Cap: দগ্ধ: দুপুরের আগুনে সব শেষ। ভস্মীভূত পরের পর অস্থায়ী দোকান। ছবি: তাপস বন্দ্যোপাধ্যায়
অস্থায়ী কাপড় বাজারের বহু দোকান ভস্মীভূত হল সিউড়িতে। মঙ্গলবার বেলা ২টো নাগাদ ঘটনাটি ঘটেছে, জেলা সংশোধনাগারের পিছনের দিকে সীমানা প্রাচীর লাগোয়া এলাকায়। অগ্নিকাণ্ডের ঠিক কারণ জানা না গেলেও স্থানীয় ব্যবসায়ীদের প্রাথমিক অনুমান, কাছের একটি ট্রান্সফর্মারে শর্ট সার্কিটের জন্য আগুনে ফুলকি উড়ে আগুন লাগে। পরে তা দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে। দাউদাউ করে জ্বলতে থাকে দোকান। মুহূর্তে একটি দোকান থেকে অন্য দোকানে ছড়িয়ে পড়ে আগুন। ধোঁয়ায় ঢেকে যায় গোটা এলাকা। স্থানীয়দের দাবি, বেশ কয়েকটি দমকলের ইঞ্জিন ঘণ্টাখানেকের চেষ্টায় আগুন নেভানোর আগে রাস্তার দু'দিকে কমপক্ষে ৫০টি দোকান ভস্মীভূত হয়েছে। কাছে থাকা সরকারি আবাসনও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
ব্যবসায়ীদের আক্ষেপ, একে লক-ডাউনের জেরে ব্যবসায় প্রভূত ক্ষতি হয়েছে। তার উপরে এ ভাবে আগুন লেগে সব শেষ করে দিল। ওই বাজার লাগায়ো ওয়ার্ডের কাউন্সিলর কাজী ফরজুদ্দিন বলছেন, "ভস্মীভূত দোকানের সংখ্যা ১০০ হতে পারে।"
এ দিকে, সিউড়ি আশপাশে আরও তিনটি অগ্নিকাণ্ডের ঘটনার জেরে দমকলের ইঞ্জিন পৌঁছতে দেরি হয়। এতে স্থানীয়দের বিক্ষোভের মুখে পড়তে হয় দমকল বাহিনীকে। ব্যবসায়ীদের অভিযোগ, "দমকল আরও কিছুটা সময় আগে এলে ক্ষয়ক্ষতি কমানো যেত।" ঘটনার খবর পেয়ে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর) সুবিমল পালের নেতৃত্বে বিশাল পুলিশ বাহিনী পৌঁছয়।
দমকল ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, ওই এলাকায় প্রচুর অস্থায়ী দোকান রয়েছে। টুপি বেল্ট, রোদচশমা, ঘড়ি, চপ্পল, মুড়ি, বই সহ নানা দোকান থাকলেও কাপড়ের বাজার বলেই ওই অস্থায়ী মার্কেটকে চেনেন সিউড়ি শহর ও কেনাকেটার জন্য আাসা মানুষজন। কাঠের গুমটি ও শাটার দেওয়া দোকান আছে। তবে অধিকাংশ দোকানই মূলত বাঁশ, ত্রিপল টিনের চাউনি দেওয়া। অস্থায়ী চালা, চেয়ার, টুল সহ নানা জিনিস পুড়লেও জামা কাপড়ের স্টক কতটা ছিল সেটা অজানা। লক-ডাউনের জন্য পুরো বাজার বন্ধ থাকায় অনেক ব্যবসায়ী জিনিসপত্র দোকানে রাখেননি। তবে করোনা এ ভাবে হানা দেওয়ার আগে চৈত্রসেলের জন্য প্রস্তুতি নিয়েছিলেন বেশ কিছু ব্যবসায়ী। তাঁদের অনেকই দোকানে থেকে জিনিস সরানোর সময় পাননি। মঙ্গলবার দুপুরের আগুনে সে সব পুড়ে ছাই হয়ে গিয়েছে বলে জানিয়েছেন শেখ মীরাজউদ্দিন, শেখ সানোয়ার, শেখ করিমউদ্দিনের মতো ব্যবসায়ীরা। তবে এ বারই প্রথম নয়। ২০১৬ সালের নভেম্বরের রাতে ভস্মীভূত হয়েছিল ৮টি দোকান। স্থানীয় ব্যবসায়ী মহম্মদ ইরফান, শেখ সিরাজউদ্দিনদের কথায়, "সেবারও দোকানের পিছনের দিকে ওই ট্রান্সফর্মারই দায়ী ছিল। এ বারও তাই।"
স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, অবৈধ ভাবে শতাধিক অস্থায়ী দোকান বসে যাওয়ায় বাসস্ট্যান্ড থেকে জেলা মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিকের কার্যালয় পর্যন্ত যাওয়ার গুরুত্বপূর্ণ রাস্তাটাই কার্যত চুরি হয়ে গিয়েছে। অথচ, ওই রাস্তার এক দিকে জেলা সংশোধনাগারের সীমানা প্রাচীর, মীনভবন, অন্য দিকে সরকারি আবাসন, একটু এগিয়ে এক দিকে মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিকের কার্যালয় উল্টো দিকে, জেলা পুলিশ সুপারের কার্যালয়। মূল রাস্তা এড়িয়ে জেলা প্রশাসন ভবনের দিকের আসার বিকল্প রাস্তাও বটে।
শহরবাসীর একাংশ জানাচ্ছেন, এলাকার অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ রাস্তায় উপর যে ভাবে একের পর এক দোকান সামনে ছাউনি টানিয়ে বসে পড়েছে, তাতে বড় যানবাহন দূরের কথা ছোট চার চাকা বা একটি টোটো কিংবা রিকশা ঢুকলেই সাধারণ মানুষের আর হাঁটার উপায় থাকে না। তার পরেও এই রাস্তায় দখলদারি আটকানো বা উচ্ছেদের কোনও চেষ্টা হয়নি প্রশাসন বা পুরসভার পক্ষ থেকে। বরং নিত্যদিন কলেবরে বেড়েছে ওই বাজার। এ দিন, দমকল বাহিনীকে আসতেও বেগ পেতে হয়। আইএনটিইউসির জেলা সহ সভাপতি রাজীবুল ইসলাম বলছেন, "সত্যিই বিপজ্জনক হয়ে রয়েছে বাজারটি। ভাবতেই হবে।" সিউড়ির পুরপ্রধান উজ্জ্বল চট্টোপাধ্যায় বলছেন, "আমরা বিষয়টি নিয়ে ভাবব।"