—প্রতিনিধিত্বমূলক ছবি।
স্কুল ছাড়িয়ে ১৫ বছরেই বড় মেয়ের বিয়ে দেওয়া হয়েছিল। মেজ মেয়েরও বিয়ের তোড়জোড় চলছিল। সেই সময়েই শ্বশুরবাড়িতে নির্যাতিত হয়ে বড় মেয়ে বাপেরবাড়ি ফিরে আসে। দিদির মতো নির্যাতনের শিকার যাতে হতে না হয়, তাই এক বন্ধুর হাত ধরে বাড়ি থেকে পালিয়েছিল মেজো মেয়ে। কম বয়সে বিয়ের চাপে পড়াশোনা বন্ধ হওয়া বাঁকুড়া জেলার এক গ্রামের দুই বোনকে ফের স্কুলে ফিরিয়ে এনেছে স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা ‘মান্ট’। এ বছর এক সঙ্গে মাধ্যমিকে বসতে চলেছে তারা।
১২-১৩ বছর বয়সে নিজের বিয়ে আটকে ‘রোল মডেল’ হওয়া পুরুলিয়ার বাঘমুণ্ডির ভুরশু গ্রামের মেয়ে বীণা কালিন্দী স্নাতক উত্তীর্ণ হয়ে সংসারী হয়েছেন। তিনি বলেন, ‘‘আমাদের লড়াইটাই ছিল অল্প বয়সে বিয়ের বিরুদ্ধে। এতে সমাজে একটা বার্তা ছড়িয়ে দেওয়ার চেষ্টা চালিয়েছিলাম আমরা। তবে আক্ষেপ একটাই, এত প্রচার আর প্রশাসনের পদক্ষেপের পরেও এখনও বাল্যবিবাহ পুরোপুরি বন্ধ করা যায়নি। বাঁকুড়ার দুই বোন ফের পড়াশোনা শুরু করে পরীক্ষায় বসতে চলেছে শুনে, ভাল লাগছে। তাদের জন্য শুভেচ্ছা রইল। সবাই এই প্রথার বিরুদ্ধে এককাট্টা হলে অচিরেই এই সামাজিক অভিশাপ পুরোপুরি রুখে দেওয়া যাবে বলে বিশ্বাস করি।’’
ওই স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার প্রজেক্ট কো-অর্ডিনেটর ব্রততী দত্ত বলেন, “পরিবারের জোরাজুরিতে নাবালিকা অবস্থায় বিয়ে করে জীবনে আঁধার নেমে এসেছিল দুই বোনেরই। শেষ পর্যন্ত তাদের পরিবারকে বুঝিয়ে আবার ওদের শিক্ষার আঙিনায় আমরা নিয়ে আসতে পেরেছি, এটাই আমাদের বড় পাওনা।”
ব্রততী জানান, ওই দুই নাবালিকার বাবা দিনমজুর। পাঁচ মেয়েকে স্বামী-স্ত্রীর বাস। মেয়েরা জানিয়েছে, তাদের বাবা প্রায়ই নেশা করে বাড়িতে অশান্তি করেন। সাত তাড়াতাড়ি পাঁচ মেয়ের বিয়ে দিয়ে দায়মুক্ত হতে চেয়েছিলেন।
মেজ মেয়ের কথায়, ‘‘দিদিকে জোর করে বাবা পড়াশোনা ছাড়িয়ে বিয়ে দিয়ে দিয়েছিল। আমারও বিয়ের ব্যবস্থা করেছিল। অজানা লোককে বিয়ে করে দিদি নির্যাতনের শিকার হয়। ওই সমস্যা থেকে বাঁচতেই এক বন্ধুর সঙ্গে পালিয়ে ছিলাম।”
তবে স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার মধ্যস্থতায় দুই বোন ফের স্কুলের আঙিনায় পৌঁছে নতুন জীবন ফিরে পেয়েছে। তারা বলে, “পড়াশোনা ছাড়ার ইচ্ছে কোনও দিনই আমাদের ছিল না। পরিস্থিতির চাপে পড়ে জীবনটাই নষ্ট হতে বসেছিল। এখন আবার স্কুলের যাওয়ার সুযোগ পেয়ে যেন নতুন জীবন ফিরে পেলাম।”
নাম প্রকাশে অনিচ্ছু তাদের স্কুলের এক শিক্ষক বলেন, “দুই বোনই এ বার মাধ্যমিক দেবে। প্রথম দিকে কিছু ক্লাস ওরা করতে পারেনি। তবে ওদের পরীক্ষার জন্য প্রস্তুত করতে আমরা নানা ভাবে চেষ্টা করেছি।’’
ওই নাবালিকাদের বাবা আঠারো বছর বয়সের আগে মেয়েদের বিয়ের ব্যবস্থা করবেন না বলে মুচলেকা দিয়েছেন। ব্রততী বলেন, “আমরা নিয়মিত ওই পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ রেখে চলেছি। স্কুলের সঙ্গেও আমাদের যোগাযোগ আছে।”
ঘটনা হল, দেশের একাধিক স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন একজোট হয়ে ২০৩০ সালের মধ্যে দেশকে নাবালিকা বিয়ে মুক্ত করতে উদ্যোগী হয়েছে। ‘মান্ট’ ওই স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনগুলির মধ্যে অন্যতম।