স্মরণে: লাভপুরে মৌনী মিছিল। বুধবার। নিজস্ব চিত্র
প্রণব মুখোপাধ্যায়ের জীবনে খারাপ সময়ে তাঁর সঙ্গে আমার ঘনিষ্ঠতা। আশির দশকের মাঝামাঝি সময় সেটা। কংগ্রেস থেকে তখন বহিষ্কৃত হয়েছেন তিনি। সমাজবাদী রাষ্ট্রীয় কংগ্রেস নামে নতুন দলও গড়েছেন। আমরা ছিলাম কংগ্রেস কর্মী। সেই সময় মনে হয়েছিল প্রণবদার প্রতি অবিচার হয়েছে। আমরাও কংগ্রেস ছাড়লাম, যোগ দিলাম প্রণববাবুর দলে। জেলা থেকে শিয়ালদহের কানাই ধর লেনের নতুন দফতরে চিঠিপত্র পৌঁছে দেওয়ার দায়িত্ব ছিল আমার উপর। রাজ্য দফতর থেকে নির্দেশিকাও জেলায় নিয়ে যেতাম আমি। এই কাজ করতে করতেই প্রণব মুখোপাধ্যায়ের নজরে পড়ি। ক্রমে ঘনিষ্ঠতা বাড়ে।
চুরানব্বই সালে সাঁইথিয়া পুরসভার নির্বাচন হল। বামফ্রন্ট আমলে সেই প্রথম ১১-০ তে বিরোধীরা জয়ী হল। চেয়ারম্যান হলাম। আমাদের সাফল্যে খুব খুশি হলেন প্রণববাবু। সাঁইথিয়া পুরসভার উন্নয়নের জন্য তাঁর অবদান ভোলার নয়। রাজ্যসভার সাংসদদের তহবিল থেকে এক কোটি টাকারও বেশি অর্থ তিনি দিয়েছেন সাঁইথিয়া পুরসভাকে। কৃতজ্ঞতা প্রকাশের ভাষা নেই। তাঁর সঙ্গে অনেক স্মৃতি জড়িয়ে রয়েছে। জেলায় বহু সময় কাটিয়েছি একসঙ্গে। ২০০৬ সালের ২৯ মার্চ সাঁইথিয়া রেলমাঠে আমরা তাঁকে সংবর্ধনা দিই। সোনার চাবি তুলে দিয়েছিলাম আমরা। সাঁইথিয়ার নাগরিক সম্মান পেয়ে অবিভূত হয়েছিলেন তিনি।
পুজোর সময় যখন মিরাটির বাড়িতে আসতেন, তখন সম্পূর্ণ অন্য মানুষ। অতিথি বৎসল, সবার সঙ্গে কুশল বিনিময় করতেন হাসিমুখে। ভিড়ে ঠাসা বাড়িতে সবাই প্রসাদ নিয়েছেন কি না সে সব খুঁটিনাটির দিকেও নজর থাকত তাঁর। খুব সাধারণ জীবনচর্চা প্রণববাবুর। বিউলির ডাল, আলুপোস্ত, মাছ ভাজা খেতে ভালবাসতেন। প্রতিদিন সকালে চণ্ডীপাঠ করতেনই। বিদেশে গেলেও অন্যথা হত না। পোশাকে আশাকে বাহুল্য না থাকলেও সবসময় পরিস্কার পরিছন্ন পোশাক পরতে ভালবাসতেন। আরাধ্য দেবদেবী ছাড়া বড়দি অন্নপূর্ণাদেবীকে খুবই শ্রদ্ধা করতেন। প্রশাসক হিসেবে কখনও অনিয়মকে প্রশ্রয় দিতেন না। একেবারে কপিবুক অ্যাডমিনিস্ট্রেটর ছিলেন। ফুটবল খেলা ও রবীন্দ্রসঙ্গীত প্রিয় হলেও আবেগের আতিশয্য ছিল না। ভাললাগা বা খারাপ লাগাকে আড়াল করতে পারতেন দুঁদে এই প্রশাসক। প্রণববাবুর রাষ্ট্রপতি হিসাবে নির্বাচন গোটা বাঙালিজাতির পক্ষে বিরাট সম্মানের।
(প্রাক্তন চেয়ারম্যান, সাঁইথিয়া পুরসভা)