Sukanta Majumdar

সুকান্তের নালিশ সত্য নয়, দাবি অভিযুক্তদের

অভিযোগ ছিল, শাসকদলের অনেক নেতা, নেত্রী ও তাঁদের আত্মীয়স্বজন যে জমি দেখিয়ে শস্যবিমার টাকা তুলেছেন, বাংলার ভূমি পোর্টালে দেখা যাচ্ছে তার তুলনায় অনেক কম পরিমাণ জমি রয়েছে তাঁদের নামে।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ০৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ ০৮:৩৬
Share:

সুকান্ত মজুমদার। —ফাইল চিত্র।

জমি সংক্রান্ত তথ্যে কারচুপি করে শস্যবিমা যোজনার টাকা আত্মসাতের যে অভিযোগ শনিবার তাঁদের বিরুদ্ধে বিজেপির রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার করেছেন, তা শুধু ভিত্তিহীন নয়, কল্পনাপ্রসূতও বটে। রবিবার এ ভাবেই প্রতিক্রিয়া দিয়েছেন রাজনগরের শাসকদলের নেতা, নেত্রীরা।

Advertisement

শনিবার কলকাতার বিধাননগরে দলের দফতর থেকে তথ্য পেশ করে বাংলা শস্যবিমায় বেনিয়মের অভিযোগ তোলেন সুকান্ত। তাঁর অভিযোগ ছিল, শাসকদলের অনেক নেতা, নেত্রী ও তাঁদের আত্মীয়স্বজন যে জমি দেখিয়ে শস্যবিমার টাকা তুলেছেন, বাংলার ভূমি পোর্টালে দেখা যাচ্ছে তার তুলনায় অনেক কম পরিমাণ জমি রয়েছে তাঁদের নামে। এমনকি, চাষের জমি হিসেবেও সেটা চিহ্নিত নয়।

যে চার জনের নথি দেখিয়ে সুকান্ত এমন অভিযোগ তোলেন, তাঁরা বীরভূমের রাজনগর ব্লকের বসিন্দা এবং শাসকদলের নেতা, নেত্রী বা তাঁদের পরিজন। তালিকায় ছিলেন, রাজনগর পঞ্চায়েত সমিতির পূ্র্ত কর্মাধ্যক্ষ সুকুমার সাধুর স্ত্রী শেফালি সাধু, ব্লকের তাঁতিপাড়া অঞ্চল তৃণমূল সভাপতি (বর্তমানে প্রয়াত) বিদ্যুৎ বন্দ্যোপাধ্যায়, প্রাক্তন জেলা পরিষদের সদস্য রিয়াশ্রী দাস এবং রাজনগর গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকার শাসকদলের সহ সভাপতি সুখেন গড়াই।

Advertisement

ঠিক কী অভিযোগ ছিল সুকান্তর?

শেফালির নথি দেখিয়ে শনিবার সুকান্ত অভিযোগ করেছিলেন, শেফালি যে জেএল নম্বর দেখিয়ে দাবি করেছেন তাঁর নামে প্রায় পাঁচ একর জমি আছে এবং বাংলা শস্যবিমা যোজনায় তাঁর প্রাপ্য টাকা ১ লক্ষ ৬৬ হাজার, বাংলার ভূমি পোর্টালে দেখা যাচ্ছে সেই জেএল নম্বরে তাঁর জমির পরিমাণ ০.১৩ একর। অর্থাৎ যাঁর জমির পরিমাণ ০.১৩ একর, তিনি তাঁর জমির পরিমাণ ৫ একর দেখিয়ে করের টাকা চুরি করে নিচ্ছেন বলে অভিযোগ করেন সুকান্ত। একই ভাবে নথি দেখিয়ে সুকান্ত অভিযোগ করেন, শস্যবিমার আবেদনে যে পরিমাণ জমি বিদ্যুৎ বন্দ্যোপাধ্যায় (প্রয়াত), রিয়াশ্রী দাস, সুখেন গড়াইরা যথাক্রমে ৯১,৮৪০ টাকা, ৯৬,৬৪০ টাকা, ১ লক্ষ ৫৭ হাজার টাকা নিয়েছেন, বাংলার ভূমি পোর্টাল বলছে, তার থেকে অনেকে কম পরিমাণ জমি রয়েছে প্রত্যেকের।

সুকান্তের এই বক্তব্যের ভিডিয়ো পরে জেলা বিজেপির তরফে শেয়ার করা হয়। তারই প্রতিক্রিয়া দিয়েছেন শেফালি, রিয়াশ্রী, সুখেনরা। শেফালি বলেন, ‘‘বিজেপির রাজ্য সভাপতি জানেনই না বিমাকৃত রাশি ও বিমা থেকে প্রাপ্ত অর্থের তফাৎ কী? মোট বিমাকৃত রাশির মাত্র ২৫ শতাংশ ফসল বিমা অনুযায়ী এক জন পেতে পারেন। কোথা থেকে নথি পেলেন জানি না, আমার জমির (বাপের বাড়ি থেকে পেয়েছি) পরিমাণ পাঁচ একরেরও বেশি।’’ প্রায় একই কথা বলেছেন সুখেন। তিনি বলেন, ‘‘বিজেপি রাজ্য সভাপতি ১ লক্ষ ৫৭ হাজারের হিসেব দিয়েছেন। ফসলে ক্ষতি হয়েছে বলে আমার ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে ঢুকেছে ৩৯ হাজারের কিছু বেশি টাকা। যে পরিমাণ জমি দেখানো হয়েছে, সেই পরিমাণ জমি আমার আছে। যে কোনও সময় নথি দেখাতে পরি।’’ অন্য দিকে, রিয়াশ্রী বলেন, ‘‘সামনে নির্বাচন তাই এ সব ভিত্তিহীন অভিযোগ করছেন। নিয়ম মেনে, উপযুক্ত তথ্য প্রমাণ দেখিয়েই, শস্যবিমায় আবেদন করেছিলাম।’’

যদিও বিজেপির বীরভূম সাংগঠনিক জেলার সম্পাদক ধ্রুব সাহা বলেন, ‘‘অভিযোগ তো উঠবেই। তৃণমূলের জামানায় সবই সম্ভব।’’ যদিও কৃষি আধিকারিকদের মতে, আবেদনের সময়ে একাধিক দাগ, খতিয়ান নম্বরের জমির নথি দিয়ে আবেদন করলেও, একটিই দাগ নম্বর দেখা যায়, পুরোটা নয়। তবে কিছু ক্ষেত্রে ভাগচাষি বা কারও জমির পরিমাণ সত্যিই কম অথচ স্থানীয় প্রধান লিখে দিলেন (শংসাপত্র) তিনি এই পরিমাণ জমি চাষ করেন, সেটাকে খতিয়ে দেখার জায়গা থাকে না।

জেলা কৃষি দফতের এক কর্তা বলেন, ‘‘কোনও অভিযোগের প্রতিক্রিয়া দিতে হলে সম্পূর্ণ তথ্য যাচাই করার প্রয়োজন। তবে ফসলের ক্ষয়ক্ষতি হলে বিমাকৃত রাশির চার ভাগের এক ভাগ রাশিই এক জন কৃষক পেতে পারেন। সম্পূর্ণ রাশি নয়।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement