তরুণীকে ‘পাত্রী’ সাজিয়ে এক নাবালিকার বিয়ে দেওয়ার ফন্দি এঁটেছিল তার পরিবার। জিজ্ঞাসাবাদের সময়ে তা ফাঁস হওয়ায় বন্ধ করা গিয়েছে নাবালিকা বিবাহ। বৃহস্পতিবার রাতে ঘটনাটি ঘটেছে খাতড়ার একটি গ্রামে।
খবর এসেছিল, এক নাবালিকার বিয়ে দিচ্ছে তার পরিবার। সংবাদ পেয়েই পুলিশ কর্মীদের নিয়ে বিয়েবাড়িতে হানা দিয়েছিলেন জেলা চাইল্ড লাইনের প্রতিনিধি এবং পুলিশকর্মীরা। কিন্তু সেখানে পৌঁছে তাঁদের ‘চক্ষু চড়কগাছ’। ‘কনের’ সাজে থাকা তরুণী তো নাবালিকা নন। তবে কি ভুল খবর এসেছিল? মনে যখন প্রশ্ন উঁকি দিচ্ছে, তখনই সূত্র মারফত আসে আরেক খবর। সূত্রটি জানায়, কনের সাজে থাকা যুবতী আসলে ‘নকল পাত্রী’। আসলে নাবালিকাকে তার পরিবার লুকিয়ে রেখেছে অন্য বাড়িতে। এই খবরের ভিত্তিতেই শুরু হল নাবালিকার পরিবারের সদস্যদের জিজ্ঞাসাবাদ। একটু চাপ দিতেই বেরিয়ে পড়ে সত্য। নাবালিকার পরিবার স্বীকার করে, পুলিশ এবং চাইল্ড লাইনকে ‘ফাঁকি’ দিতেই ‘নকল পাত্রী’র ব্যবস্থা করা হয়েছিল। শুনে অবাক পুলিশকর্মী এবং চাইল্ড লাইনের সদস্যেরা।
বৃহস্পতিবার খাতড়ার সুপুর পঞ্চায়েতের একটি গ্রামে ওই নাবালিকার বিয়ে বন্ধ করেছে প্রশাসন। চাইল্ড লাইনের জেলা কো-অর্ডিনেটর সজল শীলের কথায়, ‘‘প্রশাসন বিয়ে বন্ধ করে দিতে পারে সেই আশঙ্কায় ওই নাবালিকার পরিবার তাদেরই আত্মীয়াকে ‘পাত্রী’ সাজিয়ে হাজির করেছিল।’’ এমন ঘটনা তাঁর স্মরণকালে ঘটেনি বলে জানাচ্ছেন সজলবাবু।
যে নাবালিকার বিয়ে ঠিক করা হয়েছিল তার পরিবার খুবই দরিদ্র। বাবা দিনমজুর। বিয়ের খবর পেয়ে রাতেই সেই বাড়িতে পৌঁছন চাইল্ড লাইনের প্রতিনিধি, খাতড়া মহিলা থানা ও সদর থানার পুলিশকর্মীরা। সেই দলে ছিলেন খাতড়া মহিলা থানার অ্যাসিস্ট্যান্ট সাব ইনস্পেক্টর শিখা দাস।
এর পরের ঘটনার বর্ণনা করেন এক পুলিশকর্মী। তাঁর কথায়, ‘‘খোঁজ নিয়ে পাত্রীর বাড়িতে গিয়ে দেখি, পাত্রী হিসাবে সাজিয়ে রাখা হয়েছে প্রাপ্তবয়স্ক অন্য একটি মেয়েকে। আমরা অবাক হয়ে গিয়েছিলাম।’’ তাঁর সংযোজন, ‘‘গিয়ে দেখি পাত্রীর পরনে নতুন কেনা শাড়ি। শাড়িতে এবং পাত্রীর গায়ে লাগানো হলুদ। দেখেই বোঝা যাচ্ছিল তিনি নাবালিকা নন। তার পরেই খবর আসে, যে নাবালিকার বিয়ে ঠিক করা হয়েছে, তাকে পাড়ারই একটি বাড়িতে লুকিয়ে
রাখা হয়েছে।’’
এর পরে ওই নাবালিকার বাবাকে জিজ্ঞাসাবাদ করে পুলিশ। বেরিয়ে আসে সত্য। ওই পুলিশকর্মীর কথায়, ‘‘আমরা যাতে বুঝতে না পারি সেই জন্য প্রাপ্তবয়স্ক এক আত্মীয়কে পাত্রী সাজিয়ে রাখা হয়েছিল। সব কিছু জানার পরে আমরা ওই নাবালিকাকে উদ্ধার করি। জানতে পারি, তাকে বিভিন্ন বাড়িতে রাখা হয়েছিল। যাতে আমরা খুঁজে না পাই।’’
সজলবাবুর কথায়, ‘‘প্রথমে নাবালিকার পরিবার বিয়ের বিষয়টি সম্পূর্ণ অস্বীকার করছিলেন। পরে তাঁদের আত্মীয়দের বিষয়টি বুঝিয়ে বলার পরে চাপে পড়ে স্বীকার করেন। শেষে বিয়ে বন্ধ করতে রাজি হন তাঁরা। প্রাপ্তবয়স্ক না হলে মেয়ের বিয়ে দেবেন না বলে মুচলেকাও দিয়েছেন অভিভাবকেরা।’’