সিউড়ি বাসস্ট্যান্ডে বিজেপি কর্মীদের অবস্থান-বিক্ষোভ। বুধবার। নিজস্ব চিত্র।
দীর্ঘদিন পরে বুধবার সিউড়িতে বিজেপির কর্মসূচিতে শামিল হতে দেখা গেল বিজেপির প্রাক্তন জেলা সাধারণ সম্পাদক কালোসোনা মণ্ডলকে। অন্য দিকে, এই মিছিলে পিছনের সারিতেই রইলেন বিধায়ক অনুপ সাহা। এ দিন বীরভূম সাংগঠনিক জেলার সভাপতি ধ্রুব সাহার সঙ্গে তাঁর দূরত্ব ছিল চোখে পড়ার মতো। এমনকি, কর্মসূচিতে বক্তব্য রাখতেও রাজি হননি অনুপ। ফলে, জেলা বিজেপির অন্দরে গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের ছায়া দেখতে পাচ্ছেন অনেকেই।
রাজ্যের সর্বত্র তৃণমূলের হাতে দলীয় কর্মীরা আক্রান্ত হচ্ছেন, বিশেষত তফসিলি কর্মীদের উপরে বেশি আক্রমণ নেমে আসছে— এমন অভিযোগকে সামনে রেখে বুধবার সিউড়িতে মিছিলের আয়োজন করে বিজেপির তফসিলি মোর্চা। সিউড়ি শহরের বিজেপির দলীয় কার্যালয় থেকে শুরু হয়ে এই মিছিল প্রশাসন ভবন মোড় হয়ে সিউড়ি বাস স্ট্যান্ডে আসে। সেখানে প্রায় ৪৫ মিনিট রাস্তা অবরোধ করে পথসভা করে বিজেপি। এ দিনের মিছিলে বিজেপির বীরভূম সাংগঠনিক জেলার প্রায় সব নেতাই উপস্থিত ছিলেন।
তবে এ দিন মিছিলের শুরু থেকে অবরোধের শেষ পর্যন্ত ধ্রুবের থেকে দূরত্ব বজায় রাখেন অনুপ সাহা। মিছিলের একদম শেষের দিকে হাঁটার পাশাপাশি বাস স্ট্যান্ডের অবরোধেও পিছনের সারিতে ছিলেন অনুপ। এমনকি, তাঁকে বক্তৃতার ডাক হলেও তিনি ডাক কার্যত এড়িয়ে যান। এ বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে অনুপ বলেন, “আমাদের জেলা সভাপতি, তফসিলি মোর্চার জেলা সভাপতি-সহ অন্য নেতারা সামনে আছেন। আমরা তফসিলি জাতির প্রতিনিধি হিসেবে এই বিক্ষোভে শামিল হয়েছি। তবে আমাদের লড়াই তৃণমূলের বিরুদ্ধে। যেখানে যে ভাবে প্রয়োজন হবে, আমরা একসঙ্গে লড়াই করব।”
অনুপ সাহার পেছনে থাকা নিয়ে প্রশ্ন করা হলে ধ্রুব বলেন, “আমাদের দলে বিধায়ক, কর্মী বলে কোনও বিষয় নেই। বিধায়ক আমাদের সঙ্গেই আছেন, তিনি বক্তব্যও রাখবেন।” তবে ধ্রুব বললেও শেষ পর্যন্ত বক্তব্য রাখেননি অনুপ। দলের ভিতর কানাঘুষো শোনা যাচ্ছে, ইদানিং একাধিক বিষয়ে জেলা সভাপতির সঙ্গে মতপার্থক্য ঘটেছে বিধায়কের। জেলার যুব মোর্চা নিয়েও কিছু অসন্তোষ রয়েছে। এ দিনের আচরণ তারই বহিঃপ্রকাশ বলে মনে করা হচ্ছে।
আবার কালোসোনা মণ্ডলকে অনেক দিন পরে দলীয় কর্মসূচিতে দেখে চর্চা শুরু হয়েছে। এক সময়ে চাঁচাছোলা বক্তব্যের জন্য যেমন তিনি বিতর্কের মুখে পড়েছিলেন, তেমন দলীয় কর্মীদের মধ্যে জনপ্রিয়তাও অর্জন করেছিলেন। তবে দলবিরোধী কাজের জন্য ২০২০ সালে তাঁকে বহিষ্কার করা হয়। বিধানসভা নির্বাচনের আগে সেই বহিষ্কার তুলে নেওয়া হলেও সাধারণ কর্মী হিসেবেই দলে ছিলেন কালোসোনা। এ দিন তিনি বলেন, “আগুন যখন লাগে, তখন সবাইকেই এগিয়ে আসতে হয়। কেউ ডাকল কি না, তাতে কিছু যায় আসে না। ওঁরা সামনে কাজ করছেন, আমরা পিছনে ছিলাম। সমস্যায় পড়লেই এগিয়ে আসব।” ধ্রুব সাহা বলেন, “বাড়িতে থাকলে অনেক সময় ক্ষোভ, দুঃখ, অভিমান হয়। আবার অভিমান অনেক সময় ভাঙেও।”