রঘুনাথপুরের কাছারিপাড়া সর্বজনীনের প্রতিমা। নিজস্ব চিত্র
এ বারও নজর কাড়তে চলেছে রঘুনাথপুর মহকুমার কয়লা শিল্পাঞ্চলের পুজো।
কয়লাখনি এলাকা বলে পরিচিত নিতুড়িয়া ব্লকের মূলত চারটি পুজোয় ভিড় সামলাতে কার্যত নাজেহাল হতে হয় পুলিশকে। এ বারও পঞ্চমী থেকেই দর্শকদের ঢল নেমেছে মণ্ডপগুলিতে। ভামুরিয়ার বাথানেশ্বর সর্বজনীনের থিম রুদ্রেশ্বরের রুদ্রাণী। শিল্পী দীপক দাস জানাচ্ছেন, ইউনেস্কোর হেরিটেজ তকমা পাওয়া তেলঙ্গানার পালাম্পেট গ্রামের কাকাতীয়া সাম্রাজ্যের রামাপ্পা শিবমন্দিরের আদলে তৈরি করা হয়েছে মণ্ডপ। প্রতিমা গড়া হয়েছে মানভূম এলাকা থেকে পাওয়া দুর্গামূর্তির আদলে। যে মূর্তি কলকাতায় জাদুঘরে সংরক্ষিত। উদ্যোক্তারা জানাচ্ছেন, এ বছর রাজ্যের দুর্গাপুজোকে হেরিটেজ তকমা দিয়েছে ইউনেস্কো। তাই মণ্ডপ ও প্রতিমায় তুলে ধরা হচ্ছে হেরিটেজ তকমা পাওয়া মন্দির ও প্রতিমাকে।
নিতুড়িয়া দুবেশ্বরী সর্বজনীনের মণ্ডপ হয়েছে ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়ালের আদলে। প্রতিমার ক্ষেত্রে তাদের থিম রবীন্দ্রনাথের কবিতা, ‘ডান হাতে তোর খড়্গ জ্বলে, বাঁ হাত করে শঙ্কাহরণ, দুই নয়নে স্নেহের হাসি, ললাটনেত্র আগুনবরন’। কমিটির কর্মকর্তা নবনী চক্রবর্তীর দাবি, প্রতিমা সজ্জায় অভিনবত্বই অন্যদের থেকে তাদের পৃথক করছে।
রঘুনাথপরের প্রাক্তন বিধায়ক পূর্ণচন্দ্র বাউড়ির পুজো সড়বড়ি গ্রাম সর্বজনীনের থিম ‘আলো, অন্ধকার’। পূর্ণের দাবি, ‘‘সমাজের অন্ধকারময় দিক থেকে আলোয় ফেরার দিশা— এই বার্তাই দেওয়া হয়েছে।” প্রতিমা থেকে অস্ত্র সবই মাটির তৈরি। পারবেলিয়ার আর একটি পুজোর থিম রাজবাড়ির অন্দর মহল।
কয়লাখনি অঞ্চলের সঙ্গে টেক্কা দিচ্ছে রঘুনাথপুর, আদ্রাও। রাশিয়া-ইউক্রেনে যুদ্ধ চলছে। বিশ্বের আরও কয়েকটি দেশও যুদ্ধংদেহী। এই আবহেই শান্তির বার্তা দিতে বৌদ্ধদের মন্দির প্যাগোডার ধাঁচে মণ্ডপ গড়ছে আদ্রার ১০৩ বছরে পা দেওয়া বাঙ্গালী সমিতি সর্বজনীন। সেখানকার সদস্য দেবাশিস দে বলেন, ‘‘বর্তমান বিশ্বে শান্তি একান্ত কাম্য। তাই বৌদ্ধদের প্যাগোডাকেই থিম নির্বাচন করা হয়েছে।”
আদ্রার কমলাস্থান সর্বজনীনের থিম স্বাধীনতার ৭৫ বছর। সম্পাদক বিশ্বজিৎ চট্টোপাধ্যায় জানান, মণ্ডপের ভিতর জাতীয় পতাকার ত্রিবর্ণ রঙে সাজানো হয়েছে। আলোসজ্জায় রাতে মন্ডপের পুরোটাই জাতীয় পতাকার রঙে সেজে উঠছে। রঘুনাথপুর শহরের মিশন রোড সর্বজনীনের থিম হারিয়ে যাওয়া পাট শিল্প। সম্পাদক মধুসূদন পাল বলেন, ‘‘এক সময়ে বাংলা পাট শিল্পে সমৃদ্ধ ছিল। বর্তমানে সেই শিল্প বেহাল। পাটশিল্পের পুনরুজ্জীবনের আশা নিয়েই আমাদের পুজো।’’