—প্রতিনিধিত্বমূলক ছবি।
সিকিমে বেড়াতে গিয়ে নিঁখোজ বীরভূমের একই পরিবারের দুই শিশু, মহিলা-সহ আট জন। পরিবার সূত্রে খবর, ৩ অক্টোবর থেকে তাঁদের সঙ্গে যোগাযোগ করা যাচ্ছে না। ১ অক্টোবর ইলামবাজারের ভগবতী বাজার এলাকা থেকে সিকিম বেড়াতে গিয়েছিল তাঁরা।
ভগবতী বাজার এলাকার বাসিন্দা প্রাক্তন শিক্ষক মহম্মদ মহফুজ রহমান। তাঁর পরিবারের ছেলে, ছেলের বউ, নাতি-সহ একই পরিবারের আট জন সিকিম বেড়াতে গিয়েছিলেন। ১ অক্টোবর বোলপুর থেকে তাঁরা সিকিমের উদ্দেশে রওনা দেন। পরিবার সূত্রে জানা গিয়েছে, দক্ষিণ সিকিমের নাচেন এলাকায় একটি হোটেলে উঠেছিলেন তারা। সিকিমে প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের পর থেকে, অর্থাৎ ৩ অক্টোবর থেকে ওই আট জনের সঙ্গে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায় পরিবারের। নিখোঁজদের মধ্যে সোহান রাজভি (৬), রেহা তানভি (১০), রায়সা জাহান (৪), রায়সা জাহান (১৩), এসথাউদ্দিন শেখ (৪২), নাজিয়া খাতুন (৩৭), মুজাফফর আহমেদ (৪০) এবং রেবিকা মণ্ডল (৩৪)।
মহফুজ বলেন, ‘‘৩ অক্টোবর রাত ৯টার পর থেকে আর খোঁজ পাচ্ছি না। ড্রাগন নামে একটি হোটেলে ছিল। লাচুং থেকে লাচেনে আসে। তার পর আর যোগাযোগ নেই৷ আমরা খুবই দুশ্চিন্তায়। ঘুম উড়ে গিয়েছে। প্রশাসনকে জানিয়েছি। আমরা চাই, ওদের সঙ্গে একবার ফোনে কথা বলতে।’’
প্রসঙ্গত, মেঘভাঙা বৃষ্টি এবং দক্ষিণ লোনাক লেক উপচে বিপুল জলের স্রোতে বিপর্যস্ত সিকিম। বুধবার গোটা দিন জুড়ে সিকিম ও পশ্চিমবঙ্গের পাহাড়ে ধ্বংসলীলা চালিয়েছে তিস্তা। নদীর ঘোলা জলের ঘূর্ণিতে এ বার ভেসে আসছে একের পর এক দেহ। নবান্ন জানিয়েছে, বৃহস্পতিবার বিকেল ৫টা পর্যন্ত ১৮ জনের দেহ উদ্ধার হয়েছে। তাঁদের মধ্যে ছ’জনের দেহ শনাক্ত করা সম্ভব হয়েছে। তাঁদের মধ্যে চার জন সেনা জওয়ান আর বাকি দু’জন সাধারণ মানুষ।
প্রশাসনিক সূত্রে খবর, জলপাইগুড়ি জেলা থেকে মোট ১৫ জনের দেহ মিলেছে। ময়নাগুড়ি ব্লকে থেকে আটটি দেহ, জলপাইগুড়ি সদর ব্লক থেকে তিনটি, মালবাজার এবং ক্রান্তি ব্লক থেকে দু’টি করে দেহ উদ্ধার হয়েছে। সকলের দেহ ময়নাতদন্তের জন্য জলপাইগুড়ি মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়। জলপাইগুড়ির জেলা পুলিশ সুপার খান্ডবাহালে উমেশ গণপত বলেন, ‘‘এখন পর্যন্ত মোট ১৫টি দেহ উদ্ধার করা হয়েছে। তবে এঁদের নাম পরিচয় জানা যায়নি।’’ কোচবিহারের মেখলিগঞ্জে তিস্তা থেকে উদ্ধার হয়েছে দু’টি দেহ।
বুধবারই নবান্ন জানিয়েছিল, বাংলার অন্তত দু’হাজার জন পর্যটক সিকিমে আটকে পড়েছেন। যোগাযোগ করতে না পেরে স্বাভাবিক ভাবেই উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছিল তাঁদের পরিবার। নবান্ন জানিয়েছে, আটকে পড়া পর্যটকদের অনেকেই এ বার ফিরে আসতে শুরু করেছেন। তবে এখনও বাংলার অন্তত ৪৫০ জন পর্যটক লাচেন ও উত্তর সিকিমের প্রত্যন্ত এলাকায় আটকে রয়েছেন। সেই সব এলাকা এখনও বিদ্যুৎবিচ্ছিন্ন এবং যোগাযোগ ব্যবস্থাও অবরুদ্ধ হয়ে রয়েছে। উত্তরবঙ্গের বন্যা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে জলপাইগুড়িতে জাতীয় বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনীর দু’টি দল মোতায়েন করা হয়েছে। অন্য দিকে, রাজ্য বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনীও মোতায়েন তিন জেলায়— জলপাইগুড়ি, কালিম্পং, কোচবিহার।