HS Students

সামনে উচ্চ মাধ্যমিক, তার চেয়ে বড় ‘পরীক্ষা’ সংসার! স্কুলে না গিয়ে খোল তৈরিতে ব্যস্ত মিঠুন

পুরুলিয়ার এই ঘাঘরা গ্রামের বাসিন্দাদের মধ্যে ৬-৭টি পরিবারের রুটিরুজি চলে ঢোল, মাদল, খোল, ধামসা ইত্যাদি বাদ্যযন্ত্র বানিয়ে। নারায়ণ দাসের ছেলে মিঠুনও তাঁদের মধ্যে এক জন।

Advertisement

সমীরণ পাণ্ডে

পুরুলিয়া শেষ আপডেট: ০৭ নভেম্বর ২০২২ ২১:৩৩
Share:

ব্যস্ত হাতে খোল সারাই। —নিজস্ব চিত্র।

আর কয়েক মাস পর উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষা। কিন্তু এই স্কুলে যাওয়া এবং বেশি করে পড়াশোনায় মন দেওয়ার সময় অন্য কাজে ব্যস্ত দ্বাদশ শ্রেণির পড়ুয়া মিঠুন দাস। আসলে পেট বড় বালাই! বাড়ির আর্থিক সঙ্গতি নেই। তাই স্কুলে যাওয়ার সময় বাড়ির বারান্দায় বসে খোল, ঢোল ইত্যাদি বানিয়ে চলে বছর আঠারোর ছেলেটি।

Advertisement

পুরুলিয়ার জয়পুর থানা এলাকার ঘাঘরা গ্রামের বাসিন্দা মিঠুন। ঘাঘরা উচ্চ বিদ্যালয়ের ছাত্রটি ব্যস্ত বরাতে পাওয়া খোল সারাতে। সামনে তো পরীক্ষা। স্কুলে না গিয়ে এই কাজ কেন? ছাত্রের জবাব, ‘‘স্কুলে কার না যেতে ইচ্ছে করে! কিন্তু কী করব...’’ তার সংযুক্তি, ‘‘আমারও তো ইচ্ছে হয় স্কুলে যাই। এ বছর তো উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষা দেব। কিন্তু বাড়িতে অভাব। করোনার সময় আমাদের হাতে একটাও কাজ ছিল না। দু’বেলা দু’মুঠো খাবারের জোগাড় করতে পারিনি আমরা। কালীপুজো সময় থেকে যখন সামান্য কিছু কাজের সুযোগ পেয়েছি। এটা আর কেমন করে হাতছাড়া করি বলুন!’’ গোটা কয়েক খোল নিয়ে বাড়ির উঠোনে বসে উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষার্থীটি বলে চলে, ‘‘এই বরাতের কাজ এসেছে শিলিগুড়ি থেকে। তাড়াতাড়ি পাঠাতে হবে। সবগুলো করে ফেলতে পারলে বাড়ির অনেকটা সুবিধা হবে। স্কুলে যাওয়ার ইচ্ছে থাকলেও কাজ ফেলে স্কুলে যেতে পারছি না।’’ পড়াশোনাও যে সে ভাবে কিছু হচ্ছে না, জানিয়ে দেয় সে।

পুরুলিয়ার এই ঘাঘরা গ্রামের বাসিন্দাদের মধ্যে ৬-৭টি পরিবারের রুটিরুজি চলে ঢোল, মাদল, খোল, ধামসা ইত্যাদি বাদ্যযন্ত্র বানিয়ে। নারায়ণ দাসের ছেলে মিঠুনও তাদের এক জন। ছেলেকে নিয়ে নারায়ণ বলেন, ‘‘আমাদের চাষের জমি নেই বললেই চলে। এই কাজটুকুই সম্বল। তা-ও সারা বছর তো এই কাজের বরাত মেলে না।’’ এখন তো বিভিন্ন সরকারি সাহায্য পাওয়া যায়। সে সব পান না? নারায়ণের উত্তর, ‘‘শিল্পীভাতা বা কোনও সরকারি সাহায্য পাই না। অন্তত সরকারি ঋণ যদি পেতাম, তা হলেও সুবিধা হত। ছেলেটাকে ভাল ভাবে মানুষ করতে পারতাম।’’ ছেলেকে স্কুলে না পাঠিয়ে কাজ করতে বসিয়ে রাখার আক্ষেপ ঝরে পড়ে বাবার গলায়।

Advertisement

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement