জঞ্জাল জমছে রাস্তায়। নিজস্ব চিত্র।
রাস্তার ধার ঘেঁষে ঝাঁ চকচকে শপিং মল, মাল্টিপ্লেক্স, রেস্তরাঁ থেকে ফুটপাত জুড়ে থাকা হরেক খাবারের দোকান। সেই রাস্তায় যত্রতত্র ডাঁই হয়ে রয়েছে আবর্জনা। শুয়োর, কুকুর ও বেওয়ারিশ গরুরা সে সব নিয়ে এসে ছড়াচ্ছে রাস্তায়। সোমবার পুরুলিয়া শহরের রাঘবপুর মোড় লাগোয়া দেশবন্ধু রোডের শপিং মলের রাস্তার ছবি। শুধু ওই এলাকা নয়, বড়হাট, কোর্ট মোড়, চকবাজার, মেন রোড, দশেরবাঁধ মোড় লাগোয়া এলাকা থেকে নামোপাড়া, চাইবাসা রোড, মুচিপাড়া, ট্যাক্সিস্ট্যান্ড, বিটি সরকার রোড, ভাটবাঁধ-সহ শহরের বিভিন্ন রাস্তা ও গুরুত্বপূর্ণ মোড়ে চোখে পড়ছে স্তূপীকৃত আবর্জনা। সৌজন্যে, পুরুলিয়া পুরসভার সাফাই বিভাগের অস্থায়ী কর্মীদের কর্মবিরতি।
পুরসভা সূত্রের খবর, সোমবার ওই কর্মীদের কর্মবিরতি চতুর্থ দিনে পড়েছে। টানা চার দিন পথঘাট সাফাই না হওয়ায় জঞ্জালে কার্যত মুখ ঢেকেছে শহরের। দুর্গন্ধের চোটে এলাকায় টেকা দায় হয়ে পড়ছে, অভিযোগ শহরবাসীর অনেকের। বড়হাটের এক ব্যবসায়ী শেখ আখতারের কথায়, “শহরের প্রধান শাক-সবজি ও মাছের হাট এটি। এক দিন এখানে আবর্জনা না তোলা হলে থাকা যায় না। সেখানে তিন-চার দিন আবর্জনা তোলা হচ্ছে না। কী অবস্থা ভাবুন!”
দেশবন্ধু রোডের কানাই দাস জানান, শহরের প্রধান বাণিজ্যিক ওই এলাকায় দিনভর বহু লোকজনের আনাগোনা থাকে। কিন্তু রাস্তার ধারে আবর্জনা জমে থাকায় সকলেই সমস্যায় পড়ছেন। চকবাজারের বাসিন্দা সুকান্ত দে-রও ক্ষোভ, “চকবাজারের মতো জায়গা, সেখানেও এত আবর্জনা পড়ে রয়েছে। দুর্গন্ধে টেকা যাচ্ছে না।“ অনেকেই বিরক্তির সঙ্গে জানান, বারে বারে সাফাই কর্মীদের কর্মবিরতিতে ভুগতে হয়। পুরসভার সমস্যার স্থায়ী সমাধান করা দরকার।
কর্মবিরতিতে থাকা শ্রমিকদের সূত্রে জানা গিয়েছে, বর্তমানে ওই বিভাগে ৬৭০ জন অস্থায়ী কর্মী রয়েছেন। স্থা্য়ী কর্মীর সংখ্যা ৭৫। শহর পরিচ্ছন্ন রাখতে পুরসভাকে অস্থায়ী শ্রমিকদের উপরে অনেকটাই নির্ভর করতে হয়। অস্থায়ী সাফাই কর্মীদের সংগঠনের তরফে সরোজিৎ স্যামুয়েল বলেন, “অক্টোবর ও নভেম্বরের মাইনে বকেয়া রয়েছে। এমনিতেই আমাদের মাইনে কম। তা-ও দু’মাস বাকি থাকায় সংসার টানা যাচ্ছে না। পাড়ার দোকান ধারে মাল দিতেও চাইছে না। আমাদের চলবে কী করে!” তাঁর দাবি, পুজোর ‘বোনাস’ দেওয়ার সময়ে পুরকর্তৃপক্ষ বলেছিলেন, নভেম্বরের শেষে দু’ মাসের টাকা মিটিয়ে দেওয়া হবে। কিন্তু তা হয়নি।”
সাফাই না হওয়ায় শহরবাসী দুর্ভোগে রয়েছেন মেনে সরোজিৎ বলেন, “আমাদের কিছু করার নেই। মাইনে না পেলে আমরা কাজে নামব না। পুরপ্রধানকে তা জানিয়েছি।”
ওই অস্থায়ী কর্মীদের দু’মাসের বেতন বকেয়া রয়েছে মেনে পুরপ্রধান নবেন্দু মাহালি বলেন, “পুজোর পরে থেকে পুরসভার রাজস্ব সে ভাবে বাড়ছে না। আমরা দেখছি কী ভাবে অর্থের সংস্থান করে বেতন মিটিয়ে দেওয়া যায়।” তাঁর সংযোজন, “আমরা দায়িত্ব নেওয়ার আগে থেকেই অস্থায়ী কর্মীরা এ ভাবে মাইনে পান। তাঁদেরও সমস্যা বোঝা উচিত।”