অভিভাবকহীন নয়, বোঝাল সমিতি

চাষের মরসুম চলায় এ দিন বেশি সংখ্যায় শবররা আসতে পারেননি। তবে জেলার লোক গবেষক সুভাষ রায়, পূর্ব মেদিনীপুরের কলেজ শিক্ষক বিভাস মণ্ডলের মত গুণগ্রাহীরা এসেছিলেন। ঠিক হয়েছে, শবরজাতির উন্নয়নে গোপীবল্লভবাবুর নানা দিক নিয়ে স্মরণিকা প্রকাশ করা হবে।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

মানবাজার শেষ আপডেট: ২০ জুলাই ২০১৭ ১৯:০০
Share:

শ্রদ্ধা: প্রয়াত ‘শবর পিতা’-কে। নিজস্ব চিত্র

শবরদের মূলস্রোতে ফেরানোর জন্য আজীবন লড়াই চালিয়ে যাওয়া মহাশ্বেতা দেবী, গোপীবল্লভ লাল সিংহ দেও একে একে চলে গেলেন। এরপর কী তাঁদের রেখে যাওয়া সেই আন্দোলন কী থমকে যাবে? পশ্চিমবঙ্গ শবর খেড়িয়া কল্যাণ সমিতি কি তাহলে অভিভাবকহীন হয়ে পড়ল? বুধবার কেন্দা থানার রাজনওয়াগড় গ্রামে সমিতির অফিস চত্বরে গোপীবল্লভবাবুর স্মরণসভায় এই সংশয়ই ফুটে উঠল শবরদের কথায়।

Advertisement

পরে অবশ্য ওই সমিতির কর্তারা বৈঠকে বসে সিদ্ধান্ত নেন, শবর সমিতির দুই স্তম্ভ প্রয়াত হলেও তাঁদের ভাবনা এবং পরিকল্পনা অনুযায়ী শবরদের ঐক্য রাখতে এবং উন্নয়নমূলক কাজে সমিতি আগের মতোই কাজ করে যাবে।

সাহিত্যিক মহাশ্বেতা দেবী শবর-আন্দোলনে পুরোমাত্রায় থেকে ‘শবর জননী’ হিসেবে পরিচিতি পেয়েছিলেন। আর ওই সমিতির প্রতিষ্ঠাতা গোপীবল্লভবাবুকে লোকে চিনতেন ‘শবর পিতা’ হিসেবে। গত বছর মহাশ্বেতাদেবী প্রয়াত হন। গত ৬ জুলাই মারা যান গোপীবল্লভবাবু। এর পরেই শবরদের মনে হয়, তাঁদের মাথা থেকে যেন আশ্রয়ের ছাদ সরে গেল।

Advertisement

এ দিন কেন্দা থানার অকড়বাইদ গ্রামের সনাতন শবর, পুতু শবরদের কথাতেই তা উঠে এসেছে। তাঁরা বলেন, ‘‘আগে যে কোনও সমস্যায় পড়লে সমিতির অফিসে এসে জানাতাম। দিদি (মহাশ্বেতাদেবী) কলকাতায় থাকলেও সমস্যার কথা সমিতির অফিস থেকে তাঁকে ফোনে জানানো হতো। এখানে এসে গোপীবল্লভবাবুকে জানালে তিনিই সব সমস্যার সমাধান বলে দিতেন। সে থানা-পুলিশ করাই হোক, বা জমিজমা সংক্রান্ত সমস্যা, এখানে বসেই তিনি সমাধান বাতলে দিতেন।’’

কিন্তু দু’জনেই নেই। এ বার কী হবে?— প্রশ্ন তাঁদের।

মানবাজারের জনড়া গ্রামের গোপাল শবর বলেন, ‘‘শেষ কয়েকটা মাস গোপীবল্লভবাবু খুব অসুস্থ ছিলেন। তবু আমাদের ভরসা ছিল, উনি আছেন। কোনও সমস্যা হলে কাজ কাটকে যাবে না। এখন কার কাছে যাব?’’

এ দিন বৈঠক শেষে সমিতির সম্পাদক জলধর শবর, প্রকল্প আধিকারিক প্রশান্ত রক্ষিত বলেন, ‘‘সমিতির দুই প্রধান স্তম্ভের শূন্যতা কোনও দিনই পূরণ হওয়ার নয়। বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়েছে, তাঁদের স্বপ্ন এবং পরিকল্পনা সার্থক করতে সমিতি আগের মত সক্রিয় থাকবে।’’

এ দিন তিনি আরও বলেন, ‘‘সমিতির উদ্যোগে গত কয়েক দশকে শবরদের ওপর ‘অপরাধী’ তকমা ঘোচানো গিয়েছে। অনেক শবর পরিবার চাষ করে নিজের পায়ে দাঁড়িয়েছেন। কেউ বা লেখাপড়া শিখে চাকরি করছেন।’’

চাষের মরসুম চলায় এ দিন বেশি সংখ্যায় শবররা আসতে পারেননি। তবে জেলার লোক গবেষক সুভাষ রায়, পূর্ব মেদিনীপুরের কলেজ শিক্ষক বিভাস মণ্ডলের মত গুণগ্রাহীরা এসেছিলেন।

ঠিক হয়েছে, শবরজাতির উন্নয়নে গোপীবল্লভবাবুর নানা দিক নিয়ে স্মরণিকা প্রকাশ করা হবে।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement