ফাঁকা: রামপুরহাট হাটতলা বাজারে। ছবি: সব্যসাচী ইসলাম
নগদ টাকায় কারবার চলে রামপুরহাট, সিউড়ি বা নলহাটি, মহম্মদবাজারের বেশিরভাগ দোকানে। নলহাটির সংকেতপুর গ্রামের কৃষিজীবি সৌমেন দাস, শ্রীবাস দাস বা মল্লারপুরের কালিকাপুর গ্রামের পান্ডব সাহারা জানান, প্রতিবছরই দুর্গাপুজোর আগে বাড়িতে মজুত ধান বিক্রি করে পরিবারের জন্য জামাকাপড় এবং অন্যান্য সামগ্রী কেনা হয়। কিন্তু এই বছর ধানের দর মিলছে না। ফলে নগদ টাকাও হাতে নেই। রামপুরহাটের ব্যবসায়ীদের অনেকেই জানান, মন্দা বাজারের ছবিটা শুধু পুজোর পোশাকে নয়, মুদিখানা থেকে গাড়ির বাজার সবেতেই মন্দার হাওয়া।
খুচরো পাইকারি ব্যবসার জন্য সাঁইথিয়াকে একসময় জেলায় ব্যবসার প্রাণকেন্দ্র বলা হত। পুজোর আগে সেই সাঁইথিয়া শহরে ব্যবসার পরিস্থিতি খুব একটা ভাল নয় বলেই জানিয়েছেন, সাঁইথিয়া ট্রেডার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি টিকন চঁদ পুগলিয়া।
তিনি বলেন, ‘‘পুজোর আগে জামা-কাপড়ের দোকানেই সাধারণত ভিড় লক্ষ্য করা যায়, এই বছরে এখনও পর্যন্ত সেই ভিড় দেখা যায়নি।’’ সাঁইথিয়া শহরে সম্প্রতি একটি শপিং মলের উদ্বোধন হয়েছে। ভিড় নেই সেখানেও। ‘‘ক্রেতারা ঢুকছেন যত, কিনছেন না।’’ বলেন এক কর্মচারি। মহালয়ার আগে যদি বাজার ফেরে সেই আশায় বসে আছেন অনেকে।
সাঁইথিয়া বাজারের মতো জেলা সদর শহর সিউড়ি বাজারেও জামাকাপড়ের দোকানে ক্রেতার ভিড় নেই। সিউড়ির দুই পোশাক বিক্রেতা প্রদীপ দত্ত এবং সৌমিত্র মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘‘আগামী কয়েকদিনের মধ্যে যদি বাজারের এই ছবিটা না বদলায় তাহলে সেই ক্ষতি পূরণ করা অসম্ভব হবে। কারণ পুজোর আগে থেকেই বিজ্ঞাপন ও নতুন ধরনের জামাকাপড় মজুত করতে অনেক টাকা খরচ করতে হয়। এবারও হয়েছে।’’
একই পরিস্থিতি জেলার আরেক শহর দুবরাজপুরে। আশপাসের গ্রাম থেকে এখানে বহু মানুষ পুজোর বাজার করতে আসেন। সেখানকার দুই বস্ত্র ব্যবসায়ী মহম্মদ শামিম এবং দিলীপ দত্তরা শঙ্কিত এই পরিস্থিতিকে সামাল দেওয়ার উপায় খুঁজে না পেয়ে। তাঁরা বলেন, ‘‘জেলার শহরগুলোয় এখনও ডিজিটাল ইন্ডিয়ার ছোঁয়া লাগেনি। নগদ টাকা দিয়েই আমাদের খুচরো ব্যবসা করতে হয়।
ক্রেতারা অধিকাংশই নগদে কেনেন। হাতে টাকা না থাকলে কি করে বাজার করবেন! আর আমরাই বা এই মাল মজুত করে সামাল দেব কেমন করে?’’ দুবরাজপুরের বাসিন্দা সবিতা ঘোষ বলেন, ‘‘শহরে যেমন বিভিন্ন অ্যাপের মাধ্যমে কেনাকাটা করা হয় আমরা এখনও ততটা আধুনিক হইনি। পুজোর আগে টাকার টানাটানিতে কেনাকাটার কথা আর ভাবতে ইচ্ছে করছে না।’’
সাঁইথিয়া, সিউড়ি, দুবরাজপুরের মতো একই অবস্থা নলহাটি, মুরারই, মল্লারপুর বাজারে। সেখানকার বস্ত্র ব্যবসায়ী থেকে মুদিখানার দোকানদারেরাও বাজার মন্দার দিকেই জানিয়েছেন। একটু ভিন্ন ছবি বোলপুরে। দুটো বড় শপিং মল হয়েছে শহরে। এই শহরে বা শান্তিনিকেতনে আর্থিক ভাবে সচ্ছ্বল মানুষের সংখ্যা খুব একটা কম নয়। তাই এখানকার বাজারও চড়া। এখানে পুজোর বাজারের ছবিটা তাই জেলার অন্য শহরগুলো থেকে আলাদা। দিনে তেমন ভিড় না হলেও রাতে খানিকটা ভিড় হচ্ছে।রামপুরহাট শহরের হাটতলা বাজারের কাপড়ের দোকানগুলি অনেক পুরনো। দূর দূর থেকে এখানে উৎসবের মরশুমে ভিড় করেন ক্রেতারা। এবার সেই ভিড় নেই একেবারেই।
রামপুরহাট বস্ত্র ব্যবসায়ী সংগঠনের সভাপতি সুনীল বান্টিয়া বলেন, ‘‘প্রতিযোগিতামূলক বাজার এখন। আগের মতো অবস্থা নেই। দোকান বেড়েছে। সামগ্রী বেড়েছে। ক্রেতাও বেড়েছে। কিন্তু উপার্জন? সাধারণ মানুষের হাতে তত টাকা কই? দৃশ্যত রামপুরহাটে পুজোর বাজারে কিছুটা ক্ষতি হলেও বাজার শুরু হয়েছে বলা যায়। কিন্তু নলহাটি, মুরারই বাজারের অবস্থা রামপুরহাটের মতোও নয়।’’
অন্য দিকে, রামপুরহাট ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি লক্ষ্মীপ্রসাদ ভকত এবং সহ-সভাপতি মহেশ ঝুনঝুওয়ালা বলেন, ‘‘খুচরো ব্যবসায়ীরা জিনিসপত্র কম কিনছেন এর ফলে পাইকারি বাজারে মন্দা অনেক বেশি। যার প্রভাব পড়ছে গ্রামীণ অর্থনীতিতে।’’