—নিজস্ব চিত্র।
বাবাকে প্রণাম করে মাধ্যমিক পরীক্ষায় বসার ইচ্ছা ছিল খাতড়া শিশু নিকেতনের ছাত্র অরিজিৎ পাইনের। ইচ্ছাপূরণ হয়নি। বাবা ফিরেছেন কফিনবন্দি হয়ে। সোমবার খাতড়ার কেচন্দা হাইস্কুলে অরিজিৎ যখন পরীক্ষা দিচ্ছিল, তখন কিছু দূরে হাড়মাসড়ার কাছে শিলাবতী নদীর শ্মশানে শেষকৃত্য সম্পন্ন হচ্ছিল তার বাবা সিআরপি জওয়ান কল্যাণ পাইনের।
ছাত্রজীবনের প্রথম বড় পরীক্ষায় বসতে চলেছে ছেলে। তাই সুদূর শ্রীনগরের টেঙমার্ক সিআরপি ক্যাম্পে কর্মরত কল্যাণ (৪৯) ছুটি নিয়ে বাড়ি ফিরছিলেন। তাঁর পরিবার জানায়, শনিবার বেলা ১২ নাগাদ দিল্লি বিমানবন্দরে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যু হয় কল্যাণের। সোমবার বেলায় খাতড়া থানার সিন্দুরপেটি গ্রামের পাইনপাড়ায় কল্যাণের বাড়িতে আসে তাঁর কফিনবন্দি দেহ। অবশ্য, অরিজিৎকে তার আগেই পরীক্ষাকেন্দ্রে নিয়ে চলে গিয়েছিলেন তাঁর মামা প্রমিত সিংহমহাপাত্র।
প্রমিত বলেন, ‘‘দুর্গাপুজোর পরে বাড়ি থেকে কর্মস্থল শ্রীনগর টেঙমার্ক সিআরপি ক্যাম্পে ফিরে গিয়েছিলেন জামাইবাবু। ছেলে মাধ্যমিক পরীক্ষায় বসছে বলে কয়েক দিনের ছুটি নিয়ে বাড়ি ফিরছিলেন। শনিবার বেলা ১২ নাগাদ দিল্লি বিমানবন্দরে হৃদরোগে মৃত্যু হয় জামাইবাবুর। বেলা সাড়ে ১২টা নাগাদ ফোনে তাঁর মৃত্যুর খবর জানানো হয় আমাদের।
এ দিন বেলা সাড়ে ১১টা নাগাদ সিআরপি জওয়ানেরা জামাইবাবুর দেহ সিন্দুরপেটি গ্রামের বাড়িতে নিয়ে আসেন।’’
এ দিন কথা বলার মতো অবস্থায় ছিলেন না কল্যাণের স্ত্রী জ্যোৎস্না। পরীক্ষা শেষে অরিজিৎ বলে, ‘‘সে দিনই বাবার মৃত্যু সংবাদ পেয়ে ভেঙে পড়েছিলাম। ভেবেছিলাম, আর বোধ হয় পরীক্ষা দেওয়া হবে না। স্কুলের শিক্ষক-শিক্ষিকা, পরিবারের লোকজন, আত্মীয় ও বন্ধুবান্ধবেরা পরীক্ষা দিতে উৎসাহিত করেছেন। তাই বাবাকে হারানোর কষ্ট বুক চেপে পরীক্ষা দিয়েছি। পরীক্ষা ভাল হয়েছে।’’ এর বেশি আর কিছু বলতে পারেনি অরিজিৎ। গলা বুজে এসেছিল তার। কিছু ক্ষণ পরে সামলে নিয়ে সে বলে, ‘‘বাবাকে প্রণাম করে পরীক্ষা দিতে যাওয়ার ইচ্ছা ছিল। তা আর
হল না!’’
খাতড়ার কেচন্দা হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষিক কল্যাণীপ্রসাদ ষন্নিগ্রহী বলেন, ‘‘অরিজিতের বাবার মৃত্যুর খবর শোনার পরেই ঠিক হয়েছিল, পরীক্ষা দেওয়ার সময়ে ওই ছাত্রের প্রতি বিশেষ নজর দেওয়া হবে। ও যে মানসিক দৃঢ়তার পরিচয় দিয়েছে, তা প্রশংসার যোগ্য।’’
শিশু নিকেতনের প্রধান শিক্ষিকা দিপালী কাপড়ি বলেন, ‘‘অরিজিৎ পড়াশোনায় যথেষ্ট ভাল। ওর বাবার মৃত্যুর খবর শোনার পরেই আমরা অরিজিতের বাড়ি গিয়েছিলাম। ওর মা ও পরিবারের অন্যদের সঙ্গে কথা বলেছিলাম। অরিজিৎকে বলেছিলাম, যা ঘটার তা ঘটে গিয়েছে। তাই একটা বছর নষ্ট না করে মনকে শক্ত করে পরীক্ষায় বসতে হবে। পরীক্ষাকেন্দ্রে গিয়ে আমরা ওকে উৎসাহিত করেছি।’’
অন্য দিকে, এ দিন বিষ্ণুপুরের রাধানগর হাইস্কুলে মাধ্যমিক পরীক্ষা দিতে গিয়ে হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়ে বিষ্ণুপুরের জনতার বাসিন্দা জয়কৃষ্ণপুর হাইস্কুলের ছাত্রী প্রিয়া বাউল। পুলিশ তাকে রাধানগর ব্লক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে নিয়ে যায়। সেখানেই পরীক্ষা দেয় প্রিয়া। তার দাদা সঞ্জয় জানান, সকাল থেকেই বোনের শরীর ভাল ছিল না। পেটের গোলমাল দেখা দিয়েছিল। তিনি মোটর বাইকে চাপিয়ে বোনকে পরীক্ষাকেন্দ্রে নিয়ে যান। পুলিশের ভূমিকায় খুশি ছাত্রীর পরিবার।