জয়চণ্ডী পাহাড়ে। নিজস্ব চিত্র।
পর্যটন উৎসবের মধ্যেই আগুন লাগল পুরুলিয়ার জয়চণ্ডী পাহাড়ে। বুধবার বিকেলে উৎসবস্থল থেকে কিছুটা দূরে, পাহাড়ের একাংশে হঠাৎ আগুন লাগে। খবর পেয়ে আধ ঘণ্টার মধ্যে রঘুনাথপুর থেকে একটি ইঞ্জিন নিয়ে পৌঁছে যান দমকল কর্মীরা। প্রথমেই সমস্যা দেখা দেয়, ঝোপঝাড়ে ভরা পাথুরে রাস্তা দিয়ে গাড়ি নিয়ে যাওয়ায়। যে জায়গায় আগুন লেগেছিল, সেটি সমতল থেকে প্রায় দেড়শো মিটার উঁচুতে। এতটাই দুর্গম, হোস পাইপ নিয়েও যাওয়া যায়নি। তখন দমকল কর্মীরা উঠে গাছের ডাল ভেঙে, ‘ব্যাটিং’ পদ্ধতিতে চাপড়ে আগুন নেভান। আগুন নিয়ন্ত্রণে আসতে আসতে কেটে যায় প্রায় আড়াই ঘণ্টা।
এ দিকে পাহাড়ের নীচেই জয়চণ্ডী পর্যটন উৎসব চলছে। একশো মিটার দূরে আগুন দেখে চাঞ্চল্য ছড়ায়। উৎসব প্রাঙ্গণে তখন ছিলেন স্থানীয় আড়রা পঞ্চায়েতের প্রাক্তন প্রধান মধুসূদন দাস। তিনি বলেন, ‘‘হঠাৎ দেখি, কিছুটা দূরেই পাহাড়ের উপরে দাউদাউ করে আগুন জ্বলছে। নীচের দিকে নেমে এলে সর্বনাশ হত। সবাই ভয় পেয়েছিলাম। তবে দমকল দ্রুত চলে আসায় স্বস্তি পাই।’’ পাহাড়ের যে প্রান্তে আগুন লেগেছিল তার অন্য প্রান্তে জয়চণ্ডী পাহাড়ের পর্যটনকেন্দ্রের কটেজ। সেখানকার কর্মকর্তা মলয় সরখেল জানাচ্ছেন, আগুন দ্রুত ছড়িয়ে পড়তে দেখে আতঙ্কিত হয়ে পড়েছিলেন তাঁরাও। মলয়বাবু বলেন, ‘‘পর্যটনের ভরা মরসুম। অনেক পর্যটকই আছেন অতিথি নিবাসে। অন্তত কুড়ি-পঁচিশ ফুট উঁচু পর্যন্ত আগুনের ফুলকি ছড়িয়ে পড়ছিল। নেভানোর সময়ে ছাই উড়ে এসে পড়েছে পথসাথীর ছাদে।”
এই প্রথম নয়, গত বারও এমন সময়ে পর্যটন উৎসব চলাকালীন আগুন লেগেছিল জয়চণ্ডী পাহাড়ে। তবে এ বার আগুন লাগে উৎসব প্রাঙ্গণের কাছাকাছি জায়গায়। এলাকার বাসিন্দা নন্দদুলাল চক্রবর্তী বলেন, ‘‘বার বার একই ঘটনা ঘটছে। কেউ যদি ইচ্ছাকৃত ভাবে আগুন লাগিয়ে থাকে, সেটা পুলিশ আর প্রশাসনের দেখা উচিত।” তবে কী ভাবে আগুন লেগেছে, তা স্পষ্ট নয় বলে দাবি করেছে দমকল। পর্যটন উৎসব কমিটির সম্পাদক মৃত্যুঞ্জয় চৌধুরী বলেন, ‘‘আগুনের জন্য উৎসবে কোনও সমস্যা হয়নি। তবে আগুন যাতে না লাগে, সেই বিষয়ে সবার আরও সাবধান ও সর্তক থাকা প্রয়োজন।”
জয়চণ্ডী পাহাড় বন দফতরের এলাকার মধ্যে পড়ে না। কিছু এলাকা দু’টি পঞ্চায়েতের। কিছু রঘুনাথপুর পুরসভার। তা ছাড়া, সরকারি খাস জমিও আছে। পাহাড়ে রয়েছে ময়াল, খরগোস ও অন্য বন্যপ্রাণী। আগুনে সেগুলির ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে কি না, তা দেখতে বৃহস্পতিবার এলাকা পরিদর্শন করেন বন দফতরের রঘুনাথপুরের রেঞ্জ আধিকারিক বিবেক ওঝা। বন দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, বন্যপ্রাণীর মৃত্যু চোখে পড়েনি। কিছু গাছ ও ঘাস পুরোপুরি পুড়েছে। আগুন লাগার ব্যাপারে কোনও মন্তব্য করতে চাননি রঘুনাথপুর ১ ব্লক প্রশাসনের কর্তারা।