ফাইল চিত্র।
রাজ্যের সমস্ত পুজো মণ্ডপকে ‘নো এন্ট্রি’ জোন ঘোষণা করে দর্শকদের ঢোকার ক্ষেত্রে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে কলকাতা হাইকোর্ট। সোমবার আদালতের নির্দেশ ছোট মণ্ডপের ক্ষেত্রে ৫ মিটার এবং বড় মণ্ডপের ক্ষেত্রে ১০ মিটার দূরত্বে ব্যারিকেড দিতে হবে। মঙ্গলবার জেলার গুটি কয়েক পুজোকমিটি নির্দিষ্ট স্থানে ব্যারিকেড দিয়ে সেই নির্দেশ পালনের প্রস্তুতি শুরু করেছে। সেই তালিকায় বোলপুর ও সাঁইথিয়া পুর এলাকার বেশ কয়েকটি পুজো কমিটি রয়েছে। কিছু জায়গায় জায়েন্ট স্ক্রিন লাগিয়ে ভার্চুয়ালি পুজো দেখানোর ব্যবস্থা করা হলেও বাকিরা এখনও অপেক্ষায়। কারণ, রায় পুনর্বিবেচনার আর্জি নিয়ে ফোরাম ফর দুর্গোৎসব কমিটি হাইকোর্টের দ্বারস্থ হয়েছে। জেলাপুলিশের এক কর্তা বলছেন, “আদালতের নির্দেশ যাতে সব পুজো কমিটি মেনে চলে তার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। কী করতে হবে তা জানিয়ে দেওয়া হয়েছে কমিটিগুলিকে।” তবে, রাস্তা ঘেঁষে থাকা বড় পুজোগুলির ক্ষেত্রে ব্যারিকেড কী ভাবে দেওয়া হবে তা নিয়ে ধন্দে রয়েছে জেলার বেশ কিছু পুজো কমিটি।
রামপুরহাট শহরে অন্যতম বড় পুজো রামপুরহাট নবীন ক্লাবের। এই ক্লাবের সম্পাদক উজ্জ্বল ধীবর বলেন, ‘‘এ বছর করোনা আবহে মানুষ নানা দুশ্চিন্তার মধ্যে আছে। তার মধ্যেই পুজোর কটা দিন একটু অন্যরকম কাটাতে, আনন্দ দিতে পুজোর আয়োজন করা হয়েছিল।’’ উজ্জ্বলবাবুর দাবি, ‘‘অন্যান্য বছরের থেকে বাজেটে কাটছাঁট করে মণ্ডপ সজ্জা, আলোক সজ্জা করা হয়েছিল। মণ্ডপে সরকারি বিধি নিষেধ মেনে দর্শনার্থীদের জন্য স্যানিটাইজার, মাস্ক কেনা হয়েছিল। মুখ্যমন্ত্রীর হাত দিয়ে পুজোর উদ্বোধন হয়। আলোক সজ্জা করা হয়েছে। কিন্তু কলকাতা হাইকোর্টের নির্দেশ মানতে গেলে নতুন করে মণ্ডপ সজ্জার ব্যবস্থা করতে হবে।’’ তিনি বলেন কী ভাবে কি করা যায় তাই নিয়ে চিন্তায় আছি।
অন্যদিকে, রামপুরহাট পুরসভার ৮ নম্বর ওয়ার্ডের কালিসাঁড়াপাড়া আমতলা দুর্গোৎসব কমিটি এ বছর অকাল বোধন থিমে মণ্ডপ সজ্জা করেছে। মণ্ডপের ভিতরে থিমের কাজ শেষ হয়ে গিয়েছে। পুজো উদ্যোক্তাদের মধ্যে অঞ্জন দে বলেন, ‘‘হাইকোর্টের নির্দেশ মেনে মণ্ডপ থেকে ৫ মিটার বা ১০ মিটার দূরত্ব বিধি করীর জন্য জায়গা পাওয়া খুবই কঠিন।’’ রামপুরহাট হাটতলাপাড়া সার্বজনীন দুর্গোৎসব কমিটির পক্ষে অক্ষয়কুমার প্রামাণিক বলেন, ‘‘এমনিতেই স্বল্প পরিসরে আমাদেরকে মণ্ডপ সাজাতে হয়। সে ক্ষেত্রে হাইকোর্টের নির্দেশ মেনে দর্শনার্থীদের জন্য নো এন্ট্রির দূরত্ব বিধি করতে নতুন করে আবার ব্যবস্থা নিতে হবে।’’
অন্যদিকে, রামপুরহাট শহর ঘুরলে দেখা যাবে বেশ কিছু বড় পুজো কমিটি শহরের প্রধান রাস্তার ধারে পুজো করে থাকেন। অনেক সময় তাদের মণ্ডপ সজ্জার জন্য রাস্তা দখল করে বাঁশ পুঁততে হয়। রামপুরহাট দুমকা রোড, দেশবন্ধু রোড, ব্যাঙ্ক রোড, কাছারি পট্টি রোড, সানঘাটাপাড়া রোড, কামারপট্টি যাওয়ার রাস্তার ধারে এই সমস্ত পুজো কমিটিগুলির পক্ষে হাইকোর্টের নির্দেশ মেনে দর্শনার্থীদের জন্য ১০ ফুট বা ৫ ফুট দূরত্বে নো এন্ট্রি জোন করতে হলে রাস্তা দখল হয়ে যাবে অনেকটাই। তবে ওই পুজোগুলির আয়োজকেরা জানান, তাঁরা হাইকোর্টের নির্দেশ পালন করার প্রস্তুতি নিচ্ছেন। তবে স্থানীয় প্রশাসনকে তাঁদের অসুবিধার কথা জানাবেন। জেলা পুলিশের এক আধিকারিক জানান, হাইকোর্টের নির্দেশ মেনে চলার জন্য পুজোর উদ্যোক্তাদের নিয়ে মঙ্গলবার বিকেলে বৈঠক করা হয়েছে। কিন্তু দর্শকরা সচেতন না হলে কতটা শৃঙ্খলা থাকবে তাতে প্রশ্নচিহ্ন থাকছেই।