ইনসাফ যাত্রার মিছিল। মঙ্গলবার দুপুরে মহম্মদবাজারে এবং (নীচে) রাতে জেলা সদর সিউড়িতে। ছবি: পাপাই বাগদি ও সৌরভ চক্রবর্তী।
বীরভূমের মাটি জানোয়ারে চারণভূমিতে পরিণত হয়েছে। ইনসাফ যাত্রা ১৯তম দিনে এ ভাবেই তৃণমূলকে আক্রমণ করলেন সিপিএমের যুব সংগঠন ডিওয়াইএফের রাজ্য সম্পাদক মীনাক্ষী মুখোপাধ্যায়। পাশাপাশি তৃণমূল ও বিজেপির আঁতাত নিয়েও প্রশ্ন তুললেন তিনি। জবাবে পাল্টা আক্রমণ শানিয়েছে তৃণমূল ও বিজেপিও।
রাজ্য জুড়ে আয়োজিত ‘ইনসাফ যাত্রা’র বীরভূম পর্বের এ দিন সূচনা হল। এখানেই মীনাক্ষী তৃণমূলকে আক্রমণ করে বলেন, “বীরভূম জেলার পরিচয় ছিল কৃষ্টি, শান্তিনিকেতন, শিক্ষা, সংস্কৃতি। কিন্তু গত কয়েক বছরে বীরভূমে এক আতঙ্কের পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছে। বীরভূমের সংস্কৃতির মাটিকে জানোয়ারের চারণভূমিতে পরিণত করা হয়েছে”। এর পরেই তৃণমূলের জেলা সভাপতি অনুব্রত মণ্ডল আর জেলা পরিষদের সভাধিপতি কাজল শেখকে একই বন্ধনীতে রেখে মীনাক্ষী বলেন, “আগে বাঘ ছিল, এখন ফেউ এসেছে। কিন্তু আমরা বলি, বাঘই হোক আর ফেউই হোক, মানুষের বসতিতে তাদের কোনও স্থান নেই।” পাল্টা জবাব দিতে দেরি করেনি তৃণমূলও। তৃণমূলের জেলা সহ সভাপতি মলয় মুখোপাধ্যায় বলেন, “৩৪ বছর ধরে বাংলা তথা বীরভূমের মানুষ ধূর্ত শিয়ালের শাসন দেখেছে। সেখান থেকে মুক্তি পেয়ে এখন সুস্থ শ্বাস নিচ্ছেন তাঁরা। ওঁরা এখন এ সব নিয়ে না ভেবে আরও হোমওয়ার্ক করুক।”
শূন্যপদে স্বচ্ছ ও স্থায়ী নিয়োগ, রাজ্যের সমস্ত বন্ধ কলকারখানা খোলা, নয়া জাতীয় শিক্ষানীতি বাতিল, ডেউচা-পাঁচামিতে আদিবাসীদের উচ্ছেদ করে খোলা মুখ কয়লাখনির কাজ বন্ধ করা, একশো দিনের কাজ ২০০ দিন করা, সিউড়ি সদর হাসপাতালের পরিষেবা উন্নত করা, বীরভূমে নদীগর্ভ থেকে যথেচ্ছ বালি তোলার মতো একগুচ্ছ দাবিকে সামনে রেখে দিনভর বীরভূমের নানা প্রান্তে পদযাত্রায় অংশগ্রহণ করেন ডিওয়াইএফের জেলা ও রাজ্য নেতৃত্ব। মীনাক্ষীর পাশাপাশি ছিলেন রাজ্য সভাপতি ধ্রুবজ্যোতি সাহা-সহ সংগঠনের রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলীর বহু সদস্য।
এ দিন সাঁইথিয়ার শশীভূষণ দত্ত বালিকা বিদ্যালয়ের সামনে থেকে পদযাত্রা শুরু করেন মীনাক্ষী। ইউনিয়ন বোর্ড মোড়, নতুন ব্রিজ, বাগডাঙ্গা মোড় হয়ে তা শেষ হয় দেরিয়াপুরে। সাঁইথিয়া থেকে পদযাত্রা এসে পৌঁছয় মহম্মদবাজারে। মহম্মদবাজারের আঙ্গারগড়িয়া থেকে দুপুর দুটো নাগাদ শুরু হয় পদযাত্রা। সেখান থেকে পায়ে হেঁটে পটেলনগর হয়ে মহম্মদবাজার বাস স্ট্যান্ডে এসে উপস্থিত হয় মিছিল। সেখান থেকেই সিউড়িতে এসে উপস্থিত হয় মিছিল।
তিলপাড়া গ্রাম পঞ্চায়েতের ভিতর দিয়ে কয়েক হাজার কর্মী সমর্থক হাতে দলীয় পতাকা ও জ্বলন্ত মশাল নিয়ে পায়ে হেঁটে এসপি মোড়, বেণীমাধব মোড়, বাস স্ট্যান্ড হয়ে পাইকপাড়ায় এসে পৌঁছায় পদযাত্রা। রাস্তার প্রত্যেকটি মোড়ে দলীয় ছাত্র সংগঠন, সরকারি কর্মচারী সংগঠন, শিক্ষক সংগঠন, মহিলা সংগঠনের সদস্যেরা উপস্থিত থেকে ফুল ছুড়ে, স্লোগান দিয়ে মিছিলকে অভ্যর্থনা জানায়। জনসভার মঞ্চে সংগঠনের নেতাদের পাশাপাশি উপস্থিত ছিলেন প্রাক্তন বাম বিধায়ক ধীরেন লেট ও বিশিষ্ট শিল্পী রতন কাহার।
এ দিনের জনসভা থেকে প্রত্যেক বক্তাই ৭ জানুয়ারি কলকাতায় ডিওয়াইএফের ডাকা ব্রিগেড সমাবেশ সফল করার ডাক দেন। পাশাপাশি তৃণমূল ও বিজেপির আঁতাত নিয়েও সরব হন তাঁরা। মীনাক্ষী বলেন, “বীরভূমের বিজেপি জেলা সভাপতি ধ্রুব সাহা তো তৃণমূলের বিরোধীতা করার কথা বলেন। তা হলে সাত কোটি টাকার গাড়িতে চড়েন কী ভাবে? মুকুল রায় বিজেপি থেকে নির্বাচনে জিতে তৃণমূলে গেল, কিন্তু বিধানসভার স্পিকার কি চোখে দেখতে পান না? আসলে দুর্নীতি করতে হলে উপর থেকে নীচ পর্যন্ত সর্বস্তরের সহায়তা লাগে।” ধ্রুব বলেন, “ওঁরা আগে বাংলায় তৃণমূলের অন্যায়ের বিরুদ্ধে ইনসাফ করুক। এখানে কুস্তি আর দিল্লিতে দোস্তি চলতে পারে না। আর সাত কোটিতে কতগুলি শূন্য হয়, সেটা বোধহয় ওঁদের জানা নেই।”