Durga Puja 2023

কৃত্রিম রঙে নয়, শিল্পীর হাতের ছোঁয়ায় প্রকৃতি থেকে সংগ্রহ করা রং-বেরঙের খড়ে সাজছে দুর্গা প্রতিমা ও মণ্ডপ

কয়েক দিনের মধ্যেই প্রতিমা তৈরি করে পুজো উদ্যোক্তাদের হাতে তুলে দিতে হবে। মণ্ডপ সাজানোর কাজও সেরে ফেলতে হবে পঞ্চমীর আগেই। তাই এখন দম ফেলার ফুরসত নেই সমরেন্দ্রনাথ মিশ্র ও তাঁর সহযোগীদের।

Advertisement

আনন্দবাজার অনলাইন সংবাদদাতা

বাঁকুড়া শেষ আপডেট: ১১ অক্টোবর ২০২৩ ২৩:৪৩
Share:

প্রতিমা থেকে মণ্ডপ সজ্জার বিভিন্ন অলঙ্করণ তৈরি করে তাক লাগাচ্ছেন বাঁকুড়ার মালিয়াড়া গ্রামের শিল্পী সমরেন্দ্রনাথ মিশ্র।

কোনও কৃত্রিম রঙ নয়, খড়ের মাঝে লুকিয়ে থাকা রঙকে প্রয়োজন মতো ব্যবহার করে প্রতিমা থেকে মণ্ডপ সজ্জার বিভিন্ন অলঙ্করণ তৈরি করে তাক লাগাচ্ছেন বাঁকুড়ার মালিয়াড়া গ্রামের শিল্পী সমরেন্দ্রনাথ মিশ্র। আর কয়েক দিনের মধ্যেই প্রতিমা তৈরি করে তা পুজো উদ্যোক্তাদের হাতে তুলে দিতে হবে। মণ্ডপ সাজানোর কাজও সেরে ফেলতে হবে পঞ্চমীর আগেই। তাই এখন দম ফেলার ফুরসত নেই সমরেন্দ্রনাথ মিশ্র ও তাঁর সহযোগীদের।

Advertisement

—নিজস্ব চিত্র।

মনের খেয়ালে এক সময় নিজেই শিখেছিলেন আঁকা। সেই আঁকার নেশা বছর চল্লিশ আগে আচমকাই মোড় নেয় অন্য দিকে। কৃত্রিম রঙে ক্যানভাসে যে ছবি ফুটে ওঠে, সেই ছবিকেই কোনও রঙ ব্যবহার না করে খড়ের সাহায্যে ফুটিয়ে তোলার নেশায় মেতে ওঠেন বাঁকুড়ার বড়জোড়া ব্লকের মালিয়াড়া গ্রামের সমরেন্দ্রনাথ। নিরন্তর গবেষণা ও নিরলস অধ্যাবসায়ে নতুন সেই শিল্পে রীতিমত সাফল্য মিলতে শুরু করে। গ্রামে গ্রামে ঘুরে ঘুরে চলে বিভিন্ন রঙের খড় সংগ্রহের কাজ। বছরভর সেই খড় সংগ্রহ করে তা নিজের বাড়িতেই জমিয়ে রাখেন সমরেন্দ্রনাথ। পরে সেই খড়ের আঁশ সংগ্রহ করে সেগুলিকে প্রয়োজন মতো ইস্ত্রি করে তা কাগজের উপর চিটিয়ে দেন। পরে সেই খড় সমেত কাগজ কখনও থার্মোকলের মূর্তি, কখনো আবার কাঠগুঁড়োর মণ্ড দিয়ে তৈরি প্রতিমার উপর বিশেষ কৌশলে চিটিয়ে ফুটিয়ে তোলেন বিশেষ রূপ। অল্প সময়ের মধ্যেই সমরেন্দ্রনাথের এই বিশেষ শিল্প প্রতিভা ছড়িয়ে পড়ে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে। বিশেষ এই শিল্পকলায় নিজেদের মণ্ডপ সাজাতে দুর্গাপুজার সময় এ রাজ্যের দুর্গাপুর, আসানসোল, কলকাতা ছাড়াও পার্শ্ববর্তী রাজ্যের বোকারো, জামশেদপুর-সহ বিভিন্ন জায়গায় ডাক পড়ে সমরেন্দ্রনাথের। প্রশংসাও মেলে। এ বার একই সঙ্গে প্রতিমা ও মণ্ডপসজ্জার বরাত মিলেছে বাঁকুড়া শহরের পাঠকপাড়া সর্বজনীনের। মালিয়াড়া গ্রামে নিজের ওয়ার্কশপে বসে সমরেন্দ্রনাথ প্রায় শেষ করে ফেলেছেন প্রতিমা তৈরির কাজ। শেষ মূহুর্তের কাজ চলছে মণ্ডপসজ্জার অলঙ্করণ তৈরির।

সমরেন্দ্রনাথ বলেন, ‘‘আমি খড়ের যত কাজ করেছি, কোথাও কৃত্রিম রঙের এক ফোঁটা ব্যবহার করিনি। কিন্তু তার জন্য প্রতিমায় কোথাও রঙের অভাব নেই। এক সময় গ্রামে গ্রামে ঘুরে বিভিন্ন রঙের খড় সংগ্রহ করতাম। এখন খড়ে কী ভাবে প্রাকৃতিক ভাবে রঙ ধরাতে হয়, তা আমার জানা। কখনও শিশিরে খড় ফেলে রেখে, আবার কখনও বিকেলের হালকা ঝিমিয়ে পড়া রোদে বর্ষায় ভেজা খড় শুকিয়ে খড়ে বিভিন্ন রকমের রং ধরাতে হয়। এই খড় দিয়ে এত নিখুঁত কাজ করা যায় যে, দূর থেকে দেখলে যে কেউ বলবে যে, কাজগুলি সোনার তৈরি।’’ পুজো শেষে নিজের তৈরি সপরিবার এই দুর্গা প্রতিমা সংরক্ষণ করতে চান সমরেন্দ্রনাথ। পাশাপাশি নতুন এই শিল্প নিয়ে গবেষণালব্ধ জ্ঞান শিল্পী ছড়িয়ে দিতে চান নতুন প্রজন্মের মধ্যে। কিন্তু শিল্পী সমরেন্দ্রনাথের আক্ষেপ, ‘‘খড়ের এই শিল্পকলা বেশ কষ্টসাধ্য ও সময়সাপেক্ষ। তাই নতুন প্রজন্ম এ সবে তেমন আগ্রহী নয়। দু’একজন নতুন প্রজন্মের যারা এগিয়ে আসে, তাদের মনপ্রাণ দিয়ে এই শিল্পকলা শেখানোর চেষ্টা করি। আমি চাই আমার মৃত্যুর পরেও যেন এই শিল্পকলা বেঁচে থাকে।’’

Advertisement

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement