Forest Department

নির্বিঘ্নে মাধ্যমিকের প্রথম দিন, ‘ফুল মার্কস’ পেল বন দফতরও, এখনও পরীক্ষা অনেক বাকি

বাংলায় প্রবাদ আছে, যেখানে বাঘের ভয়, সেখানে সন্ধ্যা হয়। বাঁকুড়ায় বাঘের ভয় না থাকলেও জেলার পাঁচটি ব্লকের জঙ্গল লাগোয়া এলাকাগুলিতে রয়েছে হাতির ভয়।

Advertisement

আনন্দবাজার অনলাইন সংবাদদাতা

বাঁকুড়া শেষ আপডেট: ০২ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ ২০:২২
Share:

—নিজস্ব চিত্র।

মাধ্যমিকের প্রথম পরীক্ষা নির্বিঘ্নে কাটায় ‘ফুল মার্কস’ পেল বন দফতর। কিন্তু বাকি দিনগুলিতে পরীক্ষার্থীরা যাতে নিরাপদে ও নির্বিঘ্নে পরীক্ষাকেন্দ্রে পৌঁছতে পারে, সেটাই এখন বড় চ্যালেঞ্জ বন দফতরের কাছে।

Advertisement

বাংলায় প্রবাদ আছে, যেখানে বাঘের ভয়, সেখানে সন্ধ্যা হয়। বাঁকুড়ায় বাঘের ভয় না থাকলেও জেলার পাঁচটি ব্লকের জঙ্গল লাগোয়া এলাকাগুলিতে রয়েছে হাতির ভয়। সব ক’টি জঙ্গল মিলিয়ে বাঁকুড়ায় এখন রয়েছে মোট ৫৮টি বুনো হাতি। দোসর ঘন কুয়াশা। কুয়াশায় দৃশ্যমানতা কম থাকায় জঙ্গলপথে যাতায়াতের ক্ষেত্রে হাতির সামনে পড়ে যাওয়ার আশঙ্কা থাকেই। গত বছর জলপাইগুড়িতে হাতির হানায় এক মাধ্যমিক পরীক্ষার্থীর মর্মান্তিক মৃত্যুর পর এ বার পরীক্ষার্থীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে বাঁকুড়ায় একগুচ্ছ পদক্ষেপ করেছে বন দফতর। বন দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, পরীক্ষা শুরুর আগের দিন থেকে প্রতিটি জঙ্গল তন্ন তন্ন করে খুঁজে হাতির অবস্থান সংক্রান্ত তথ্যভান্ডার তৈরি করা হয়েছিল। সেই তথ্য দফতরের নিজস্ব মেসেজিং সিস্টেমের মাধ্যমে পাঠিয়ে দেওয়া হয় জঙ্গল লাগোয়া প্রতিটি গ্রামের জনপ্রতিনিধি, বনকর্মী, এমনকি পুলিশ ও প্রশাসনের আধিকারিকদের কাছে। হাতির অবস্থান সংক্রান্ত তথ্য বিশ্লেষণ করে বন দফতর তুলনামূলক নিরাপদ রুটও চিহ্নিত করে। তা ছাড়া এই রুটগুলিতে রাস্তার দু’দিকে মোতায়েন করা হয়েছে হুলা পার্টি। হঠাৎ করে জঙ্গলপথে হাতি এসে পড়লে সেগুলিকে তাড়ানোর জন্য রাখা ছিল বন দফতরের বিশেষ গাড়ি ‘ঐরাবত’।

বন দফতর সূত্রে খবর, পরীক্ষার্থীদের পরীক্ষাকেন্দ্রে যাতায়াতের জন্য অপেক্ষাকৃত এই নিরাপদ রুটগুলি ব্যবহারের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়াও শুধুমাত্র বাঁকুড়া উত্তর বন বিভাগেই ৬০০ জন পরীক্ষার্থীকে চিহ্নিত করে তাদের বাড়ি থেকে গাড়িতে করে পরীক্ষাকেন্দ্রে পৌঁছনো এবং একই ভাবে পরীক্ষা শেষে বাড়িতে ফিরিয়ে দেওয়ার ব্যবস্থা করা হয়েছে। সব মিলিয়ে মাধ্যমিক পরীক্ষায় কোনও রকম ফাঁকফোকর রাখা হয়নি। তবে পরীক্ষার বাকি দিনগুলি নিয়ে চিন্তা কাটছে না। রাজ্যের মুখ্য বনপাল (কেন্দ্রীয় চক্র) এস কুলানডাইভেল বলেন, ‘‘পরীক্ষার্থীদের নিরাপত্তা আমাদের কাছে অগ্রাধিকার। আমরা সব রকম ভাবে চেষ্টা করেছি, তাদের নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করার। নিশ্চিত ভাবেই এটা আমাদের কাছে বড় পরীক্ষা।’’ বাঁকুড়া উত্তর বনবিভাগের ডিএফও উমর ইমাম বলেন, ‘‘প্রথম দিন আমাদের উদ্যোগ সফল হয়েছে। কোথাও কোনও দুর্ঘটনা ঘটেনি। আমরা চাই জীবনের প্রথম বড় পরীক্ষায় পরীক্ষার্থীরা নিশ্চিন্তে পরীক্ষা ও পড়াশোনার কথা চিন্তা করুক। তাদের নিরাপত্তার ভার আমাদের উপর থাক।’’

Advertisement

বন দফতরের এমন নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তার বেষ্টনীতে নিরাপদে পরীক্ষা দিতে পেরে খুশি জঙ্গল লাগোয়া এলাকার পড়ুয়া ও অভিভাবকেরা। বড়জোড়া ব্লকের ছান্দার হাই স্কুলে পরীক্ষা দিতে আসা প্রিয়াঙ্কা কুণ্ডু ও পূজা রায় বলেন, ‘‘আমাদের গ্রামগুলি একেবারে জঙ্গলের মধ্যে। ওই জঙ্গলে প্রায় সারা বছরই হাতি আছে। পরীক্ষার সময় সাত সকালে ঘন কুয়াশার মাঝে কী ভাবে পরীক্ষাকেন্দ্রে আসব, তা নিয়ে চিন্তা ছিলই। কিন্তু বন দফতর যে ভাবে আমাদের নিরাপত্তার ঘেরাটোপে পরীক্ষাকেন্দ্রে নিয়ে এসেছে, তাতে আমরা নিশ্চিন্ত পরীক্ষার বাকি দিনগুলিও নিরাপদে পরীক্ষা দিতে পারব।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement