পুজো শেষ। ঘরে ফেরার পালা। নিজস্ব চিত্র।
দশমীর দুপুরে পঙ্ক্তিভোজ খেয়ে পাতা তুলতে তুলতে কথা হচ্ছিল, ‘‘দিদি সামনে বছর কিন্তু এই ভাবেই আমরা যেন পুজোর চার দিন এক সঙ্গে খাওয়া দাওয়া করতে পারি।’’ বলছিলেন পুজো কমিটির সেক্রেটারিকে পাড়ারই এক বধূ। তার একটু আগে দুর্গা প্রতিমার ঘট বিসর্জনের মন্ত্রে দেবীকে চোখের আড়াল থেকে বিদায় দিতে হচ্ছে সেই ভাবনাতেই অনেকের চোখ ছলছল করে উঠেছিল। এমন দৃশ্য রামপুরহাট সানঘাটাপাড়া সর্বজনীন দুর্গোৎসবের।
গতবছর লক্ষ্মীপুজোর সময় পাড়ার দুর্গোপুজোর ভার মহিলাদের উপর অর্পন করেছিল পুজো কমিটির পুরুষ সদস্যরা। মহিলাদের শর্ত ছিল, পুজোর চার দিন একাধারে ঘর সামলিয়ে, হেঁসেল আগলিয়ে মণ্ডপে পুজোর জোগাড় করতে পারবে না। সেই জন্য পুজোর চার দিন পাড়ার পুজো মণ্ডপে এক বেলা বাড়ির সকল সদস্যদের খাওয়ার ব্যবস্থা রাখতে হবে। মহিলাদের দাবি গুরুত্ব পায়। সেই মতো এ বার চার দিন পুজো কমিটির সঙ্গে যুক্ত ১৪০টি পরিবার একসঙ্গে খাওয়া দাওয়া করল। চারদিনই সকলে একবেলা নিরামিষ আহারে বসেছে একসঙ্গে।
কমিটি সূত্রে খবর, পরিবার পিছু গড়ে ৪ জন করে সদস্য ধরলে প্রতিদিন অন্তত ৫৬০ জন লোকের খাবারের আয়োজন করতে হয়েছে। সপ্তমী, অষ্টমী, নবমী, দশমী চার দিনে প্রায় ২৫০০ জনের খাবারের আয়োজন করতে হয়েছে। সেই আয়োজনের ব্যয় ভারও করে রেখেছিল পুজা কমিটির মহিলা সদস্যরা।
পুজো কমিটির সম্পাদক চৈতালি সেনগুপ্ত জানালেন, পুজো কমিটির সঙ্গে যুক্ত পুরুষ সদস্যদের বিশেষ করে যুবকদের কর্মসূত্রে অনেককেই বাইরে বাইরে থাকতে হয়। সেই জন্য পুজোর আগে পাড়ায় বাড়িতে বাড়িতে চাঁদা সংগ্রহ করতে অনেক অসুবিধা হয়। এতে পুজোর ব্যয় ভার বহন করা মুশকিল হয়। গত বছর লক্ষ্মীপুজোর সময় তাই পুজো কমিটি ঠিক করে এ বারে মহিলাদের উপর দায়িত্ব ভার দেওয়া হবে।” হিসাবরক্ষক শম্পা ভট্টাচার্য জানান, দায়িত্ব ভার নেওয়ার পরে গত বছরের নভেম্বর মাস থেকে পরিবারের সদস্য সংখ্যা হিসাব করে পরিবার পিছু মাসিক চাঁদা তোলার ব্যবস্থা করা হয়।
খাবারের মেনু চার্ট কি ছিল এ বার? সদস্যরা জানালেন, সপ্তমীতে সাদা ভাত, পাঁচ তরকারি, পনিরের তরকারি। অষ্টমীতে লুচি, কুমড়োর ছক্কা। নবমীতে ফ্রায়েড রাইস, তরকারি, পকোড়া। দশমীর দিন খিচুড়ি।