গলিতে জমেছে জল। তার মধ্যেই চলছে প্রচার। রবিবার সিউড়িতে ছবিটি তুলেছেন তাপস বন্দ্যোপাধ্যায়।
পুরভোটের দিন যত এগিয়ে আসছে, জেলায় প্রার্থীদের প্রচারেও যেন গতি বেড়ে চলেছে। বাড়ি বাড়ি ভোট প্রচার শুরু হয়েছে মনোনয়ন পত্র দাখিল করার পর থেকেই। দেওয়াল লিখন, ব্যানার পোস্টার রাজনৈতিক দলের ফ্লেক্স বা পতাকা টাঙানোর কাজও চলছে জোরকদমে। ছুটির দিন হলেও রবিবার, সেটা যেন আরও বাড়তি হাওয়া পেল। দিনভর প্রচারে থাকলেন পুরভোটে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের প্রার্থী এবং দলীয় কর্মীরা। তবে, ছুটির দিন বলেই এ দিন প্রচারের মেজাজও ছিল মিঠে-কড়া।
পোড় খাওয়া রাজনৈতিক দলের নেতা কর্মীদের ব্যাখ্যা, লোকসভা, বিধানসভার মতো পুরভোটের দীর্ঘ মেয়াদী প্রাচার পর্ব চলে না। মিছিল মিটিং জনসভা সবই হয়, তবে একটা নিজস্ব ভঙ্গিতে। পুরভোটের রং লাগতে শুরু হয় দিন পনেরো আগে। সাত দিন আগে থেকে তা চরমে উঠে। আর পুরবাসীর ভোট কোন দলের পক্ষে যাবে যেটা ঠিক হয় ভোটের কয়েক ঘন্টা আগে!
কার্যত, সে সব কথা ভেবেই রবিবার দিনটিকে নষ্ট হতে দেননি প্রার্থীরা। তৃণমূল, বাম, কংগ্রেস ও বিজেপি-র অধিকাংশ প্রার্থীই প্রচারে নেমেছিলেন এ দিন। এতে ছুটির দিন রোদে পুড়ে ভোট ভিক্ষা করতে বেরিয়ে অনেকেই যেমন কাহিলও হয়ে পড়েন। কেউ কেউ ভিন রাজ্যের সুতির গামছায় সদা মুখ মুছতে মুছতেও প্রচারে ডুবে রইলেন। তবে জোর ছিল বাড়ি বাড়ি প্রচারেই। কেউ ভোটের ময়দানে একেবারে আনকোরা। কেউ বা একাধিক বারের কাউন্সিলর। যে যাঁর ওয়ার্ডে নিজের মতো করে প্রচার সারলেন।
এ দিন সকাল এগারোটা নাগাদ বোলপুরের এগারো নম্বার ওয়ার্ডের বাউরি পাড়া, বিবেকানন্দ পল্লি এলাকায় দুই ভাইকে জোর কদমে প্রচার করতে দেখা গেল ছুটির রবিবারে। বিদায়ী পুরপ্রধান তথা বারো নম্বার ওয়ার্ডের তৃণমূলের কাউন্সিলর সুশান্ত ভকত ও তাঁর ভাই এগারো নম্বার ওয়ার্ডের বিদায়ী কাউন্সিলর বিনয় ভকত। দাদা ও ভাই দু’জনকে এহেন ওয়ার্ডের যৌথ প্রচারে দেখে অনেকেই হকচকিয়ে যান। নিজের ভাইয়ের ওয়ার্ডে প্রচারকে একটু অগ্রাধিকার দিতেই নাকি এই প্রচার। সন্ধ্যায় নিজের ওয়ার্ডে, এবং সকাল-দুপুরে ভাইয়ের ওয়ার্ডে যৌথ প্রচারে নেমেছেন দাদা-ভাই। সুশান্ত বাবুর সংক্ষিপ্ত কথা, ‘‘আসলে ভাইয়ের সময় খুব কম। ছুটির দিন রবিবার সকল ভোটারকে পেয়ে যাব!’’
এ দিন সিউড়ির ৩ নম্বর ওয়ার্ডে প্রচারে বেরিয়ে ছিলেন বিদ্যাসাগর সাউ। জনা পঞ্চাশেক দলীয় কর্মী নিয়ে বাড়ি বাড়ি সকাল বিকাল প্রাচার সেরেছেন তিনি। কী বললেন বাড়ি বাড়ি গিয়ে? বিদ্যাসাগরবাবু বলছেন, এই ওয়ার্ডে আগের বার কংগ্রেস জয়ী হয়ছিল কাজ হয়নি। পথবাতি, নিকাশিনালা, পানীয়জল সবেতেই পিছিয়ে রয়েছে ওয়ার্ড। আমি বলছি কাউন্সিলর ঠিকমতো কাজ করাতে পারেননি।’’
কিন্তু ছুটির দিনে প্রচারে কেন?
বিদ্যাসাগরবাবুর জবাব, ‘‘ছুটির দিনে সকলেই বাড়িতে থাকে। সকলের সঙ্গে দেখাও হয়ে যায়। তাই রোদ হলেও, বেরিয়ে পড়া।’’ অন্যদিকে সিউড়ির ১৫ নম্বর ওয়ার্ডের বিজেপি প্রার্থী দীপক দাস কিন্তু এ দিন সকালে প্রচারে নামেননি। দীপকবাবু বলেন, ‘‘সন্ধ্যায় একটি মিটিং আছে, তারপরই প্রচার নিয়ে ভাবব।’’
রবিবার বোলপুরে অবশ্য বিজেপিকে প্রচারের ময়দানে দেখা যায় সকাল থেকেই। এ দিন ১৯ নম্বর ওয়ার্ডের কাছারীপট্টি এলাকায় প্রচার সারতে দেখা গেল বিজেপি প্রার্থী নিখিল ঘোষকে। আবার সাড়ে এগারোটা নাগাদ ৬ নম্বার ওয়ার্ডের কালিমোহন পল্লি, বাঁধগোড়া এলাকায় প্রচারে গিয়েছিলেন বিজেপি প্রার্থী কিশোরকুমার দাস। প্রচারে গিয়ে শাসক দলের লোকজনের কাছে খানিকটা বাধা পেয়েছেন বলে তিনি অভিযোগও করেন।