পোস্ত চাষ আর নয়, প্রচারে নামছে প্রশাসন

প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, অক্টোবরের ওই বৈঠকে জেলার ১৬৭টি পঞ্চায়েতেরই প্রধানকে ডাকা হয়েছিল। এলাকায় পোস্ত চাষ হচ্ছে কিনা, তা নিয়ে নজরদারি চালানো-সহ তাঁদের কী কী ভূমিকা, সেটা প্রধানদের বুঝিয়ে দিয়েছিলেন প্রশাসনিক কর্তারা। বলা হয়েছিল, এলাকায় পোস্ত চাষ হচ্ছে না, সেই মর্মে  মুচলেকা দিতে হবে।

Advertisement

দয়াল সেনগুপ্ত 

সিউড়ি শেষ আপডেট: ১১ নভেম্বর ২০১৯ ০০:৪৪
Share:

এ ভাবেই হয় পোস্ত চাষ। ফাইল চিত্র

ধান উঠলে ওই জমিতেই শুরু হয় বেআইনি পোস্ত চাষ। বীরভূমের প্রশাসনিক আধিকারিকদের অতীত অভিজ্ঞতা তেমনই। তাই ব্যক্তিগত মালিকানাধীন অথবা সরকারি জমি ব্যবহার করে কেউ যাতে এক ছটাক জমিতেও পোস্ত চাষ না করতে পারে, সেই লক্ষ্যেই এ বার প্রচারে নামতে চলছে প্রশাসন।

Advertisement

পুলিশ-প্রশাসন এবং নারকোটিক্স কন্ট্রোল ব্যুরোর (এনসিবি) সহযোগিতা থাকলেও বেআইনি পোস্ত চাষ ঠেকানোর মূল দায়িত্বে অবগারি দফতর। বীরভূম জেলা অবগারি দফতরের সুপারিন্টেন্ডেন্ট বাসুদেব সরকার বলছেন, ‘‘ জেলাশাসক, জেলা পুলিশ সুপারের উপস্থিতিতে অক্টোবরেই পোস্ত চাষ রোখা নিয়ে একটি বৈঠক হয়েছে। যেহেতু এখনই পোস্ত চাষের সময় এসেছে, তার আগেই বেআইনি ওই চাষের ক্ষতিকারক দিক এবং আইন ভাঙার শাস্তি উল্লেখ করে প্রচার শুরু হবে।’’ মাইকে প্রচার, রেডিয়োয় বিজ্ঞাপন, লিফলেট ছড়ানো, হোর্ডিং, কথাবলা পতুল-সহ নানা আঙ্গিকে লাগাতার প্রচার চালানো হবে বাসুদেববাবু জানিয়েছেন।

প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, অক্টোবরের ওই বৈঠকে জেলার ১৬৭টি পঞ্চায়েতেরই প্রধানকে ডাকা হয়েছিল। এলাকায় পোস্ত চাষ হচ্ছে কিনা, তা নিয়ে নজরদারি চালানো-সহ তাঁদের কী কী ভূমিকা, সেটা প্রধানদের বুঝিয়ে দিয়েছিলেন প্রশাসনিক কর্তারা। বলা হয়েছিল, এলাকায় পোস্ত চাষ হচ্ছে না, সেই মর্মে মুচলেকা দিতে হবে। আর চাষ হলে খবর দিতে হবে প্রশাসনকে। তা না হলে সংশ্লিষ্ট প্রধানের বিরুদ্ধেই আইনানুগ ব্যবস্থা নিতে পারে প্রশাসন। আবগারি সুপার বলেন, ‘‘শুধু প্রধানেরাই নন, সরকারি জমি ব্যবহার করে কেউ পোস্ত চাষ করছেন না, এই মর্মে লিখিত শংসাপত্র দিতে হবে সেচ দফতর, ভূমি ও ভূমি সংস্কার দফতর, বন দফতরকে। এবং সেটা দিতে হবে ডিসেম্বর, জানুয়ারি ও ফেব্রুয়ারিতে।’’

Advertisement

প্রশাসনের এই পদক্ষেপের পিছনে অবশ্য কারণ রয়েছে। জানা গিয়েছে, প্রশাসনিক সদিচ্ছা ও সংশ্লিষ্ট প্রতিটি দফতরের মধ্যে ভাল সমন্বয়কে হাতিয়ার করে ২০১১-’১২ সাল নাগাদ বীরভূম জেলায় বেআইনি পোস্ত চাষ প্রায় নিশ্চিহ্ন করে দেওয়া সম্ভব হয়েছিল। তার আগে ২০০৫ থেকে ২০১১ সাল পর্যন্ত এই জেলায় অবৈধ পোস্ত চাষের রমরমা ছিল। শুধু তাই নয়, পোস্তর আঠা সংগ্রহ করে তা মাদক কারবারিদের হাতে তুলে দিয়ে মোটা টাকা রোজগার করার কারবারও ফুলেফেঁপে উঠেছিল।

অভিযোগ উঠেছিল, আবগারি দফতর, পুলিশ এবং শাসকদলের একাংশের যোগসাজশেই এই কারবারের রমরমা। তদন্তে নেমে পুলিশ-প্রশাসন জানতে পারে, একাধিক পঞ্চায়েত প্রধান, প্রাথমিক স্কুলের শিক্ষকও এই কারবারে জড়িয়ে রয়েছেন। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাচ্ছে দেখে বীরভূমে অবৈধ পোস্ত চাষ ঠেকাতে প্রশাসন উঠেপড়ে লাগে। আবগারি দফতর, জেলা প্রশাসন, পুলিশ এবং নারকোটিক্স কন্ট্রোল ব্যুরোর মিলিত অভিযান, নিয়মিত প্রচার ও সংশ্লিষ্ট চাষি বা জমির মালিকদের ব্যাপক ধরপাকড়ের পাশাপাশি ধৃতদের বিরুদ্ধে মাদক আইনে শুরু হয়েছিল মামলাও। হাতেনাতে ফলও মিলেছিল। পোস্ত চাষ সম্পূর্ণ রুখে এনসিবি-র পক্ষ থেকে ‘মডেল জেলা’র পুরস্কারও জিতে নিয়েছিল বীরভূম।

কিন্তু এর পরেই আত্মতুষ্টিতে ভুগতে শুরু করে প্রশাসন। সেই সুযোগে ২০১৪ সাল থেকে ’১৬ সাল ফের পোস্ত চাষের রমরমা শুরু হয় জেলায়। বিশেষ করে অজয়, হিংলো এবং শাল নদী ঘেঁষা এলাকায়। প্রথম দিকে সরকারি জমি বেছে চাষ করছিলেন কিছু চাষি। ’১৬ সালে বিধানসভা ভোটকে ঢাল করে দেদার পোস্ত চাষ হয় কয়েক হাজার একর জমিতে। বেআইনি পোস্ত চাষে সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছিল তরুণ প্রজন্ম। কারণ, পোস্তর আঠার সঙ্গে রাসায়নিক মিশিয়ে ‘ব্রাউন সুগার’ তৈরির কৌশল রপ্ত করে ফেলেছিল দুবরাজপুর ও খয়রাশোলের অনেকে কারবারি। সেটাই জেলার বিভিন্ন প্রান্তে ছড়িয়ে পড়ে।

ফের ২০১৭ সাল থেকে পূর্ণ শক্তিতে আসরে নামে প্রশাসন। লাগাতার প্রচারের সঙ্গে ড্রোনেও নজরদারি চলানো হয়েছিল। তাই গত দু’বছর জেলায় বেআইনি পোস্ত চাষ হয়নি। এ বারও সেই রেকর্ড অক্ষুণ্ণ রাখতে জেলা প্রশাসন তৎপর। তাই এখন থেকেই প্রচার ও নজরদারির কাজ শুরু করা হচ্ছে।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement