ছবি সংগৃহীত
লক্ষ্মীর ভান্ডার প্রকল্পে আবেদন করেছেন মহম্মদবাজারের দেওয়ানগঞ্জের তেঁতুলপাড়ার বাসিন্দা মেনকা হেমব্রম। কিন্তু জাতিগত শংসাপত্র না থাকায় সেটা আবেদনের সঙ্গে জুড়ে দিতে পারেন নি। আবেদনের সঙ্গে জাতিগত শংসাপত্র জমা দিতে পারেননি দুবরাজপুর পুরসভার মাজুরিয়ার লক্ষ্মী হেমব্রম কিংবা সিউড়ি ১ব্লকের ভূরকুনা গ্রামের তফসিলি বধূ সঞ্চিতা বাউড়ি।
কেবল মেনকা, লক্ষ্মী বা সঞ্চিতা নন, জেলার ২৫-৬০ বছর বয়সী বহু মহিলারই তফসিলি জাতি-জনজাতি শংসাপত্র না থাকায় ওই প্রকল্পে প্রতি মাসে ৫০০ টাকা করে কম পেতে হবে কি না তা নিয়ে চিন্তায় তাঁরা। চলতি বছরের জানুয়ারিতে মুখ্যমন্ত্রী তফসিলি জাতি ও জনজাতি শংসাপত্র দেওয়ার ক্ষেত্রে গোটা রাজ্যের পাশাপাশি ‘কাঙ্খিত’ গতি না থাকায় বীরভূমের জেলা প্রশাসনকে দূষেছিলেন। এখনও সেটা বহাল বলে অভিযোগ। তবে প্রশাসনের কর্তাদের আশ্বাস, আবেদনের ভিত্তিতে দ্রুত যাতে সকলকে জাতিগত শংসাপত্র দিয়ে দেওয়া যায় সেটা দেখা হচ্ছে।
প্রশাসনের আশ্বাসে খুব একটা ভরসা পাচ্ছেন না আদিবাসী সংগঠনের নেতা রবীন সরেন। তিনি বলেন, ‘‘এখন যাঁরা নতুন করে আবেদন করছেন তাঁরা কবে শংসাপত্র পাবেন জানা নেই। অনেক নথি চাওয়া হচ্ছে। আগের বার দুয়ারে সরকারে বা অন্য সময় যাঁরা অনলাইনে আবেদন করেছেন তাঁদের অনেকেই এখনও শংসাপত্র পাননি। জাতিগত শংসাপত্র নিয়ে আমলাতন্ত্রের নেতিবাচক ভূমিকার জন্যই এই হাল।’’ তাঁর হুঁশিয়ারি, ‘‘সুবিধে না পেলে আন্দোলন হবে।’’
প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, দ্বিতীয় দফার দুয়ারে সরকার সবচেয়ে বেশি চাহিদা ছিল লক্ষ্মীর ভান্ডার প্রকল্পে অন্তর্ভুক্ত হওয়ার। জেলা প্রশাসনের হিসেবে তা মোট আবেদনের প্রায় ৫০-৫৫ শতাংশ। এই প্রকল্পে ২৫ থেকে ৬০ বছর পর্যন্ত মহিলাদের (যাঁরা সরকারি ভাতা বা বেতন পান না) প্রতি মাসে আর্থিক সাহায্যের কথা বলা হয়েছে। তফসিলি জাতি ও জনজাতি মহিলারা মাসে ১০০০ টাকা ও বাকি মহিলারা মাসে ৫০০ টাকা করে পাবেন। লক্ষ্মীর ভান্ডারের সুবিধা পেতে স্বাস্থ্য সাথীর কার্ডের পাশাপাশি তফসিলি জাতি ও জনজাতির মহিলাদের ক্ষেত্রে জাতিগত শংসাপত্র আবশ্যিক। গোল বেঁধেছে এখানেই। পড়াশোনা বা অন্য কোনও সরকারি প্রকল্পের সুবিধা পাওয়ার প্রয়োজন না হলে জাতিগত শংসাপত্র সংগ্রহের গুরুত্ব দেননি তফসিলি জাতি ও জনজাতি মহিলাদের একটা বড় অংশ।
প্রশাসন সূত্রে খবর, তফসিলি জাতি-জনজাতি শংসাপত্র পেতে অনলাইনে আবেদন করে ব্লক অফিসে প্রয়োজনীয় নথি জমা দিতে হয়। ব্লক অফিস থেকে সেই নথি খতিয়ে দেখে মহকুমাশাসকের দফতরে পাঠিয়ে দেওয়া হয়। তবে আবেদনে ভুল থাকলে মহকুমাশাসকের দফতর থেকে সেই নথি আবার ব্লক অফিসে ফেরত পাঠিয়ে দেওয়া হয়। বেশ কাঠখড় পুড়িয়ে সেটা সংগ্রহ করতে হয়। এখন প্রশ্ন, হাজার হাজার আবেদনের দ্রুত নিষ্পত্তি হবে কীভাবে। জেলাশাসক বিধান রায়ের সঙ্গে যোগাযোগ করা যায়নি। তবে প্রশানের কর্তা এবং জেলার একাধিক বিডিও বলছেন, ‘‘অনেককে ইতিমধ্যেই শংসাপত্র দেওয়া হয়েছে।’’ তবে সকলে সেই সুবিধা পাবেন এটা নিশ্চিত করতে পারেনি প্রশাসন।