১৫ নম্বর ওয়ার্ডের পুলিশ আবাসনের সামনে। ছবি: অভিজিৎ সিংহ
সম্প্রতি বাঁকুড়া এসেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যাপাধ্যায়। তাঁর সফরের আগে শহরের পথঘাট থেকে থেকে সাফ করা হয়েছিল আবর্জনা। দু’দিনের সফর শেষে তিনি ফিরে যেতেই পূর্বাবস্থায় ফিরে যেতে শুরু করে বাঁকুড়া। মুখ্যমন্ত্রীর জেলা সফরের দু’সপ্তাহ পরের চিত্র বলছে, শহরের বিভিন্ন জায়গায় উঁকি মারছে জঞ্জাল-আবর্জনার স্তূপ। দু’সপ্তাহের মধ্যেই ভোলবদল হয়েছে শহরের।
জঞ্জাল সাফাই নিয়ে শহরবাসীর অভিযোগ নতুন নয়। নিয়মিত সাফাইয়ের কাজ হয় না বলে অনেকেই অভিযোগ করেন। পুরসভার ক্ষমতায় তৃণমূল। আবর্জনা সাফাই নিয়ে পুরভোটের মুখে শাসকদলকে বিঁধতে ছাড়ছেন না বিরোধীরা। তৃণমূল পরিচালিত বাঁকুড়া পুরবোর্ডের আশ্বাস, আগামী দিনে উন্নত প্রযুক্তির ব্যবহার করে শহরে আবর্জনা সাফাইয়ের কাজ চালু হবে।
বাঁকুড়া শহরবাসীর একাংশের অভিযোগ, নিয়মিত সেখানে সাফাইয়ের কাজ হয় না। জঞ্জাল সাফাই নিয়ে পুরসভার নির্দিষ্ট কোনও পরিকল্পনা নেই। শহরের লোকপুর মোড় এলাকায় সাধারণ মানুষের জন্য একটি শৌচালয় রয়েছে। তার পাশেই রয়েছে জঞ্জাল মজুত রাখার ‘স্ট্যাগ পয়েন্ট’। অভিযোগ, দুপুরেও সেখানে গেলে জঞ্জাল দেখা যায়। এলাকাবাসীর একাংশের দাবি, পরিস্থিতি এমনই যে, ওই শৌচালয়ে যেতে হয় নোংরা ডিঙিয়ে।
স্থানীয় এক ব্যবসায়ীর কথায়, ‘‘প্রতিদিনই স্ট্যাগ পয়েন্ট থেকে থেকে নোংরা তুলে নিয়ে যায় পুরসভা। তা সত্ত্বেও সব সময় আবর্জনায় ভরে থাকে ওই স্ট্যাগ পয়েন্ট। সকালে পুরসভার বড় গাড়ি এসে ময়লা তুলে নিয়ে নিয়ে যায়। তার কিছুক্ষণ পরেই ওয়ার্ডের সাফাই কর্মীরা সেখানে আবর্জনা মজুত করে রেখে যান, যা দিনভর জমা থাকে।” সাফাই কর্মীদের মধ্যে বোঝাপড়া থাকলে এমনটা হত না বলে মনে করেন ওই ব্যবসায়ী।
কেবল লোকপুর মোড়েই নয়, বাঁকুড়া কেন্দুয়াডিহি থেকে প্রণবানন্দপল্লি কিংবা গোবিন্দনগর —সর্বত্রই একই ছবি দেখা যায়। অভিযোগ, শহরের বেশিরভাগ ওয়ার্ডের ‘স্ট্যাগ পয়েন্ট’ সারাদিন আবর্জনায় ভরে থাকে। সেই আবর্জনা মুখে করে টেনে রাস্তায় নিয়ে যায় কুকুর-বেড়ালের দল। বাসিন্দারা জানাচ্ছেন, কোনও দিন জঞ্জাল নিয়ে যাওয়ার গাড়ি না এলে পরিস্থিতি আরও খারাপ হয়। পরপর দু’দিনের আবর্জনায় এলাকা কার্যত ভাগাড়ে পরিণত হয়। ‘স্ট্যাগ পয়েন্ট’ লাগোয়া রাস্তা দিয়ে নাকে রুমাল চেপে হাঁটাচলা করতে হয়।
শহর ঘুরে দেখা গিয়েছে, বেশ কিছু ওয়ার্ডে খোলা জায়গাতেও নোংরা আবর্জনা জমে থাকে। যেমন ভৈরবস্থান বাসস্টপ লাগোয়া এলাকা। সেখানে প্রায়ই আবর্জনার স্তূপ দেখা প্রায়ই। মুখ্যমন্ত্রী এসেছিলেন বলে ওই এলাকায় দীর্ঘদিন ধরে জমে থাকা আবর্জনা সাফ করা হয়েছে, এমনটাই দাবি এলাকার অনেকের। তাঁরা চান, সাফাইয়ের কাজ নিয়মিত ভাবে হোক। ‘‘কিন্তু আমাদের চাওয়া-না চাওয়ায় কার কী আসে যায়’’, আক্ষেপ এক প্রবীণ বাসিন্দার। শহরের লালবাজার, সিনেমারোড, মাচানতলা লাগোয়া বিভিন্ন এলাকার বাসিন্দাদের অভিযোগ, ‘‘মাঝেমধ্যে সাফাইকর্মীরা আসেন না। সাফাইয়ের কাজ এক দিন বন্ধ থাকলেই দুর্ভোগ বাড়ে।
সাফাই নিয়ে পুরসভার বাসিন্দাদের একাংশের মধ্যে জমা ক্ষোভকে পুরভোটে হাতিয়ার করতে চাইছে বিজেপি।পুরসভার ১৬ নম্বর ওয়ার্ডের বিজেপি কাউন্সিলর নীলাদ্রিশেখর দানার অভিযোগ, “শহরের সাফাই কাজ নিয়ে পুর কর্তৃপক্ষের সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনার অভাব রয়েছে। ওয়ার্ডের সাফাই কাজ করাতে কাউন্সিলরদের প্রচুর কাটখড় পোড়াতে হয়। সাফাই কর্মীরও ঘাটতি রয়েছে।”
সাফাই কর্মীর ঘাটতির জন্য আবর্জনা নিষ্কাশনের কাজে সমস্যা হচ্ছে বলে মেনে নিয়েছেন পুরকর্তাদের অনেকেই। শহরে মোট ২৪টি ওয়ার্ড রয়েছে। কিন্তু সাফাই কর্মীর সংখ্যা মেরেকেটে ৫৬৫। পুরপ্রধান মহাপ্রসাদ সেনগুপ্তের বক্তব্য, “সীমিত পরিকাঠামোর মধ্যে কাজ করতে গিয়ে কিছু সমস্যা হলেও শহরের সবক’টি ওয়ার্ডে আমরা পরিষেবা দিচ্ছি। প্রত্যেক কাউন্সিলরই ওয়ার্ডের সাফাই কাজের উপরে নজর রাখেন।” তাঁর দাবি, আগামী দিনে উন্নতমানের প্রযুক্তি ব্যবহার করে শহরে আধুনিক সাফাই পদ্ধতি চালু হতে চলেছে। বাসিন্দারা অবশ্য মনে করছেন, পুরভোটের আগে বরাবরই সাফাই সমস্যা মেটানোর আশ্বাস দেয় রাজনৈতিক দলগুলি। এ বার সে আশ্বাস বাস্তবায়িত হোক।