অমর্ত্য সেন। —ফাইল ছবি।
জমি মামলা নিয়ে বিশ্বভারতীর সঙ্গে বিবাদে অমর্ত্য সেনের পাশে দাঁড়ালেন আর এক নোবেলজয়ী। নোবেলজয়ী অমর্ত্যকে ‘হেনস্থা’র প্রতিবাদ জানিয়ে ভারতীয় রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মুকে চিঠি লিখলেন অর্থনীতিবিদ জোসেফ স্টিগলিৎজ়। তিনি নিন্দা করেছেন বিশ্বভারতীর উপাচার্য বিদ্যুৎ চক্রবর্তীর নানা কার্যকলাপেরও। রাষ্ট্রপতির কাছে তাঁর আর্জি, বিশ্বভারতীর পরিদর্শক হিসাবে উপাচার্যকে নিয়ন্ত্রণ করা হোক। এ ব্যাপারে বিশ্ববিদ্যালয়ের জনসংযোগ আধিকারিক মহুয়া বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয় আনন্দবাজার অনলাইনের তরফে। কিন্তু তিনি ফোন তোলেননি।
বিশ্বভারতী এবং অমর্ত্যের মধ্যে জমি মামলা এখন বীরভূমের সিউ়ড়ি আদালতে বিচারাধীন। এর মধ্যেই অমর্ত্যের বিরুদ্ধে ‘অপমানজনক’ মন্তব্য করার অভিযোগ উঠেছে বিশ্বভারতী কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে। সম্প্রতি নোবেলজয়ীর নাম না করে তাঁকে ‘দখলদার’, ‘দোষী’, ‘অপরাধী’ বলে মন্তব্য করা হয়েছে বলে অভিযোগ তুলে সমালোচনায় সরব হন বিশ্বভারতীর আশ্রমিক থেকে শুরু করে প্রাক্তনী ও শিক্ষকদের একাংশ। আগেও অমর্ত্যকে ‘হেনস্থা’র নিন্দায় রাষ্ট্রপতিকে চিঠি দিয়েছেন দেশ-বিদেশের বহু বিশিষ্ট মানুষ। স্টিগলিৎজ়ও একই অভিযোগ তুলে রাষ্ট্রপতিকে লিখলেন, ‘‘নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ অমর্ত্য সেনকে বিশ্বভারতীর উপাচার্য বার বার প্রকাশ্যে হেনস্থা করছেন। এ ধরনের আচরণ অত্যন্ত লজ্জার। বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিদর্শক হিসাবে আপনি উপাচার্যকে নিয়ন্ত্রণ করুন।’’
বিশ্বভারতীর আশ্রমিক, প্রাক্তনীদের একাংশের দাবি, বর্তমান উপাচার্য ‘বিজেপি-ঘেঁষা’ বলেই পরিচিত। বিশ্বভারতীর বিভিন্ন অনুষ্ঠানে বিজেপিকে জড়ানোর অভিযোগ উঠেছে তাঁর বিরুদ্ধে। উল্টো দিকে, অমর্ত্য পরিচিত কেন্দ্রের নরেন্দ্র মোদী সরকারের বিভিন্ন নীতির ‘সমালোচক’ হিসাবে। নোবেলজয়ীকে ‘উচ্ছেদের চেষ্টা’র পিছনে সেই বিষয়টিও একটি বড় কারণ বলে মনে করেন বিশ্বভারতীর অনেকে। ঘটনাচক্রে, অমর্ত্যের পাশে দাঁড়ানো স্টিগলিৎজ়েরও মোদী সরকারের নিন্দা করার অতীত-নজির রয়েছে। অতিমারি কালে কোভিড মোকাবিলায় ব্যর্থতা এবং হঠাৎ ডাকা লকডাউনে পরিযায়ী শ্রমিকদের দুর্দশার জন্য কেন্দ্রীয় সরকারকে বিঁধেছিলেন আমেরিকার এই অর্থনীতিবিদ। প্রধানমন্ত্রী মোদীর সিদ্ধান্ত গ্রহণের প্রক্রিয়াকে আমেরিকার প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প, ব্রাজিলের প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট জইর বোলসোনারোর ‘স্বৈরাচারের’ সঙ্গে তুলনা করতেও পিছপা হননি স্টিগলিৎজ়। ভারতীয় অর্থনীতির স্বার্থেই সরকারের ‘মুসলিম-বিরোধী অবস্থান’ বদলানোরও পরামর্শ দিয়েছিলেন তিনি। শুধু স্টিগলিৎজ়ই নন, উপাচার্যের বিরুদ্ধে পদক্ষেপের আর্জি জানিয়ে রাষ্ট্রপতিকে চিঠি দিয়েছেন আর এক অর্থনীতিবিদ অমিয়কুমার বাগচীও।