জয়ের পর বিজেপি প্রার্থী লক্ষী মুর্মু (মাঝ খানে শাড়ি পরিহিত মহিলা) হাতে তুলে নিলেন তৃণমূলের পতাকা। —নিজস্ব চিত্র।
বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় পঞ্চায়েত সমিতির ভোটে জিতেছিলেন বিজেপি প্রার্থী। কিন্তু বিজেপি কর্মী-সমর্থকেরা বিজয় উৎসব করার সুযোগ পেলেন না। জয়ের পর গেরুয়া আবিরের বদলে সবুজ আবির মাখলেন বিজেপি প্রার্থী লক্ষ্মী মুর্মু। তুলে নিলেন তৃণমূলের পতাকা। বীরভূমের দুবরাজপুর ব্লকের পদুমা গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকার ১৭ নম্বর পঞ্চায়েত সমিতি আসনের ঘটনা।
সংশ্লিষ্ট পঞ্চায়েত সমিতির আসনে তৃণমূল, বিজেপি এবং সিপিএম প্রার্থী মনোনয়ন জমা দেন। কিন্তু তৃণমূল প্রার্থীর মনোনয়ন বাতিল হয়ে গিয়েছে। এর ফলে লড়াই দাঁড়ায় বিজেপি এবং সিপিএমের মধ্যে। কিন্তু মঙ্গলবার মনোনয়ন প্রত্যাহারের শেষ দিনে একেবারে শেষ মুহূর্তে সিপিএম প্রার্থী তাঁর মনোনয়ন প্রত্যাহার করে নেন। ফলে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় ওই আসনে জয়লাভ করেন বিজেপি প্রার্থী লক্ষ্মী। কিন্তু তার কিছু ক্ষণের মধ্যে ‘নাটকীয় মোড়’। ‘মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের উন্নয়নে শামিল হতে’ই লক্ষ্মী যোগদান করেন তৃণমূলে। তিনি নিজেই এ কথা বলছেন। মঙ্গলবার তাঁর হাতে তৃণমূলের পতাকা তুলে দেন শাসকদলের দুবরাজপুর ব্লকের কোর কমিটির সদস্যরা। যোগদান অনুষ্ঠানে ছিলেন দুবরাজপুর ব্লকের তৃণমূলের দুই যুগ্ম আহ্বায়ক রফিউল খান ও স্বপন মণ্ডল, তৃণমূলের পদুমা অঞ্চল সভাপতি তরুণ ঘোড়ুইরা।
বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় ভোটে জিতেও কেন তৃণমূলে যোগ দিলেন? লক্ষ্মীর জবাব, ‘‘আমার ইচ্ছে।’’ তিনি বলেন, ‘‘কেউ জোর করেননি। কেউ হুমকিও দেননি। আমি স্বেচ্ছায় তৃণমূলে যোগ দিলাম।’’
ফলত, দুবরাজপুর পঞ্চায়েত সমিতির ৩০টি আসনের মধ্যে ৭টিতে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জয়লাভ করল তৃণমূল। আর ২৩ টি আসনে ভোট হবে। তৃণমূলের এক নেতা বলেন, ‘‘আমরা আগেই বলেছিলাম, এখানে সবাই মনোনয়ন দিতে পারে। কোনও অশান্তি হবে না। দুবরাজপুরে কোনও অশান্তি হয় না। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের উন্নয়নে শামিল হওয়ার জন্য লক্ষী তৃণমূলে যোগ দিয়েছেন। আসলে বিজেপি ওঁকে জোর করে প্রার্থী করেছিল।’’
এই পঞ্চায়েত ভোটে এর আগেও বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় বিজেপি প্রার্থীর জয়ের ঘটনা ঘটেছে। খোদ রাজ্য বিজেপির সভাপতি সুকান্ত মজুমদারের জেলা দক্ষিণ দিনাজপুরের গঙ্গারামপুর বিধানসভার উদয় গ্রাম পঞ্চায়েতের নাকাইর গ্রামের বিজেপি প্রার্থী অপর্ণা বর্মণ জয়ী হন। অপর্ণা বিজেপিতেই আছেন। কিন্তু লক্ষ্মীকে ধরে রাখত পারল না বিজেপি।
এ নিয়ে দুবরাজপুরের বিজেপি বিধায়ক অনুপ সাহা বলেন, ‘‘এটা গণতন্ত্রের হত্যা। ভয় দেখিয়ে বিরোধীদের মনোনয়ন প্রত্যাহার করানো থেকে বিরোধীদের যোগদান করানো— যে কাজ তৃণমূল করছে, তাতে এই পঞ্চায়েত ভোট থেকে ওদের পতন শুরু হল।’’