গরহাজির দুধকুমার, ভিড় টানলেন রূপা

দলীয় প্রার্থীদের প্রচারে এত দিন তাঁকে শহরের বিভিন্ন ওয়ার্ডে ভোটারদের দোরগোড়ায় পৌঁছতে দেখা গিয়েছে। সোমবার সকালে সেই সাঁইথিয়াতেই নেতা-কর্মী-সমর্থকেরা মাতলেন দলের তারকা নেত্রী রূপা গঙ্গোপাধ্যায়ের রোড-শোকে ঘিরে। আর ঠিক সে দিনই শহরে দেখা গেল না বিজেপি-র সদ্য প্রাক্তন জেলা সভাপতি দুধকুমার মণ্ডলকে! অথচ তিনিই সাঁইথিয়ায় পুরভোটে দলের দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতা।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

সাঁইথিয়া শেষ আপডেট: ২১ এপ্রিল ২০১৫ ০০:৪৫
Share:

সাঁইথিয়ায় রূপা গঙ্গোপাধ্যায়ের রোড-শো’য় রয়েছেন বিজেপির জেলা আহ্বায়ক অর্জুন সাহা। দেখা গেল না দুধকুমার মণ্ডলকে। ছবিটি তুলেছেন অনির্বাণ সেন।

দলীয় প্রার্থীদের প্রচারে এত দিন তাঁকে শহরের বিভিন্ন ওয়ার্ডে ভোটারদের দোরগোড়ায় পৌঁছতে দেখা গিয়েছে। সোমবার সকালে সেই সাঁইথিয়াতেই নেতা-কর্মী-সমর্থকেরা মাতলেন দলের তারকা নেত্রী রূপা গঙ্গোপাধ্যায়ের রোড-শোকে ঘিরে। আর ঠিক সে দিনই শহরে দেখা গেল না বিজেপি-র সদ্য প্রাক্তন জেলা সভাপতি দুধকুমার মণ্ডলকে! অথচ তিনিই সাঁইথিয়ায় পুরভোটে দলের দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতা। রূপার রোড-শোয়ে দুধকুমারের আচমকা এই ‘অনুপস্থিতি’কে কেন্দ্র করেই জেলা বিজেপি নেতৃত্বের গোষ্ঠী-দ্বন্দ্ব ফের প্রকট হয়েছে।

Advertisement

কেন এলেন না দুধকুমার?

দল তাঁকে ডাকেনি বলে তোপ দেগেছেন দুধকুমার। তাঁর জায়গায় জেলায় দলের যিনি হাল ধরেছেন, বিজেপি-র জেলা আহ্বায়ক অর্জুন সাহার পাল্টা দাবি, ‘‘দুধকুমারদাকে খবর দেওয়া হয়েছিল। উনি তো নিজেই আগে জানিয়েছিলেন, ব্যক্তিগত কাজ থাকায় এ দিনের রোড-শোয়ে থাকতে পারবেন না!’’ অর্জুনবাবু মুখে যা-ই বলুন না কেন, দুধকুমার কিন্তু কোনও রকম রাখঢাক না রেখেই স্বভাবসিদ্ধ ভঙ্গিতে সোজাসাপ্টা বলেন, ‘‘এ দিনের রোড-শো নিয়ে আমাকে কেউ কিছু জানায়নি। তাই আমি যাইনি। অর্জুনবাবু এ রকমটা বলে থাকলে ডাঁহা মিথ্যা কথা বলেছেন!’’ আর পাঁচ দিন পরেই পুরভোট। তার আগে নেতৃত্বের এই কোন্দল দলেরই ক্ষতি ডেকে আনবে বলে আশঙ্কা করছেন বিজেপি-র নিচুতলার কর্মী-সমর্থকেরা। অন্য দিকে, সুযোগের সদব্যবহার করে লোকসভা ভোটের ফলে এগিয়ে থাকা বিজেপি-র দ্বন্দ্বকে কাজে লাগানোর চেষ্টা শুরু করেছে শাসকদল এবং বামেরাও।

Advertisement

অবশ্য পরপর দু’দিন সিউড়ি ও সাঁইথিয়ায় রূপাকে দিয়ে রোড-শো করিয়ে অনেকটাই চাঙ্গা হওয়ার চেষ্টা করছে বিজেপি জেলা নেতৃত্ব। রবিবার সন্ধ্যায় সাঁইথিয়ায় যেখানে রোডশো শেষ করেছিলেন পুর ও নগর উন্নয়ন মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম, সোমবার সকালে বিজেপি নেত্রী রূপা সেখান থেকেই রোডশো শুরু করেন। ফিরহাদের রোডশোয়ে সামিল হয়েছিলেন হাজার সাতেক মানুষ। রূপার সঙ্গে এ দিন বিজেপির হাজার খানেক কর্মী-সমর্থক ছিল।

রূপা গঙ্গোপাধ্যায়ের রোডশো আছে, এলাকায় এমন খবর ছিল আগে থেকেই। সেই মতো এ দিন সকাল থেকেই রূপাকে দেখার জন্য স্থানীয়রা অনেকেই রাস্তার দু’ধারে ভিড় করেন। নির্ধারিত সময়ের প্রায় দেড় ঘন্টা দেরিতে আসেন রূপা। গাড়ি থেকে নামতেই দলের নেতা-কর্মীর মধ্যে তাঁর কাছাকাছি যাওয়ার একটা হিড়িক পড়ে যায়। চোখের সানগ্লাসটা মাথার উপর তুলে রূপা ভিড় সামলে রাস্তার ধারের শনি মন্দিরে প্রণাম করেন। রাস্তার দু’ধারে, বাড়ির ছাদে অজস্র মানুষ তাঁদের প্রিয় অভিনেত্রীকে দেখার জন্য ভিড় করেছিলেন। মুরাডিহি কলোনীর মাঠ থেকে ইউনিয়ন বোর্ডের দলীয় কার্যালয় পর্যন্ত প্রায় তিন কিলোমিটার পথ যেতে তাঁর ঘন্টা দেড়েক সময় লাগে।

ভিড় সামলাতে রূপা নিজেই মাঠে নামেন। কেন রোডশোতে এলেন না দুধকুমার, সে প্রশ্ন এড়িয়ে যান তিনি। বিজেপির নেত্রী বলেন, ‘‘রাজ্যজুড়ে সন্ত্রাস চলছে। শাসকদল কলকাতায় কিভাবে সন্ত্রাস করেছে সেতো আপনারা দেখেছেন। কলকাতার বাইরে যে সব জায়গায় পুরভোট হবে, শাসকদল সে সব জায়গাতেও একই কায়দায় সন্ত্রাস চালাবে। এ ধরনের টর্চার হওয়ার চান্স আছে।’’

রাজ্যে নারী নির্যাতন প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘‘রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী নিজে একজন নারী। এ প্রশ্ন তাঁকেই করা উচিত। তাঁর রাজ্যে এরকম হচ্ছে। তাঁর হাতের তৈরি ছেলেরা এটা করছে।’’ সাঁইথিয়া আট নম্বর ওয়ার্ডের বিজেপি প্রার্থী সুশান্ত রায়কে বদলি করে দেওয়ার কথা বলেছিলেন তৃণমূল সভাপতি অনুব্রত। সে প্রসঙ্গে রূপা এ দিন বলেন, ‘‘সুশান্তবাবুর অপরাধ উনি বিজেপি করছেন। গত ১৭ বছর ধরে উনি শিক্ষকতা করছেন। এতদিন তো উনি স্কুল যান কিনা সে নিয়ে কোনও প্রশ্ন ওঠেনি।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement