সাত দিনের হেফাজত শেষে আজ দুবরাজপুর আদালতে হাজিরা কেষ্ট। — ফাইল চিত্র।
খুনের চেষ্টার মামলায় সাত দিনের হেফাজত শেষে আজ, মঙ্গলবার অনুব্রত মণ্ডলকে দুবরাজপুর আদালতে হাজির করানো হবে। তার আগে সোমবারই এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেটের (ইডি) আর্জি মেনে ওই মামলার এফআইআর এবং মামলা সংক্রান্ত আদালতের নির্দেশের ‘সার্টিফায়েড’ কপি’ দিতে রাজি হল দুবরাজপুর আদালত।
তবে, এই আবেদনের উপরে এ দিন ইডি এবং সরকার পক্ষের আইনজীবীর দীর্ঘ সওয়াল-জবাব চলে। ওই মামলার এফআইআর এবং আদালতের নির্দেশের সার্টিফায়েড কপি পেতে ইডি-র আবেদনে ‘পদ্ধতিগত ত্রুটি’ আছে বলে জানান সরকারি কৌঁসুলি রাজেন্দ্রপ্রসাদ দে। তাঁর যুক্তি, ইডি এই এই মামলায় তৃতীয় পক্ষ। অন্য দিকে, ইডি-র আইনজীবী তপন সাহানার দাবি ছিল, মোটেও ইডি তৃতীয় পক্ষ নয়। এটি কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা। তা ছাড়া, গরুপাচার মামলায় অভিযুক্ত অনুব্রতকে জেরা করতে চায় ইডি। দিল্লি হাই কোর্টে শুনানির জন্যও নথি প্রয়োজন। দুবরাজপুরের মামলাটি কী উদ্দেশ্য করা হয়েছে, তদন্তের স্বার্থেই এই মামলার নথি পাওয়া উচিত বলেও সওয়াল করেন ইডি-র আইনজীবী। শুনানি শেষে ইডি-র আর্জির পক্ষেই রায় দিয়ে নথি দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন দুবরাজপুর আদালতের বিচারবিভাগীয় ম্যাজিস্ট্রেট আরাত্রিকা দাস।
তপন সাহানা পরে বলেন, ‘‘সরকার পক্ষের আইনজীবীর যুক্তি নস্যাৎ করে আদালত মেনে নিয়েছে, কেন্দ্রীয় এজেন্সি হিসাবে ইডি-র ওই (খুনের চেষ্টা) মামলার নথি পাওয়ার প্রকৃত কারণ রয়েছে। কলকাতা হাই কোর্টের একটি নির্দেশ রয়েছে তদন্তকারী সংস্থার নথি পেতে বাধা সৃষ্টি করা যাবে না। বিচারক সেটা উল্লেখ করেই নথি দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন।’’
গত ১৯ ডিসেম্বর দিল্লির রাউস অ্যাভিনিউ আদালতের অনুমতি পেয়েও তৃণমূলের জেলা সভাপতি অনুব্রত মণ্ডলকে দিল্লিতে নিয়ে গিয়ে জেরা করার সুযোগ পায়নি ইডি। ওই দিনই অনুব্রতের বিরুদ্ধে খুনের চেষ্টার মামলা করেন তৃণমূল কর্মী শিবঠাকুর মণ্ডল। তার পর থেকে অনুব্রত পুলিশ হেফাজতে রয়েছেন। রাউস অ্যাভিনিউ আদালতের নির্দেশকে চ্যালেঞ্জ জানিয়েছে দিল্লি হাই কোর্টে মামলা করেছেন অনুব্রতের আইনজীবীরা। ৯ জানুয়ারি তার শুনানি রয়েছে।
শিবঠাকুরের করা মামলা নিয়ে প্রথম থেকেই বিতর্ক দানা বেঁধে ছিল। খুনের চেষ্টার অভিযোগ ঘিরে অনেক প্রশ্নও আছে। অনুব্রতের দিল্লি যাওয়া আটকাতে ‘সাজানো ও পূর্বপরিকল্পিত’ ভাবে দেড় বছর আগের অভিযোগের মামলা করানো হয়েছে বলে অভিযোগ বিরোধী শিবিরের।গত বৃহস্পতিবার মামলার নথি পেতে দুবরাজপুর আদালতে আবেদন করেন ইডি-র আইনজীবী। কী ভাবে তৃতীয় পক্ষ হয়ে ইডি নথি পেতে পারে প্রশ্ন তুলেছিলেন পাবলিক প্রসিকিউটর তথা তৃণমূলের জেলা সহসভাপতি মলয় মুখোপাপাধ্যায়ও।
এই একই যুক্তি এ দিন এজলাসে বিচারকের সামনে দেন সরকারি আইনজীবী রাজেন্দ্র প্রসাদ দে। তাঁর যুক্তি ছিল, কী কারণে নথি চাইছে তৃতীয় পক্ষ ইডি, তাদের আবেদনে সে কথার বিশদ ব্যাখ্যা নেই।দ্বিতীয়ত, একটি হলফনামা আবেদনের সঙ্গে দেওয়া জরুরি বলেও তা দেওয়া হয়নি ইডি-র আইনজীবীর তরফে। যদিও পাল্টা সওয়ালে সরকার পক্ষের যুক্তি খণ্ডন করেন ইডি-র আইনজীবী।