বদলি নিতে বলে নোটিস

দুবেশ্বরী কয়লাখনি বন্ধ হওয়ার আশঙ্কা আরও বাড়ল। সম্প্রতি খনি কর্তৃপক্ষ একটি বিজ্ঞপ্তি জারি করেছেন। তাতে কয়লাখনির সমস্ত কর্মী ও শ্রমিকদের পছন্দসই জায়গায় বদলির জন্য আবেদন করতে বলা হয়েছে।

Advertisement

শুভ্রপ্রকাশ মণ্ডল

নিতুড়িয়া শেষ আপডেট: ১১ জুন ২০১৮ ০১:০৯
Share:

এই গ্রামের মাটির নীচেই কয়লা রয়েছে। নিজস্ব চিত্র

দুবেশ্বরী কয়লাখনি বন্ধ হওয়ার আশঙ্কা আরও বাড়ল। সম্প্রতি খনি কর্তৃপক্ষ একটি বিজ্ঞপ্তি জারি করেছেন। তাতে কয়লাখনির সমস্ত কর্মী ও শ্রমিকদের পছন্দসই জায়গায় বদলির জন্য আবেদন করতে বলা হয়েছে। জানানো হয়েছে, নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে আবেদন না করলে খনি কর্তৃপক্ষই তাঁদের বদলি করে দেবেন। কয়লা তুলতে না পারলে ওই খনি বন্ধ করা ছাড়া কোনও উপায় নেই বলে জানিয়েছেন ইসিএলের সোদপুর এলাকার জেনারেল ম্যানেজার এম কে জোশী।

Advertisement

নিতুড়িয়া ব্লকের চালু থাকা দু’টি কয়লাখনির মধ্যে অন্যতম দুবেশ্বরী। সাতশোর কিছু বেশি কর্মী কাজ করেন এখানে। খনি সূত্রের খবর, বর্তমানে সেটি চালাতে মোটের উপরে লাভ বা ক্ষতি কিছুই হচ্ছে না। এই অবস্থায় খনির বি-প্যানেল এলাকায় মাটির নিচের কয়লাখনির পিলার কেটে কয়লা তোলার সিদ্ধান্ত হয়েছিল। খনির নিচ থেকে ছাদ পর্যন্ত কয়লার স্তরের একটা অংশ কাটা হয় না। সেগুলিকেই পিলার বলে। পরে পিলারের অংশ কাটা শুরু হয়। ফাঁকা জায়গা বালি দিয়ে ভরিয়ে দেওয়া হয়।

দুবেশ্বরী কয়লাখনিতে সেই পিলার কাটার কাজই শুরু করেছিলেন খনি কর্তৃপক্ষ। খনির বি-প্যানেলের উপরেই রয়েছে গোটা নিতুড়িয়া গ্রাম। বাসিন্দাদের একাংশ কাজের বিরোধিতা করেন। তাঁদের আশঙ্কা ছিল, পিলার কাটলে গ্রামে ধস হতে পারে। মে-তে গ্রামবাসী গণস্বাক্ষর করে খনি কর্তৃপক্ষ ও ডিরেক্টর জেনারেল অফ মাইনস সেফটিকে (ডিজিএমএস) তাঁদের আপত্তির কথা জানান। ডিজিএমএস খনি কর্তৃপক্ষকে কয়লা তোলার ক্ষেত্রে এলাকার নিরাপত্তা সংক্রান্ত ৩২টি বিষয় নিশ্চিত করে কয়লা তুলতে বলে। বলা হয়, গ্রামবাসীকে নিয়ে খনির নীচে যৌথ পরিদর্শন করতে। সেই মতো মে-র শেষে নিতুড়িয়া গ্রামের কয়েকজন বাসিন্দাকে ভূগর্ভস্থ খনি পরিদর্শন করানো হয়।

Advertisement

খনির ভিতর দেখে আসার পরেই গ্রামবাসীর আপত্তি আরও জোরদার হয়। পরিদর্শনে গিয়েছিলেন স্থানীয় বাসিন্দা নবনী চক্রবর্তী। তাঁর দাবি, নিয়ম অনুযায়ী কয়লার পিলার কাটার সঙ্গে সঙ্গে ফাঁকা অংশ বালি দিয়ে ভরাট করে দিতে হয়। কিন্তু সেটা ঠিক ভাবে করা হচ্ছে না। তিনি বলেন, ‘‘ডিজিএমএসের নির্দেশ ছিল কয়লার পিলার কাটার পরে খনির ছাদ পর্যন্ত বালি দিয়ে ভরাট করতে হবে। খনি কর্তৃপক্ষ সেই নির্দেশ মানেননি।” নিতুড়িয়ায় বসবাস করছেন হাজার দুয়েক মানুষ। গ্রামটির বসতি অনেক পুরনো। ধস নামলে বাসিন্দাদের অন্য কোথাও যাওয়ার জায়গা থাকছে না বলে দাবি নবনীর।

তবে ইসিএলের সংস্থার সোদপুর এরিয়ার জিএমের দাবি, ডিজিএমএসের দেওয়া সমস্ত শর্ত মেনেই ডি-পিলারিং করা হচ্ছে; বাসিন্দাদের আশঙ্কা অমূলক। তিনি বলেন, ‘‘গ্রামবাসীর বাধায় কাজ বন্ধ রাখতে বাধ্য হয়েছেন খনি কর্তৃপক্ষ। এই অবস্থা চললে খনি বন্ধ করে দেওয়া ছাড়া অন্য কোনও বিকল্প উপায় নেই। তাই কর্মী ও শ্রমিকদের পছন্দসই জায়গা বদলি নেওয়ার জন্য আবেদন করতে বলা হয়েছে।”

গ্রামের বাসিন্দাদের সঙ্গে কয়েক দফা আলোচনাতেও সমস্যা মেটেনি। এই অবস্থায় ইসিএল কর্তৃপক্ষ শেষ চেষ্টা করছেন, স্থানীয় বিধায়কের সঙ্গে কথা বলে সমস্যা মেটাতে। জিএম বলেন, ‘‘ওই এলাকার বিধায়কের সঙ্গে আলোচনা হয়েছে। উনি সমস্যা মেটানোর বিষয়ে আশ্বাস দিয়েছেন।” স্থানীয় বিধায়ক পূর্ণচন্দ্র বাউড়ি বলেন, ‘‘ইসিএল কর্তৃপক্ষর সঙ্গে প্রাথমিক কথা হয়েছে। আমরা কখনওই খনি পুরোপুরি বন্ধের পক্ষে নই। আবার, কয়লা তুলতে গিয়ে ধস নামুক, গোটা গ্রাম ক্ষতিগ্রস্ত হোক, এটাও হতে দেওয়া যাবে না।’’ তিনি জানান, বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলা শুরু হয়েছে। প্রয়োজনে সবাইকে নিয়ে বৈঠকে বসে সমাধানসূত্র খোঁজা হবে।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement