ক্লাস থেকে বেরিয়ে ভিন্ন স্বাদের পাঠ 

একই ভাবে জয়দেবের শতাব্দী প্রাচীন টেরাকোটা মন্দির একাধিক বার দেখে থাকলেও ওই স্কুলের নবম শ্রেণির পড়ুয়া আকাশ দাস বৈরগ্য , মণীষা বেঁশরারা জানত না, ওই বিখ্যাত মন্দিরের ইতিহাস কিংবা কবি জয়দেব সম্পর্কে বা পোড়ামাটির কাজে প্রস্ফুটিত হয়ে থাকা পৌরাণিক বিষয়গুলি সম্পর্কে।

Advertisement

দয়াল সেনগুপ্ত

দুবরাজপুর শেষ আপডেট: ০৭ মার্চ ২০১৯ ০২:০৩
Share:

জয়দেবের প্রাচীন টেরাকোটা মন্দিরে পড়ুয়ারা। নিজস্ব চিত্র

ইলামবাজার ব্লকের বাসিন্দা হওয়ার সুবাদে অজয় নদের সঙ্গে পরিচয় ছিল মনোহরপুর নাচনসাহা উচ্চ বিদ্যায়ের দশম শ্রেণির ছাত্র সৌভিক খান, পিউ ঘোষেদের । কিন্তু তারা জানত না অজয় নদের উৎপত্তি কোথায়, মোহনা কোথায়। তারা জানত না, আগে যে নদ বীরভূম ও বর্ধমানের সঙ্গে জলপথের যোগাযোগের অন্যতম উপায় ছিল, সেই অজয়ই নাব্যতা হারিয়ে বর্ষাকাল বাদে এখন বছরভর শুকনো। স্কুল থেকে ‘এক্সপোজ়ার ভিজিট’-এ গিয়ে বিশ্বভারতীর ভূগোলের অধ্যাপক তথা নদী গবেষক মলয় মুখোপাধ্যায়ের কাছে থেকে অজয় নিয়ে এমনই নানা তথ্য পড়ুয়ারা জানল বুধবার।

Advertisement

একই ভাবে জয়দেবের শতাব্দী প্রাচীন টেরাকোটা মন্দির একাধিক বার দেখে থাকলেও ওই স্কুলের নবম শ্রেণির পড়ুয়া আকাশ দাস বৈরগ্য , মণীষা বেঁশরারা জানত না, ওই বিখ্যাত মন্দিরের ইতিহাস কিংবা কবি জয়দেব সম্পর্কে বা পোড়ামাটির কাজে প্রস্ফুটিত হয়ে থাকা পৌরাণিক বিষয়গুলি সম্পর্কে। সে-সব তারা এ দিন জেনে নিয়েছে অবসরপ্রাপ্ত স্কুল শিক্ষক তথা আঞ্চলিক ইতিহাসের গবেষক সৌরেন্দ্রনাথ চট্টোপাধ্যায় এবং প্রণব ভট্টাচার্যের কাছে থেকে।

বুধবার স্কুল থেকে বাইরে বেরিয়ে শিক্ষক ও অতিথিদের কাছ থেকে অজয় নদ, রাধাবিনোদের টেরাকোটা মন্দির ও বাউল গান নিয়ে এমন অনেক অজানা কথাই জানতে পেরেছে মনোহরপুর নাচনসাহা উচ্চ বিদ্যায়ের সপ্তম, অষ্টম, নবম ও দশম শ্রেণির ১২০ জন ছাত্রছাত্রী। ওই স্কুল ও জেলা শিক্ষা দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, চার দেওয়ালের ক্লাসরুম থেকে বাইরে গিয়ে একটু ভিন্ন স্বাদের পাঠ নেওয়ার জন্যই জেলার দুশোরও বেশি স্কুলের পড়ুয়াদের ‘এক্সপোজ়ার ভিজিট’-এ পাঠানোর ব্যবস্থা করেছে সর্বশিক্ষা মিশন। যাতে পড়ুয়াদের একেবারে অন্য রকম অভিজ্ঞতা হয়।

Advertisement

জেলা সর্বশিক্ষা মিশন সূত্রে জানা গিয়েছে, প্রতিটি ব্লক থেকে ১০টি করে উচ্চ মাধ্যমিক স্কুল এবং প্রতিটি পুরসভা এলাকা থেকে ৫টি করে স্কুল নির্বাচিত হয়েছে। মিলিত সংখ্যা ২২০টি। কোন কোন স্কুল নির্বাচিত হয়েছে বা হবে, প্রতিটি ব্লকের বিডিওকে চেয়ারম্যান করে এবং এবং সেই চক্রের সহকারী বিদ্যালয় পরিদর্শকদের আহ্বায়ক করে গড়া কমিটির উপরে নির্ভর করবে। নির্বাচিত স্কুলগুলি তাদের সপ্তম, অষ্টম, নবম ও দশম— মোট চারটি ক্লাসের প্রতিটি থেকে মেধার ভিত্তিতে ৩০ জন (কো-এড হলে ১৫ জন ছাত্র ও ১৫ জন ছাত্রী) মোট ১২০ জন পড়ুয়াকে বেছে এই ভিজিটে নিয়ে যাবে। দায়িত্ব থাকবেন এক জন নোডাল টিচার। প্রতি পড়ুয়াকে ভিজিটে নিয়ে যাওয়া, খাওয়ানোর জন্য ২০০ টাকা বরাদ্দ করেছে দফতর।

নির্দেশিকায় বলা হয়েছে ৩১ জানুয়ারি থেকে ৩১ মার্চের মধ্যে স্কুলগুলিকে এ কাজ শেষ করতে হবে। কী ভাবে এক জন পড়ুয়া উপকৃত হবে, সেটাও গাইড লাইনে বলা হয়েছে। নির্দেশিকায় পড়ুয়াদের স্কুল থেকে সামান্য দূরত্বের কোনও দর্শনীয় স্থান, মিউজ়িয়াম, বা সরকারি প্রতিষ্ঠানে নিয়ে যাওয়ার কথা বলা হয়েছে। নোডাল টিচার সেখানে গিয়ে এলাকা সম্পর্কে পড়ুয়াদের বলবেন। পড়ুয়ারা নিজেরা সব ঘুরে দেখবে। তার পর এক সঙ্গে খাওয়াদাওয়া। ওই ভ্রমণ সম্পর্কে কী জানল, পড়ুয়ারা তা প্রোজেক্ট হিসাবে জমা দেবে স্কুলে।

সেই নির্বাচিত স্কুলগুলির তালিকায় ছিল ইলামবাজারের বিলাতি অঞ্চলের নাচানসাহা উচ্চ বিদ্যালয়। স্কুলের প্রধান শিক্ষক প্রশান্ত মুখোপাধ্যায়, নোডাল শিক্ষক জয়দেব মুখোপাধ্যায়রা বলছেন, ‘‘আমরা জয়দেব কেঁদুলিতে পড়ুয়াদের নিয়ে গিয়েছিলাম। শুধু স্কুলের শিক্ষকেরাই নন, আমরা চেয়েছিলাম, ওই এলাকা সম্পর্কে পড়ুয়াদের সম্যক ধারণা দিতে পারবেন, এমন বিশিষ্টজনেরা সঙ্গে থাকুন। তাই সেটা ভিন্ন মাত্রা পেয়েছে। খুব ভাল কাটিয়েছে পড়ুয়ারা।’’

একটু অন্য রকম দিন কাটিয়ে খুশি স্কুলের পড়ুয়ারাও। আকাশ, মণীষারা জানিয়েছে, জমিয়ে খাওয়াদাওয়া, আড্ডা, বাউলগানের আসরে তারা যেমন মজা করেছে, তেমনই স্কুলের চার দেওয়ালের বাইরে নতুন কিছু জানতে পেরে তাদের খুব ভাল লেগেছে।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement