রঘুনাথপুর পুরসভার ভকতপাড়ায় অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রে ত্রিপলের ছাউনির নীচে চলছে রান্না। ছবি: সঙ্গীত নাগ
জমির সমস্যায় পুরুলিয়ার রঘুনাথপুর শহরের ১৪টি অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রের নিজস্ব ভবন তৈরি করা যাচ্ছে না বলে দাবি পুর-কর্তৃপক্ষের। দাবি মানতে নারাজ বিরোধীরা অবশ্য ঘটনার পিছনে তৃণমূল পরিচালিত পুরবোর্ডের সদিচ্ছার অভাবকেই দুষছেন।
রঘুনাথপুর শহরের ১৩টি ওয়ার্ডে মোট ২৪টি অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্র রয়েছে। তার মধ্যে ১৪টির নিজস্ব ভবন নেই। কোথাও কোথাও ভাড়াবাড়িতে কেন্দ্র চললেও ত্রিপল খাটিয়ে, সরকারি দফতরের মোটরবাইকের গ্যারাজে এমনকি খোলা আকাশের নীচেও প্রসূতি ও শিশুদের জন্য রান্না হচ্ছে বলে দাবি। এ ভাবে অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে রান্নার পাশাপাশি, সামগ্রিক ভাবে কেন্দ্রগুলির নিজস্ব ভবন না-থাকায় দৈনন্দিন কাজেও সমস্যায় পড়তে হয়, জানান কর্মীদের একাংশ। ভবন না থাকায় বন্ধ রয়েছে শিশুদের প্রাক-প্রাথমিকের পড়াশোনাও।
রঘুনাথপুর ১ ব্লক সুসংহত শিশুবিকাশ দফতর সূত্রে জানা যায়, শহরের ১ নম্বর ওয়ার্ডের একটি, ২ নম্বর ওয়ার্ডের দু’টি, ৩ ও ৪ নম্বর ওয়ার্ডের একটি করে, ৫ নম্বর ওয়ার্ডের দু’টি, ৬ নম্বর ওয়ার্ডের একটি, ৭ নম্বর ওয়ার্ডের দু’টি এবং ৮, ১১, ১২ ও ১৩ নম্বর ওয়ার্ডের একটি করে কেন্দ্রের নিজস্ব ভবন নেই। ২ নম্বর ওয়ার্ডের ভকতপাড়া কেন্দ্রের কর্মী মৌসুমী আচার্য জানান, ত্রিপল খাঁটিয়ে রান্না হয়। তাতে বিশেষত বর্ষায় খুব সমস্যায় পড়তে হয়। ৩ নম্বর ওয়ার্ডের পাঁইসাপাড়ার কেন্দ্রেও রান্না হয় খোলা জায়গায়। কিছু দূরে নর্দমা রয়েছে জানিয়ে কর্মী নমিতা বিদ বলেন, “বৃষ্টি হলে উনুন ও রান্নার জিনিসপত্র নিয়ে ছুটতে হয় লোকের বাড়িতে।” ৭ নম্বর ওয়ার্ডের বেদিয়াপাড়াতেও দু’টি কেন্দ্রের ঘর না-থাকায় অন্যের ছোট ঘরে কোনও মতে চলে রান্না।
দফতরের ব্লক সুপারভাইজ়ার নন্দা দে বলেন, “নিজস্ব ভবন না থাকায় ওই কেন্দ্রগুলির বেশির ভাগেই প্রাক-প্রাথমিক পড়াশোনা হচ্ছে না। তবে আশঙ্কার কথা, অস্বাস্থ্যকর বা খোলা জায়গায় রান্না হচ্ছে। যে কোনও দিন বিপদ হতে পারে।” পুর-এলাকায় জমি খুঁজে অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রের ভবন তৈরির দায়িত্ব পুরসভার জানিয়ে ব্লকের সিডিপিও রীতেশ দিন্দা বলেন, “২০১৬ থেকে পুর-কর্তৃপক্ষকে কেন্দ্রগুলির ভবন তৈরির অনুরোধ জানানো হচ্ছে। কিছু কেন্দ্রের ভবন তৈরি হলেও বাকিগুলির তৈরি না হওয়ায় নানা সমস্যা হচ্ছে।”
সমস্যা কোথায়? পুরপ্রধান তরণী বাউড়ির দাবি,“ওই সব ওয়ার্ডে পুরসভার নিজস্ব জায়গা না থাকায় ভবন তৈরিতে সমস্যা হচ্ছে।” কংগ্রেসের রঘুনাথপুর সভাপতি তারকনাথ পরামানিকের পাল্টা দাবি, “বেশ কিছু ওয়ার্ডে ফাঁকা সরকারি জমি আছে। একটি ওয়ার্ডে এক পরিবার জমি দিতেও রাজি আছেন। কিন্তু পুরসভা সদর্থক পদক্ষেপই করেনি।” তিনি আরও জানান, ১৩ নম্বর ওয়ার্ডে তাঁর দলের কাউন্সিলর অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রের ভবন না-থাকা নিয়ে বিভিন্ন তরফে অভিযোগ জানানোর পরেই ওই এলাকায় ভূমি দফতরের ফাঁকা জমি চিহ্নিত করা হয়েছে। কাজও দ্রুত শুরু হবে।
এ দিকে, তাঁর আমলে সাতটি নতুন অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রের ভবন তৈরি করা হয়েছিল দাবি করে প্রাক্তন পুরপ্রধান ভবেশ চট্টোপাধ্যায় বলেন, “পুরসভার নিজস্ব জমি না-থাকলে সে ক্ষেত্রে পুরসভা প্রশাসনের সাহায্য নিয়ে অন্য সরকারি দফতরের ফাঁকা পড়ে থাকা জমিতে ভবন তৈরিতে উদ্যোগী হতেই পারে। আসলে সবটাই নির্ভর করছে পুরসভার সদিচ্ছার উপরে। যার অভাব বিভিন্ন ক্ষেত্রেই দেখা যাচ্ছে।” পুরপ্রধান তরণীর তবে দাবি,“অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্র তৈরির জন্য জমির খোঁজ চলছে। জমি মিললেই পদক্ষেপ হবে।”