—প্রতীকী চিত্র।
পাঁচটি কুকুর ছানাকে থেঁতলে হত্যা করার অভিযোগ উঠেছে। শনিবার দুপুরে বোলপুর শ্রীনিকেতন কৃষক বাজার এলাকার ঘটনা। এক ব্যবসায়ীর অভিযোগের ভিত্তিতে দু’জনকে গ্রেফতার করে পুলিশ। পুলিশ জানায়, ধৃতদের নাম মোহন বাগদি ও মনোজ ভান্ডারি। দু’জনেরই বাড়ি সুরুল এলাকায়। রবিবার বোলপুর আদালতে তোলা হলে বিচারক তাঁদের জামিনে মুক্তি দেন। ঘটনার নিন্দায় সরব হয়েছেন পশুপ্রেমী থেকে শুরু করে শহরের সাধারণ বাসিন্দারা।
স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, বোলপুর শ্রীনিকেতন কৃষক বাজারে দু’ থেকে আড়াই মাস আগে একটি পথ কুকুর পাঁচটি ছানা প্রসব করে। তারা প্রত্যেকেই সুস্থ ছিল। শনিবার দুপুরে স্থানীয় ব্যবসায়ীরা হঠাৎই দেখেন, বাজারের একটি দোকানের পিছনে ওই পাঁচটি ছানা রক্তাক্ত অবস্থায় পড়ে আছে। স্থানীয় ব্যবসায়ীদের অভিযোগ, ছানাগুলিকে থেঁতলে খুন করা হয়েছে। শনিবার রাতে শান্তিনিকেতন থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন স্থানীয় ব্যবসায়ী তথা তৃণমূল নেতা বাবু দাস। এই অভিযোগের প্রেক্ষিতে রাতেই কৃষক বাজার এলাকা থেকে মোহন ও মনোজকে প্রথমে আটক করে পুলিশ। পরে তাঁদের গ্রেফতার করা হয়।
পুলিশ জানিয়েছে, মৃত কুকুর ছানাগুলি মনোজের চায়ের দোকানের পিছন থেকে পাওয়া যায়। মোহন বাগদি কৃষক বাজারের অন্য একটি দোকানে কাজ করেন। ধৃতদের বিরুদ্ধে ভারতীয় দণ্ডবিধির ৪২৮ ধরায় মামলা রুজু করা হয়। অভিযুক্তদের এ দিন বোলপুর আদালতে তোলা হয়। সরকারি আইনজীবী উদয় গড়াই বলেন, ‘‘অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে জামিনযোগ্য ধারা থাকায় এ দিন বিচারক তাঁদের জামিনে মুক্তি দেন।” মনোজ ও মোহনের সঙ্গে চেষ্টা করেও যোগাযোগ করা যায়নি।
এই ঘটনা অনেকের মনে উস্কে দিয়েছে বছরখানেক আগে পাড়ুই থানা এলাকার স্মৃতি। সেখানে একটি পথ কুকুরকে দড়ি দিয়ে বেঁধে বাঁশ দিয়ে পিটিয়ে মেরে ফেলা হয়। আবার সিউড়ি চাঁদমারি ময়দান চত্বরে কয়েক বছর চারটি কুকুর ছানাকে বিষ খাইয়ে মেরে ফেলা হয়। চলতি বছরের পয়লা এপ্রিল দুবরাজপুর পুর এলাকায় ১২ নম্বর ওয়ার্ডে এক সঙ্গে বেশ কয়েকটি কুকুর (ছানা-সহ) অসুস্থ অবস্থায় পাওয়া যায়। এলাকা থেকে খবর পেয়ে দুবরাজপুরের প্রাণীসম্পদ বিকাশ দফতরের পশু চিকিৎসক দেবব্রত খামরুই কুকুরগুলির চিকিৎসা শুরু করেন। তাঁর চিকিৎসায় একটি কুকুর ছাড়া বাকিগুলির প্রাণ বাঁচে। অভিযোগ ছিল, কুকুরগুলিকে বিষ দেওয়া হয়েছিল। চর্চায় উঠে আসে কলকাতার এনআরএস মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের কথাও। যেখানে ১৬টি কুকুরছানাকে নৃশংসভাবে হত্যা করা হয়েছিল।
কেন এ ভাবে পাঁচটি কুকুর ছানাকে মারা হল? মনোরোগের চিকিৎসক জিষ্ণু ভট্টাচার্য বলেন, ‘‘পশুপাখির প্রতি এই নিষ্ঠুরতাকে মনোবিজ্ঞানের ভাষায় ‘অ্যান্টিসোশ্যাল পার্সোনালিটি ডিসঅর্ডার’ বলে। এটা বড়দের ক্ষেত্রে হয়। আর ছোটবেলায় যদি এই ধরনের আচরণ দেখা যায় তা হলে তাকে ‘কন্ডাক্ট ডিসঅর্ডার’ বলে।’’
অভিযোগকারী বাবু বলেন, “ওদের আমরা নিয়মিত খাবার দিতাম। ওরা তো কাউকে বিরক্ত করে না। তা সত্ত্বেও নির্মম ভাবে ওদের মেরে দিল। আমি চাই এই ঘটনায় অবিলম্বে দোষীরা উপযুক্ত শাস্তি পাক। আমি শুধু মা কুকুরটির কথা ভাবছি। ওকে আমরা আদর করে কালু বলে ডাকতাম। বাচ্চা হারিয়ে চুপ করে গিয়েছে।” পশুপ্রেমী উর্মিলা গঙ্গোপাধ্যায় বলেন, “অত্যন্ত নিন্দনীয় ঘটনা। বলার কোনও ভাষা নেই। দোষীরা শাস্তি পাক এটাই চাই।”