ছেলের ছবি হাতে কেঞ্জাকুড়ার দম্পতি। নিজস্ব চিত্র
দুর্ঘটনা নয়, তাঁর ছেলেকে পরিকল্পনা করেই গাড়ি চাপা দিয়ে খুন করা হয়েছে। এমনই অভিযোগ তুলে দোষীদের গ্রেফতারের দাবিতে মুখ্যমন্ত্রীর দ্বারস্থ হলেন এক অবসরপ্রাপ্ত পুলিশ কর্মী।
বাঁকুড়ার কেঞ্জাকুড়ার গোঁসাইডিহির বাসিন্দা মানিক চক্রবর্তীর অভিযোগ, তাঁর ছেলে সঞ্জীব চক্রবর্তীর (৩৬) মৃত্যুর অভিযোগ জানাতে গেলে বাঁকুড়া সদর থানা তা নেয়নি। বাধ্য হয়ে তিনি বাঁকুড়া সিজেএম আদালতে অভিযোগ জানান। কিন্তু তারপরে এক মাস পার হয়ে গেলেও অভিযুক্তদের কাউকে গ্রেফতার করতে পারেনি পুলিশ।
বাঁকুড়া জেলা পুলিশ সুপার সুখেন্দু হীরা বলেন, ‘‘প্রাথমিক তদন্তে পুলিশ খুনের ঘটনার কোনও তথ্য-প্রমাণ পায়নি। তাই তাঁকে আদালতে অভিযোগ জানাতে বলা হয়েছিল। আদালত যেমন নির্দেশ দেবে, সেই মোতাবেক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’’ যদিও মানিকবাবুর দাবি, আদালত খুনের তদন্তেরই নির্দেশ দিয়েছে। তবে বাঁকুড়া সদর থানার পুলিশ তেমন কোনও নির্দেশ আদালত থেকে তাঁরা পায়নি বলে দাবি করেছে।
প্রাক্তন বিএসএফ জওয়ান সঞ্জীববাবু বছর ছয়েক ধরে বাড়ির চাষবাসের দেখাশোনা করতেন। তাঁর পরিবার সূত্রে জানা গিয়েছে, গত ৬ অগস্ট বিকেলে তিনি কেঞ্জাকুড়ায় বাজার করতে বেরিয়েছিলেন। সন্ধ্যায় কেঞ্জাকুড়া ও গোঁসাইডিহির রাস্তার পাশে তাঁকে রক্তাক্ত অবস্থায় পড়ে থাকতে দেখা যায়। তাঁকে কোনও গাড়িতে ধাক্কা মেরেছে খবর পেয়ে মানিকবাবু তাঁর স্ত্রী লক্ষ্মীদেবীকে নিয়ে সেখানে ছুটে যান। একটি গাড়ি ভাড়া করে বাঁকুড়া মেডিক্যালে নিয়ে যাওয়া হয়।
মানিকবাবুর দাবি, ‘‘গাড়িতেই যন্ত্রণায় ছটফট করতে করতে ছেলে তার মাকে জানিয়েছিল, ওরই কিছু পরিচিত কেঞ্জাকুড়ার ছেলে তাঁকে খুন করতে পিকআপভ্যান দিয়ে ধাক্কা দিয়েছে। রাতেই ছেলে মারা যায়।’’ পরের দিন বাঁকুড়া সদর থানার পুলিশ একটি অস্বাভাবিক মৃত্যুর মামলা করে দেহটি ময়নাতদন্তে পাঠায়।
মানিকবাবু জানান, দেহ দাহের পরে ওই ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী কিছু লোকজন তাঁকে জানিয়েছিলেন, রাস্তায় কয়েকটি ছেলের সঙ্গে সঞ্জীবের ঝামেলা হচ্ছিল। তারাই গাড়ি চাপা দেয় বলে প্রত্যক্ষদর্শীদের দাবি। যদিও এখন তারা প্রকাশ্যে মুখ খুলতে চাইছেন না।
খুনের কারণ কী? মানিকবাবুর দাবি, ওই ছেলেগুলির মধ্যে এক জন সঞ্জীবের ছেলেবেলার বন্ধু। কেঞ্জাকুড়া বাজারে সঞ্জীব গেলেই ওরা খাওয়ানোর জন্য জোরাজুরি করত। কিন্তু সে দিন সঞ্জীবের হাতে টাকা ছিল না। শুনেছি, সে কারণেই ঝামেলা হওয়ায় পরিকল্পনা করে ওরা সঞ্জীবকে খুন করে। যদিও কেঞ্জাকুড়া বাজারে গিয়ে অভিযুক্তদের খোঁজ করেও পাওয়া যায়নি।
৯ অগস্ট তিনি সঞ্জীবকে খুন করার অভিযোগ জানাতে যান বাঁকুড়া সদর থানায়। বছর বারো আগে কাঁথি আদালত থেকে এএসআই পদ থেকে অবসর নেওয়া মানিকবাবুর অভিযোগ, ‘‘থানার আধিকারিকেরা অভিযোগ না নিয়ে উল্টে দুর্ব্যবহার করে আমাকে আদালতে অভিযোগ জানাতে বলেন।’’ এ দিন গ্রামে গিয়ে দেখা যায়, ওই ঘটনা সম্পর্কে বাসিন্দারা মুখ খুলতে নারাজ। ছোট ছেলের মৃত্যু নাড়িয়ে দিয়ে গিয়েছে চক্রবর্তী পরিবারকে।
ছেলের ছবি আঁকড়ে লক্ষ্মীদেবী কাঁদতে কাঁদতে বলেন, ‘‘ছেলেটা যন্ত্রণায় কাতরাতে কাতরাতে বলল, ‘মা ওরা আমাকে মেরে দিল’। কিন্তু পুলিশ দোষীদের ধরল না!’’ মানিকবাবুর আক্ষেপ, ‘‘কেঞ্জাকুড়া বাজারে গেলে ছেলেগুলো অভিযোগ তুলে নেওয়ার জন্য হুমকি দিচ্ছে। আমি নিজে পুলিশ ছিলাম, তা সত্ত্বেও ছেলের খুনের ঠিকঠাক তদন্ত করাতে পারব না, ভাবতে পারছি না।’’