প্রতীকী ছবি।
দেড় মাসের মধ্যে চতুর্থবার হাতির হামলার ঘটনা ঘটল পুরুলিয়া অযোধ্যা পাহাড়ে। শুক্রবার হাতির হামলায় মৃত্যু হয়েছে এক তরুণীর। গুরুতর জখম দু’জন। এই নিয়ে অযোধ্যায় গত দেড় মাসে হাতির হামলায় মৃত্যু হল তিন জনের।
ঘটনার পর থেকে আতঙ্কে কাঁটা পাহাড়বাসী। এই পরিস্থিতিতে শনিবার সরানো হয়েছে বন দফতরের বাঘমুন্ডির রেঞ্জারকে। শুক্রবার বিকেলে হাতির আক্রমণে মৃত্যু হয় পর্যটক এক তরুণীর। গুরুতর জখম হন তাঁর সঙ্গে থাকা এক যুবক। পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, বিয়ের আগে হবু স্বামীর সঙ্গে অযোধ্যা বেড়াতে এসে এই মর্মান্তিক দুর্ঘটনা।
পুলিশ জানিয়েছে, নিহত তরুণীর নাম দীপিকা হাঁসদা (২০)। বাড়ি আড়সা থানার কালিপুর গ্রামে। তাঁর সঙ্গী রামকৃষ্ণ মাঝির বাড়ি কেন্দা থানার টুকিয়া গ্রামে। শুক্রবার মোটরবাইকে চড়ে তাঁরা অযোধ্যা পাহাড়ে বেড়াতে গিয়েছিলেন। সন্ধ্যায় লোয়ার ড্যাম দেখে ফেরার পথে বৃষ্টি নামে। বৃষ্টি থেকে বাঁচতে আপার ড্যাম ওঠার পাকা রাস্তার ধারে একটি গাছের তলায় দাঁড়ান দীপিকা ও রামকৃষ্ণ। এমন সময় হটাৎ একটি দাঁতাল এসে তাঁদের আক্রমণ করে। প্রথমে সে রামকৃষ্ণকে শুঁড়ে জড়িয়ে ধরে। সেই সময় ওই তরুণীর চিৎকারে রামকৃষ্ণকে ছেড়ে দীপিকাকে শুঁড়ে পেঁচিয়ে ধরে মাটিতে আছাড় মারে। ঘটনাস্থলেই মৃত্যু হয় তাঁর। অজ্ঞান অবস্থায় পড়ে থাকেন রামকৃষ্ণও।
খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে আসেন বাঘমুন্ডি থানার ওসি মুকুল কর্মকার-সহ বিশাল পুলিশ বাহিনী। আসেন বিডিও দেবরাজ ঘোষ, বন দফতরের বাঘমুন্ডির রেঞ্জ অফিসার আলমগীর হক। ফটকা ফাটিয়ে পাশেই থাকা হাতিটিকে সরিয়ে তরুণীরে দেহ উদ্ধার করেন। জখম রামকৃষ্ণকে পাথরডি স্বাস্থ্যকেন্দ্রে ভর্তি করানো হয়।
ওই ঘটনার কিছুক্ষন পরেই ঘটনাস্থল থেকে কয়েক কিলোমিটার দূরে টুরগার কাছে হাতির হামলায় জখম হন টারপানিয়া গ্রামের বাসিন্দা শ্রীকান্ত লোহার। তিনি বাঘমুন্ডি থেকে বাড়ি ফিরছিলেন। শ্রীকান্তের সঙ্গী চার প্রতিবেশী মহিলা জঙ্গলের গুহায় কয়েকঘন্টা লুকিয়ে পড়েন। পরে মশাল নিয়ে এসে ওই চার মহিলাসহ জখম ব্যক্তিকে উদ্ধার করে হাসপাতালে পাঠান স্থানীয়েরা।
গত ২৮ মে অযোধ্যা পাহাড়ের বাঁধডি গ্রামে হাতির হামলায় মৃত্যু হয়েছিল ৩৬ বছরের বুদ্ধেশ্বর সিং মুড়ার। তারপর ২৭ জুন বাঘমুন্ডি রেঞ্জের অন্তর্গত অযোধ্যা পাহাড়ের ডুঙরিডি গ্রামের শঙ্খ সোরেন নামে আর এক যুবক হাতির হামলার শিকার হন। দেড় মাসের মাথায় তৃতীয় মৃত্যুতে বন দফতরের বিরুদ্ধে ক্ষোভ জানিয়েছেন পাহাড়বাসী।
গ্রামবাসীদের অভিযোগ, বৃহস্পতিবার রাতে আপার ডেমের কাছে মাঝ রাত পর্যন্ত ১০-১২ টি হাতির একটি দলকে তাড়াতে বন দফতরের লোকজন লাগাতার ঐরাবত গাড়ির হুটার বাজিয়ে ফটকা ফাটায়। দলটি বিভিন্ন ছড়িয়ে ছিটিয়ে ক্ষিপ্ত হয়ে এই ধরণের ঘটনা ঘটছে। তবে শুক্রবারের ঘটনার পার অযোধ্যা পাহাড় জুড়ে বন দফতরের পক্ষে মাইকে প্রচার করা হচ্ছে। শনিবার ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন সিসিএফ মনসা রঞ্জন ভট্ট। পুরুলিয়া ডিভিশনের ডিএফও দেবাশিস শর্মা। দেবাশিস বলেন, ‘‘বাঘমুন্ডির রেঞ্জার আলমগীর হককে সেখান থেকে তুলে তার জায়গায় মোবাইল রেঞ্জ থেকে মনোজকুমার মল্লকে দায়িত্ব দেওয়া হচ্ছে।’’