রাত তখন সাড়ে আটটা। বাড়ির বাইরে মোবাইলে এক বন্ধুর সঙ্গে কথা বলছি। হঠাৎ দেখি কয়েকটি কুকুর চেঁচাতে চেঁচাতে কোনও জন্তুকে তাড়া করেছে। টর্চ জ্বালতে না জ্বালতেই পুকুরের জলে ঝুপ করে একটা আওয়াজ। ছুটে গিয়ে দেখি, জলের মধ্যে একটা হরিণ হাবুডুবু খাচ্ছে। ধরার চেষ্টা করতেই জঙ্গলের দিকে ছুট দিল।
বড়জোর মিনিট পনেরো কেটেছে। আবার কুকুরের চেঁচামিচি! তখনই বুঝেছি, নির্ঘাত আবার হরিণটাকে তাড়া করেছে। একটা লাঠি নিয়ে কিছুটা এগিয়ে গেলাম। দেখেই ছুটে পালাল কুকুরগুলো। হরিণটার শরীর থেকে গলগল করে রক্ত ঝরছিল। তুলে নিয়ে যাই। গ্রামের লোকজন সবাই চলে আসেন।
খবর দেওয়া হয় বন দফতরে। একটি ভ্যানোতে চাপিয়ে হরিণটাকে বন দফতরের অফিসে নিয়ে যাওয়া হয়। চিকিৎসক তাড়াতাড়ি চলে এসেছিলেন। হরিণটার সারা শরীর ফুলে গিয়েছিল। আমরা কয়েক জন মিলে গোটা গায়ে ওষুধ লাগিয়ে দিলাম। তার পরে খাবার দিয়ে একটা ঘরে রাখা হল। বাড়ি ফিরতে ফিরতে রাত প্রায় ১২টা বেজে গিয়েছিল।
বুধবার সকালে উঠে ভাবলাম, বন দফতরের অফিসে গিয়ে একটা খোঁজ নিয়ে আসি। কেমন আছে হরিণটা। আর তখনই খবর এল, আরও একটা হরিণ রক্তাক্ত হয়ে পাহাড়পুরের কাছে পড়ে রয়েছে। সঙ্গে সঙ্গে সেই ভ্যানোটাই আবার ডেকে এনে রওনা দিলাম। কোন রকমে জখম হরিণটাকে নিয়ে আসা হল বিট অফিসে। কিন্তু আর বাঁচানো গেল না। মনটা ভীষণ খারাপ হয়ে গেল।
যে হরিণটাকে আগের রাতে উদ্ধার করা হয়েছে, সেটাকে শুনলাম সুরুলিয়ার মিনি জুতে নিয়ে যাওয়া হবে। বন দফতরের সবার কাছে অনুরোধ করলাম। হরিণটার প্রতি বড্ড মায়া পড়ে গিয়েছে। ওকে ছেড়ে আসতে আমিও যাচ্ছি সুরুলিয়ায়। ও অন্তত তাড়াতাড়ি সেরে উঠুক।