জয়দেবে প্রয়াত বাউল সাধন দাস বৈরাগ্যের প্রতিষ্ঠিত আখড়ায়। ছবি: বিশ্বজিৎ রায়চৌধুরী।
বাউল গানে জগৎ জোড়া খ্যাতি সাধন দাস বৈরাগ্যের। তিনি নেই। কিন্তু গুরু-শিষ্য পরম্পরায় জয়দেবে তাঁর আখড়া ‘মনের মানুষ’ জুড়ে রয়েছে তাঁর গান আর ছবি। মকর সংক্রান্তিতে জয়দেব-কেঁদুলির মেলায় সেই আখড়ায় দেশ-বিদেশের বাউল ভিড় করেছিলেন। গানে-গানে ভরিয়ে তুললেন আখড়াকে।
মানব বেদি থেকে শুরু করে আখড়া জুড়ে শিল্পীর বিভিন্ন ছবি ও কাটআউট দিয়ে সাজিয়ে তোলা হয়েছিল। তাঁর প্রতিকৃতিতে পুষ্পার্ঘ্য নিবেদন করে শ্রদ্ধা জানান জাপান থেকে আসা একদল শিষ্য। তাঁকে স্মরণ করে খুব সকালে ধুনি জ্বালিয়ে শুরু হয় বাউল গানের আসর। তাঁর গানের মধ্য দিয়ে তাঁকে স্মরণ করেন বাউল শিল্পীরা। চলে দিনভর প্রসাদ বিতরণ। সাধন দাস বৈরাগ্যের জাপানি শিষ্যা সরস্বতী মা (এই নাম দিয়েছিলেন শিল্পী) বলেন, “গুরুজি নেই, তা যেন মনে হচ্ছে না, তিনি আমাদের অনুভূতিতে আছেন। তাঁর শেখানো পথেই আমরা বাউল চর্চাকে এগিয়ে নিয়ে চলেছি।”
বাউল গানের জন্যই খ্যাতি পান সাধন দাস বৈরাগ্য। দীর্ঘদিন ধরে দেহতত্ত্ব ও বাউল গানের চর্চা করেছেন। ছেলেবেলা থেকে লোকগানের প্রতি তাঁর আকর্ষণ। শুধু বাংলায় নয়, সাধন দাস বৈরাগ্যের জনপ্রিয়তা দেশের সীমা ছাড়িয়ে পৌঁছে গিয়েছিল বিশ্বের দরবারে। জাপানে গিয়ে তিনি সবচেয়ে বেশি খ্যাতি পান। সেই সূত্রে জাপানে অনেকে তাঁর শিষ্যত্ব গ্রহণ করেন। গানের পাশাপাশি, বাউল ও দেহতত্ত্বের উপরে বেশ কয়েকটি বইও লিখেছেন। দেশ, বিদেশে বিভিন্ন জায়গায় থেকে বহু সম্মাননাও পেয়েছেন। গুরু-শিষ্য পরম্পরা মেনে নিজের হাতে অনেক শিষ্য তৈরি করার পাশাপাশি ২০০২ সালে তিনি জয়দেবে গড়ে তুলেছিলেন এই ‘মনের মানুষ’ আখড়া।
প্রতি বছর জয়দেবের মেলায় তাঁর প্রতিষ্ঠিত এই আখড়ায় বাউলের দেহতত্ত্ব ও গান শুনতে ভিড় জমান দেশ-বিদেশের বহু মানুষ। গত বছর জুলাই মাসে তাঁর প্রয়াণ হয়। আখড়ার ভবিষ্যত নিয়েও চিন্তায় পড়েন শিষ্যরা। শেষ পর্যন্ত ঠিক হয় তাঁর ছবি দিয়ে সাজিয়ে, তাঁর গানেই এ বার স্মরণ করা হবে। দীর্ঘ দিনের শিষ্য বাপি দাস বাউল বলেন, “গুরুজি বলতেন, আমি চলে গেলেও তোমরা থেমে থেকো না, ওঁর কথামতোই আমরা এগিয়ে চলেছি।”