হালহদিস: বৈঠকের পরে জেলাশাসক মৌমিতা গোদারা বসুর সঙ্গে দীপ্তাংশু চৌধুরী। সিউড়িতে। নিজস্ব চিত্র
জেলা, মহকুমা ও ব্লক স্তরে ‘গ্রিভান্স সেলে’ সাধারণ মানুষের অভিযোগ আসছে কি না, অভিযোগ পেলেও তা খতিয়ে দেখে প্রশাসন প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিচ্ছে কি না— সে সব বিষয়ে খোঁজ নিতে জেলার প্রশাসনিক কর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করলেন ‘গ্রিভান্স সেল’-এর দায়িত্বে থাকা অবসরপ্রাপ্ত কর্নেল দীপ্তাংশু চৌধুরী।
শনিবার দুপুরে সিউড়ি প্রশাসন ভবনে জেলাশাসক মৌমিতা গোদারা বসু, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর) সুবিমল পাল, ডেপুটি পুলিশ সুপার (ডিইবি) উদয় বন্দ্যোপাধ্যায়দের সঙ্গে বৈঠক করেন তিনি। প্রশাসনিক সূত্রে খবর, বোলপুর ফেরার পথে সিউড়ি ২ ব্লকে নেমে তিনি নিজেও খতিয়ে দেখেন, ব্লক স্তরে সাধারণ মানুষের অভিযোগ পেয়ে কেমন কাজ চলছে।
কী কী বিষয়ে আলোচনা হল তা নিয়ে ‘গ্রিভান্স সেল’-এর কর্তা বা জেলা প্রশাসনের আধিকারিকেরা মুখ খুলতে চাননি। তবে প্রশাসনের একটি সূত্রে খবর, সাধারণ মানুষের অভিযোগ শুনে ব্যবস্থা নেওয়ার যে উদ্যোগ রাজ্য সরকার শুরু করেছে, তা যেন যথাযথ ভাবে পালন করা হয়, তা নিশ্চিত করার পরামর্শ দিয়ে গিয়েছেন দীপ্তাংশুবাবু।
প্রসঙ্গত ১০ জুন নবান্নে তৈরি হয়েছিল ‘গ্রিভান্স সেল’ বা অভিযোগ গ্রহণ কেন্দ্র। প্রশাসনিক সূত্রে জানা গিয়েছে, তার মূল উদ্দেশ্য— ১০০ দিনের কাজ, আবাস যোজনা, কন্যাশ্রী, রূপশ্রী থেকে শুরু করে বিভিন্ন সরকারি প্রকল্পে কোনও দুর্নীতির অভিযোগ যাতে সরাসরি ওই সেলে জানাতে পারেন আম-জনতা।
রাজ্যের গ্রিভান্স সেলের সঙ্গে সাযুজ্য রেখে, প্রতি জেলায় জেলাশাসক, মহকুমাশাসক এবং ব্লক উন্নয়ন আধিকারিকদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে— সপ্তাহে এক দিন সাধারণ মানুষের অভাব-অভিযোগ শুনে দ্রুত ব্যবস্থা নিতে হবে। বীরভূমেও সেই ব্যবস্থা চালু হয়েছে। অলিখিত ভাবে সপ্তাহের প্রথম কাজের দিন, সোমবার ‘গ্রিভান্স ডে’ হিসেবে চিহ্নিত। গোটা ব্যবস্থা ঠিক ভাবে কাজ করছে কি না, তা দেখতে ওই সেলের শীর্ষে রয়েছেন রাজ্যের মুখ্যসচিব। রয়েছেন অবসরপ্রাপ্ত কর্নেল দীপ্তাংশু চৌধুরী। তিনিই শনিবার বীরভূমে ঘুরে গেলেন।
তার কারণও রয়েছে। শাসক দলের নেতাদের একাংশের বক্তব্য, লোকসভা নির্বাচনের ফলের পরে স্পষ্ট, রাজ্য সরকারের বিরুদ্ধে সাধারণ মানুষের অভাব-অভিযোগ রয়েছে। সে সব অভিযোগ জানানোর প্রকৃত পথ জানা থাকে না অনেকের। অনেকে সরকারি অফিসে অভিযোগ জানাতে দিয়ে সমস্যায় পড়েন। সুরাহা মেলে না অনেক ক্ষেত্রেই। প্রশাসনিক সূত্রে জানা গিয়েছে, সেই দুর্ভোগ থেকে মুক্তি দিতে জুলাই মাস থেকে জেলা মহকুমা ও ব্লকে গ্রিভান্স সেল খুলে সাধারণ মানুষের অভিযোগ শুনছেন জেলাশাসক, মহকুমাশাসক ও বিডিওরা।
শুধু অফিসে বসে নয়, এলাকায় গিয়েও মানুষের বক্তব্য শোনার কথা সরকারি আধিকারিকদের। প্রশাসনিক সূত্রে খবর, বীরভূমেও সরকারি বিভিন্ন প্রকল্পে সাহায্য পাইয়ে দেওয়ার বদলে উপভোক্তাদের কাছ থেকে ‘কাটমানি’ নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। সেই অভিযোগ নিয়ে সাধারণ মানুষ প্রশাসনের কাছে আসছেন কি না, এলেও প্রতিকার পাচ্ছেন কি না— তা নিয়ে খোঁজ নিয়েছেন গ্রিভান্স সেলের কর্তা।
প্রশাসনিক সূত্রে খবর, সাধারণ মানুষের সঙ্গে প্রশাসনিক আধিকারিকদের মুখোমুখি কথা বলার দিনে থাকার কথা পুলিশ ও রাজ্য সরকারের বিভিন্ন দফতরের আধিকারিকদের। জেলায় সেই নিয়ম ঠিক ভাবে মানা হচ্ছে কি না, সরকারি প্রকল্পের সহায়তা পেতে কাউকে কোনও টাকা দিতে হবে না— তা নিয়ে প্রচার চলছে কি না, এমন নানা বিষয়ে এ দিনের বৈঠকে অলোচনা করা হয়েছে।
জেলা প্রশাসন সূত্রে খবর, গ্রিভান্স সেলে অভিযোগ জমা পড়ছে। তবে খুব বেশি সংখ্যায় নয়। অভিযোগ পেলেই তা খতিয়ে দেখে ব্যবস্থা নেওয়ার চেষ্টা করা হচ্ছে।