আদালত চত্বরে আসামীদের পরিজনেরা। ছবি সব্যসাচী ইসলাম।
বগটুই হত্যাকাণ্ডের সাক্ষ্যগ্রহণ সোমবার শুরু হয়েছে রামপুরহাটের দ্রুত নিষ্পত্তি বা ফাস্ট ট্র্যাক আদালতে। এ দিনই স্বজনহারা তিন জন সাক্ষীকে ‘বিরূপ’ বলে দাবি করল সিবিআই। কারণ, তাঁরা কেউই অভিযুক্তদের চিনতে পারেননি এজলাসে।
এ দিন ফাস্ট ট্র্যাক আদালতের অতিরিক্ত দায়রা বিচারক সন্দীপ কুণ্ডুর এজলাসে সাক্ষ্যগ্রহণ পর্ব চলে। ঘটনার মূল সাক্ষী ও স্বজনহারা মিহিলাল শেখ, শেখলাল শেখ এবং বানিরুল শেখ—এই তিন ভাইয়ের সাক্ষ্য এ দিন নেওয়া হয়েছে। এ দিন এজলাসে হাজির ১৪ জন অভিযুক্তের কাউকেই তাঁরা দেখেননি বলে সাক্ষ্য দেন ওই তিন ভাই। এ দিন আদালতে সাক্ষ্য দিয়ে বেরিয়ে আসার পরে মিহিলাল ও বানিরুল কোনও মন্তব্য করতে চাননি। সূত্রের খবর, আজ, মঙ্গলবার ফটিক শেখ, নেকলাল শেখ এবং ঘটনার দিন নিহত আতাহারা বিবির মেয়ে খুসি খাতুনকে সাক্ষ্য দেওয়ার জন্য ডাকা হয়েছে।
প্রসঙ্গত, ২০২২ সালের ২১ মার্চ রাতে রামপুরহাট থানার ১৪ নম্বর জাতীয় সড়কের বগটুই মোড়ে বোমা মেরে খুন করা হয় এলাকার দাপুটে তৃণমূল নেতা তথা স্থানীয় বড়শাল গ্রাম পঞ্চায়েতের তৎকালীন উপপ্রধান ভাদু শেখকে। সেই রাতেই ভাদুর অনুগামীরা বগটুইয়ের বেশ কয়েকটি বাড়িতে আগুন ধরিয়ে দেন বলে অভিযোগ। তাতে ৯ জন মহিলা-সহ ১০ জনের মৃত্যু হয়। কলকাতা হাই কোর্টের নির্দেশে বগটুই হত্যাকাণ্ডের তদন্তভার পায় সিবিআই। সিবিআই রামপুরহাট ১ ব্লকের প্রাক্তন তৃণমূল সভাপতি আনারুল হোসেন-সহ ২৩ জনের নামে প্রথম চার্জশিট জমা দেয়।
এ দিন অতিরিক্ত জেলা দায়রা বিচারক সন্দীপ কুণ্ডুর এজলাসে আনারুল-সহ বগটুই-কাণ্ডে অভিযুক্ত ২৩ জনের মধ্যে ১৪ জন উপস্থিত ছিলেন। বাকি অভিযুক্ত ৯ জনের আইনজীবীদের উপস্থিতিতে সাক্ষ্য নেওয়া হয়। সিবিআইয়ের আইনজীবী পার্থ তপস্বী বলেন, ‘‘স্বজনহারা মিহিলাল, বানিরুল ও শেখলালের পরিবারের ১০ জন পুড়ে মারা গিয়েছেন। তিন জনেই ঘটনার ব্যাপারে বলেছেন। নিজের পরিবারের লোকজন পুড়ে মারা গিয়েছেন বলেছেন। বোমা পড়েছে, আগুন জ্বলেছে বলেছেন। কিন্তু, তিন জনের কেউ এজলাসে বিচারকের সামনে অভিযুক্তদের চিনতে পারেননি। বলেছেন, তাঁরা অভিযুক্তদের দেখিনি।’’ তাঁর সংযোজন, তিন জনকেই তাঁরা ‘বিরূপ’ সাক্ষী হিসাবে ঘোষণা করেছেন। হতাশার সুরে সিবিআইয়ের আইনজীবীর মন্তব্য, ‘‘এ রকম একটা ঘটনায় মূক্ষ্য সাক্ষীরা যদি বিরূপ হয়ে যান, তা হলে আমাদের কিছু করার নেই।’’
অন্য দিকে, অভিযুক্ত পক্ষের এক আইনজীবী জাহির রাইহান বান্টি ‘বিরূপ’ সাক্ষ্য নিয়ে মন্তব্য করতে চাননি। তিনি বলেন, ‘‘মামলা এখনও বিচারাধীন। সুতরাং সাক্ষ্য দান পর্বে কী হয়েছে, সেটা এখনই বলা যাবে না।’’