প্রতীকী ছবি।
বয়স ষাট পেরিয়েছে প্রত্যেকের। কর্মক্ষমতা কমে এসেছে। এই অবস্থায় টানা লকডাউনে চূড়ান্ত বিপাকে পড়তে হত খয়রাশোলের প্রান্তিক পরিবারের প্রবীণ সদস্য চাঁদমণি মুর্মু, সন্তু বাউড়ি কিংবা সিউড়ি ১ ব্লকের লাডু টুডু, মানিক বাউড়িদের। কিন্তু, ততটা কঠিন সমস্যায় পড়তে হয়নি তাঁদের। সৌজন্যে তপশিলি জনজাতির প্রবীণদের জন্য রাজ্য সরকারের ‘তপশিলি বন্ধু’ ও ‘জয় জোহার’।
করোনা-কালে চালু হওয়া ওই প্রকল্পের জন্য প্রতি মাসে ভাতা হিসেবে এক হাজার টাকা তাঁদের অ্যাকাউন্টে ঢুকছে। বিনামূল্যে রেশন সামগ্রী আর ওই টাকায় ভরসা করে কোনও রকমে চলে যাচ্ছে বলে জানাচ্ছেন ওঁরা। শুধু চাঁদমণি, লাডুরা নন, জেলায় প্রায় ৫৫ হাজার জন প্রবীণ মানুষ ওই প্রকল্পভুক্ত হয়েছেন। অতিমরি পরিস্থিতিতে ওই টাকাই প্রবীণ মানুষগুলোর বাঁচার রসদ জুগিয়েছে বলে মনে করছেন প্রশাসনের কর্তারাও।
প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে রাজ্য বাজেটে এই ভাতা ঘোষণা করে রাজ্য সরকার। বলা হয়েছিল ৬০ বছরের বেশি বয়সী, এমন তপশিলি জাতি ও উপজাতিভুক্ত মানুষ, যাঁরা এখন কোনও সরকারি পেনশন পান তাঁরাই ওই ভাতা পাবেন। চলতি বছরের এপ্রিল থেকে ওই প্রকল্পের সূচনা হয়েছে। ‘‘করোনা পরিস্থিতির মধ্যে জেলার এত মানুষকে এই সরকারি প্রকল্পভুক্ত করা সহজ ছিল না’’— বলছেন অনগ্রসর শ্রেণি কল্যাণ দফতরের জেলা প্রকল্প আধিকারিক মলয় রায়।
প্রশাসনের এক কর্তা জানাচ্ছেন, অদিবাসী জনজাতিভুক্ত ষাটোর্ধ্ব প্রবীণদের জন্য আগে পেনশন চালু ছিল। তাতে মোট উপভোক্তার সংখ্যা ছিল ১৫,৩৩০ জন। ‘জয় জোহার’ আসায় সেই তালিকায় যুক্ত হয়েছেন আরও ৪৫১৪ জন। তবে বার্ধক্যভাতার কোটা তুলে তফশিলি জাতির যে কোনও পুরুষ বা মহিলার জন্য চালু হওয়া বন্ধু প্রকল্পের আওতায় এসেছেন নতুন করে ৫০,৩২৬ জন। দুটি প্রকল্পে মিলিত ভাবে পকৃতের সংখ্যা প্রায় পঞ্চান্ন হাজার। বলা ভাল ততগুলি প্রান্তিক পরিবার।
প্রশাসনের একটা সূত্র বলছে, লোকসভা ভোটের পরে দিদিকে বলো কর্মসূচিই হোক বা প্রশাসনের ‘গ্রিভান্স সেল’ বা জেলাশাসকদের সাধারণ মানুষের অভাব অভিযোগ ‘জনতার দরবার’, যে অভিযোগগুলি উঠে এসেছে সেই তালিকায় সরকারি বার্ধক্য ও বিধবা ভাতা অন্যতম ছিল। এরপরই রাজ্য সরকার বিষয়টি নিয়ে নড়ে বসে। বীরভূম জেলার নতুন ভাতা প্রাপকদের সংখ্যা বেড়ে যাওয়া এবং তপশিলি জাতি ও জনজাতির প্রবীণদের জন্য নতুন করে ভাতা চালু হওয়ার পিছনে অবশ্য বিরোধীরা ভোটের রাজনীতি দেখছেন। কিন্তু, সরকারি আধিকারিকদের অভিজ্ঞতা বলছে, ‘‘সব মিলিয়ে সরকারি ভাতা প্রাপকদের সংখ্যা বৃদ্ধি লকডাউনে কিছুটা হলেও মলম লাগিয়েছে প্রান্তিক পরিবারগুলিতে। ক্ষোভ কমেছে।’’
খয়রাশোলের মসলিয়া গ্রামের চাঁদমণি মুম্মু, শ্রীরামপুরের সন্তু বাউড়ি, সিউড়ি ১ ব্লকের লাতুরবোনা গ্রামের লাডু টাডুরা বলছেন, ‘‘কী যে উপকার হয়েছে বলে বোঝাতে পারব না। আরও ভাল লাগছে পরিবারে এখন আমাদের সম্মান বেড়েছে।’’