প্রতীকী ছবি।
কেন্দ্রীয় ভাবে অভিন্ন মেডিক্যাল প্রবেশিকা পরীক্ষা চালুর পর থেকে তাতে সফল হতে বেগ পেতে হচ্ছে জেলার ছাত্রছাত্রীদের। বিশেষ করে যে সব পড়ুয়া যাঁরা বেসরকারি কোচিং সেন্টারে মোটা টাকার বিনিময়ে তালিম নেওয়ার সুযোগ নিতে পারেন না। শুধু ডাক্তারি নয়, ইঞ্জিনিয়ারিংয়েরও সর্বভারতীয় প্রবেশিকায় সফল হওয়া সহজ নয়। কী ভাবে এই সব পরীক্ষায় সফল হতে পারেন জেলার ছেলেমেয়েরা, সেই লক্ষ্যেই তাঁদের বিনামূল্যে তালিম দেওয়ার ব্যবস্থা করছে সমগ্র শিক্ষা অভিযান। সঙ্গে রয়েছে জেলা প্রশাসনও।
সমগ্র শিক্ষা অভিযানের জেলা প্রকল্প আধিকারিক বাপ্পা গোস্বামী জানাচ্ছেন, উচ্চমাধ্যমিকের পরে জেলা থেকে যাতে আরও বেশি করে ছেলেমেয়েরা ইঞ্জিনিয়ারিং ও ডাক্তারিতে সুযোগ পান, সেটা নিশ্চিত করতেই এমন ভাবনা। সমগ্র শিক্ষা অভিযান সূত্রে জানা গিয়েছে, প্রশিক্ষণ নিতে ইচ্ছুক জেলার তিনটি মহকুমা থেকে মোট ৪৭৪ জন পড়ুয়ার মধ্যে থেকে ১৫০ জনকে বাছাই করতে ইতিমধ্যেই টেস্ট নেওয়া হয়েছে সপ্তাহখানেক আগে। আজ, বুধবার সেই পরীক্ষার ফল প্রকাশিত হবে। তার পরে জেলার তিনটি মহকুমায় চিহ্নিত তিনটি স্কুলে বাছাই পড়ুয়াদের নিয়ে ৭ সেপ্টেম্বর থেকে শুরু হবে জয়েন্ট এন্ট্রান্স-মেন (ইঞ্জিনিয়ারিং) ও নিট (ডাক্তারি) পরীক্ষার তালিম।
সমগ্র শিক্ষা মিশনের রিসার্চ কো-অর্ডিনেটর বিকাশ রায় জানাচ্ছেন, প্রয়োজনীয় পরিকাঠামো তৈরি। জয়েন্ট অথবা নিটের জন্য ব্যক্তিগত উদ্যোগে তালিম দিতেন জেলার বিভিন্ন স্কুলের বিষয় ভিত্তিক এমন সেরা ২০ জন শিক্ষককে আগেই বাছাই করেছে সমগ্র শিক্ষা অভিযান। নিঃস্বার্থ ভাবে পড়ুয়াদের কোচিং দেবেন তাঁরাই। দেড় লক্ষ টাকার বই কেনা হয়েছে। কেনা হয়েছে আসবাবও। যদিও ডাক্তারি বা ইঞ্জিনিয়ারিং এর সর্বভারতীয় পরীক্ষায় তালিম দেওয়ার উদ্যোগ এ বারই প্রথম নিচ্ছে না সমগ্র শিক্ষা অভিযান। জানা গিয়েছে, গতবার একাদশ ও দ্বাদশ শ্রেণির শুধুমাত্র ছাত্রীদের জয়েন্ট এন্ট্রান্সের তালিম দেওয়ার ব্যবস্থা হয়েছিল জেলার তিনটি মহকুমার তিনটি স্কুলে। তবে উপযুক্ত পরিকাঠামো গড়ে তোলার পরেও ছাত্রীদের অধিকাংশই শেষ পর্যন্ত প্রশিক্ষণে টিকে থাকেননি।
সমগ্র শিক্ষা অভিযানের কর্তারা অবশ্য ছাত্রীদের পরিবার ও তাঁদের গৃহশিক্ষকদের দায়ী করছেন। কী হবে জয়েন্টের কোচিং নিয়ে, উচ্চ মাধ্যমিক ভাল করে দাও, এমন কথা বলে অধিকাংশ ছাত্রীকেই নিরুৎসাহিত করা হয়েছিল। তাই এ বার শুধু ছাত্রী নয়, ছাত্রদের কথাও ভাবা হয়েছে। সমগ্র শিক্ষা অভিযানের জেলা প্রকল্প আধিকারিক বাপ্পা গোস্বামী জানিয়েছেন, পরিকাঠামো যখন তৈরি হয়েছে, তখন চাওয়া জেলার সব চেয়ে বেশি সংখ্যক পড়ুয়া যেন সুযোগ পায়।
সমগ্র শিক্ষা মিশন সূত্রে জানা গিয়েছে, তিনটি মহকুমা থেকে ২৫টি বয়েজ, গার্লস ও কো-এড স্কুল বাছা হয়েছিল। সেই স্কুলে একাদশ শ্রেণিতে পাঠরত কোন ছাত্র বা ছাত্রীরা জয়েন্ট বা নিট পরীক্ষা দিতে ইচ্ছুক সেটা চিঠি পাঠিয়ে জানতে চায় সমগ্র শিক্ষা অভিযান। তার পরে টেস্ট নেওয়া হয়। জানা গিয়েছে, সিউড়ি মহকুমা থেকে ১২৫, বোলপুর থেকে ১৬৯ ও রামপুরহাট থেকে ১৭৯ জন ছাত্রছাত্রী পরীক্ষা দিয়েছে। তাঁদের মধ্যে থেকেই তিনটি মহকুমা থেকে ৫০ জন করে বাছাই করে তালিম দেওয়া হবে। প্রশিক্ষণ হবে বোলপুর উচ্চ বিদ্যালয়, রামপুরহাট উচ্চ বিদ্যালয় এবং সিউড়ির পি অ্যান্ড চন্দ্রগতি মুস্তাফি মেমোরিয়াল স্কুলে।
পড়ুয়া ও শিক্ষক, শিক্ষিকাদের বক্তব্য, ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ার জন্য জয়েন্ট এন্ট্রান্স (মেন) এবং ডাক্তারি পড়ার জন্য নিট— এই দুই সর্বভারতীয় প্রবেশিকা পরীক্ষা খুবই কঠিন। এতে সফল হতে পড়ুয়ারা মাসের পর মাস বিভিন্ন বেসরকারি কোচিং সেন্টারে মোটা টাকার বিনিময়ে তালিম নেন। আর্থিক দিক থেকে পিছিয়ে পড়া জেলার অধিকাংশ পড়ুয়ার কাছে তেমন সুযোগ নেই। সমগ্র শিক্ষার উদ্যোগে এমন কোচিং সেন্টার চালু হলে পরীক্ষার্থীরা উপকৃত হবেন।