেট পরলেই এক প্যাকেট পেঁয়াজ 

ওই সংস্থার তরফে বিশ্বরূপ চট্টোপাধ্যায় বলেন, ‘‘পথ নিরাপত্তার বিধি মেনে চলা নিজের ও পরিবারের পক্ষে কতটা প্রয়োজনীয়, তা বোঝাতেই আমরা পথে নেমেছিলাম। যাঁরা বিধি মেনে চলেন, তাঁদের উপহার হিসাবে পেঁয়াজ দিয়েছি।” পেঁয়াজ কেন? তাঁর ব্যাখ্যা, ‘‘পেঁয়াজ নিত্যদিনের রান্নার কাজে লাগে। কিন্তু এখন সেটাই মহার্ঘ্য। তাই সেই উপহারই তাঁদের দিয়েছি।’’

Advertisement

শুভ্রপ্রকাশ মণ্ডল

কাশীপুর শেষ আপডেট: ১৫ ডিসেম্বর ২০১৯ ০৪:৩১
Share:

উপহার: কাশীপুরে একটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার সদস্যেরা। শনিবার। ছবি: সঙ্গীত নাগ

কেজি প্রতি দামে সেঞ্চুরি হাঁকানোর পরেই পেঁয়াজ এখন বহুল চর্চিত বিষয়। ‘সোশ্যাল মিডিয়া’ থেকে পাড়ার চায়ের আড্ডা—সর্বত্রই দাপাচ্ছে পেঁয়াজ। এ বার সেই পেঁয়াজকেই পথ নিরাপত্তার সচেতনতার বার্তা দিতে বেছে নিল পুরুলিয়ার কাশীপুরের একটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা। হেলমেট পরে মোটরবাইক চালালেই চালকের হাতে তুলে দেওয়া হল পেঁয়াজের প্যাকেট! আর যাঁরা হেলমেট পরেননি, তাঁদের দেওয়া হয়েছে ফুল ও চকোলেট।
ওই সংস্থার তরফে বিশ্বরূপ চট্টোপাধ্যায় বলেন, ‘‘পথ নিরাপত্তার বিধি মেনে চলা নিজের ও পরিবারের পক্ষে কতটা প্রয়োজনীয়, তা বোঝাতেই আমরা পথে নেমেছিলাম। যাঁরা বিধি মেনে চলেন, তাঁদের উপহার হিসাবে পেঁয়াজ দিয়েছি।” পেঁয়াজ কেন? তাঁর ব্যাখ্যা, ‘‘পেঁয়াজ নিত্যদিনের রান্নার কাজে লাগে। কিন্তু এখন সেটাই মহার্ঘ্য। তাই সেই উপহারই তাঁদের দিয়েছি।’’
সংস্থার সদস্যদের মধ্যে রয়েছেন সদ্য কলেজ-উত্তীর্ণ, কেউ আবার ছোটখাটো কাজ করেন। পরিবেশ সচেতনতার বার্তা দিতে ইতিমধ্যে গাছে বিজ্ঞাপনের জন্য বেঁধা পেরেক তাঁরা খুলেছেন, বাজারে গিয়ে প্লাস্টিকের ক্যারিব্যাগ ব্যবহার বন্ধেও প্রচার চালিয়েছেন। তাঁরাই নিজেদের পকেটের টাকা খরচ করে ‘মহার্ঘ্য’ পেঁয়াজ বাজার থেকে কিনে এ দিন সকাল ১০টায় পৌঁছে যান কাশীপুর-বাঁকুড়া রাস্তায়, কাশীপুরের পঞ্চকোট রাজ হাইস্কুলের কাছে। সেখানে পথ চলতি মোটরবাইক আরোহীদের থামিয়ে কাউকে পেঁয়াজের প্যাকেট, কাউকে ফুল, চকোলেট তুলে দেন।
সংস্থার সদস্যদের মধ্যে রূপা মিশ্র, গৌতম মাহাতো জানান, এ দিন ২৫ জনকে হেলমেট পরে দেখে তাঁরা আড়াইশো থেকে পাঁচশো গ্রাম করে পেঁয়াজ দিয়েছেন। তবে হেলমেট না পরা লোকজনের সংখ্যা অনেক বেশি। তাঁদের সংখ্যা প্রায় ৭০ জন।
হেলমেট পরা আর হেলমেটহীন— সবাই ওঁদের এই উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়েছেন। কাশীপুরের আত্মীয়-বাড়ি থেকে নিতুড়িয়ার সুলুঙ্গা গ্রামে বাড়ি ফিরছিলেন রামলাল মাঝি। হেলমেট পরেই বাইক চালাচ্ছিলেন। পেঁয়াজ পেয়ে খুশি হয়ে বলেন, ‘‘হেলমেট পরার জন্য পেঁয়াজ পাব ভাবতেই পারিনি। ওঁদের এই উদ্যোগ নিশ্চয় অনেকের চোখ খুলে দেবে।’’ হেলমেট না পরার জন্য পেঁয়াজ না পেয়ে আফসোস করছিলেন কাশীপুরেরই বাসিন্দা শেখ রহমান ও গগনাবাইদের লক্ষ্মীকান্ত দেওঘরিয়া। তাঁরা জানাচ্ছেন, ‘‘দূরে কোথাও যেতে হলে হেলমেট পরেই মোটরবাইক চালাই। তবে কাছাকাছি যেতে হলে আর হেলমেট পরার কথা মাথায় থাকে না। তাঁদের কথায়, ‘‘এ দিন হেলমেটটা পরে থাকলে, পেঁয়াজ পাওয়া যেত।”
ওই সংস্থার উদ্যোগকে প্রশংসা করে এসডিপিও (রঘুনাথপুর) দুর্বার বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘‘উদ্যোগটা অবশ্য অভিনব। পথ নিরাপত্তার প্রচারে সমাজের সর্বস্তরের লোকজন এ ভাবে এগিয়ে এলে দুর্ঘটনা অনেকটাই রোখা সম্ভব।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement