প্রতীকী চিত্র।
ধানের পরে, জলদি আলু চাষ করবেন। সাত তাড়াতাড়ি জমি তৈরি করতে অনেক চাষিই ‘নাড়া’ (ধান গাছের গোড়া) পোড়ান বলে বাঁকুড়ার বিষ্ণুপুর মহকুমার কৃষি দফতরের কর্তাদের অভিজ্ঞতা বলছে। তাঁরা জানাচ্ছেন, এখন প্রায় সমস্ত প্রশিক্ষণ শিবিরের গোড়াতেই নাড়া পোড়ানোর কুফল পই পই করে বোঝানো হয় চাষিদের। কিন্তু তার পরেও সচেতনতা অনেকটাই অধরা।
পাত্রসায়রের কুশদ্বীপ অঞ্চলের বিদ্যানন্দপুরের অবস্থাপন্ন চাষি উৎপল ঘোষ বলছিলেন, ‘‘আমাদের বাপ-ঠাকুরদারাও নাড়া পুড়িয়েছেন। আলুর জন্য তাড়াতাড়ি জমি তৈরি করতে আমরাও পোড়াই। ক্ষতি হয় বলে
জানা নেই।’’
বিষ্ণুপুর মহকুমা সহ-কৃষি অধিকর্তা (বিষয়বস্তু) অমিতাভ পাণ্ডে অবশ্য বলছেন, ‘‘জমির উপরের আট ইঞ্চি মাটির মধ্যে খাদ্যগুণ থাকে। সেটাই জমিকে উর্বর করে। নাড়া পোড়ালে উর্বরতা নষ্ট হয় ধীরে ধীরে। চট করে চাষিরা বুঝতে পারেন না। কিন্তু টনক যখন নড়ে, তত দিনে অনেক দেরি হয়ে যায়।’’
বাঁকুড়া জেলার মধ্যে চাষ মূলত হয় বিষ্ণুপুর মহকুমা এলাকায়। অমিতাভবাবু জানান, বিষ্ণুপুরের ছ’টি ব্লকেই এখনও অল্প-বিস্তর ‘নাড়া’ পোড়ানো চলে। তবে সমস্যাটা সব থেকে বেশি কোতুলপুরে। সেখানে অনেক চাষিই জলদি আলু চাষ করেন। আগে অনেকেই ধান কাটার পরে, জমিতে লাঙল দিয়ে দিতেন। খড় মাটিতে মিশে সার হয়ে যেত। কিন্তু যন্ত্রে ধান কাটার পরে, অনেকটা ‘নাড়া’ মাটিতে থেকে যায়। যন্ত্রে জমি চষলে সেগুলি সহজে মাটিতে মেশে না। তাই অনেকেই ঝঞ্ঝাট এড়াতে সে ‘নাড়া’ পুড়িয়ে দেন।
কৃষি-কর্তারা জানাচ্ছেন, এতে আখেরে ক্ষতি হয়। মাটি শক্ত হয়ে যায়। কমে উর্বরতা। উপকারী কীটপতঙ্গ, জীবাণু মরে যায়। চলতি বছরেও দুর্গাপুজোর সময়ে বিভিন্ন মণ্ডপে গিয়ে চাষিদের এ সমস্ত কথা বোঝানো হয়েছে।
চাষিরা কবে সচেতন হবেন, সেই অপেক্ষার ফাঁকে অন্য ভাবে বিষয়টির মোকাবিলা করতে চাইছে কৃষি দফতর। জেলার কৃষি-কর্তারা জানাচ্ছেন, অর্থকরী কাজে ‘নাড়া’ ব্যবহার করার চিন্তাভাবনা চলছে। যন্ত্রে ধান কাটলে বড় বড় ‘নাড়া’ জমিতে থেকে যায়। তাতে মাশরুম চাষ করা যেতে পারে।
স্বনির্ভর গোষ্ঠীর মহিলারা মাশরুম চাষের জন্য ‘নাড়া’ কিনে নিয়ে গেলে চাষির বাড়তি আয় হতে পারে। এর থেকে পোড়ানোর প্রবণতায় ভাটা পড়তে পারে বলে আশা করা হচ্ছে। দফতর সূত্রে জানানো হয়েছে, ‘নাড়া’ তুলে নিয়ে জমির পাশে কোথাও পচিয়ে সার তৈরি করা যায়।
পানরডাঙর গ্রামের চাষি ভৈরব হাত বলেন, ‘‘আগে আমরাও নাড়া পুড়িয়েছি। এখন সার তৈরি করে বেশ লাভ হচ্ছে। তাই আর পোড়াই না।’’ তবে এই প্রক্রিয়া সময়সাপেক্ষ বলে অনেকেই এড়িয়ে যান বলে কৃষি দফতরের কর্তাদের অভিজ্ঞতা রয়েছে।
ফলে, ভ্রান্ত ধারণার হাত থেকে পরিবেশ এবং জমি বাঁচাতে আপাতত কৃষি দফতর লাভজনক কোনও রাস্তা চাষিদের সামনে খুলে দেওয়ায় বেশি গুরুত্ব দিচ্ছে।