ঘণ্টার পর ঘণ্টা আটকে থাকল গাড়ি। সিমলাপালের লক্ষ্মীসাগর মোড়ে শুক্রবারের নিজস্ব চিত্র।
দু’টি ভিন্ন দাবি। কিন্তু সেই দাবি নিয়ে দক্ষিণ বাঁকুড়ার দু’টি গুরুত্বপূর্ণ রাস্তা অবরোধ করায় চরম ভোগান্তির শিকার হলেন জঙ্গলমহলের লোকজন। একটি জায়গায় ঘণ্টাখানেকের মধ্যে অবরোধ উঠে গেলেও অন্য অবরোধটি প্রায় সাড়ে চার ঘণ্টা ধরে চলে। ফলে দীর্ঘ সময় ধরে যান চলাচল ব্যাহত হল।
প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে সর্বক্ষণের জন্য চিকিৎসক, উন্নত পরিষেবা ও পর্যাপ্ত কর্মী চেয়ে শুক্রবার সকাল ৭টা থেকে সিমলাপালের লক্ষ্মীসাগর মোড়ে রাস্তা অবরোধ করেন এলাকার বাসিন্দারা। এলাকার বেশ কয়েকশো মানুষ অবরোধে সামিল হয়েছিলেন। টানা প্রায় সাড়ে চার ঘণ্টা ধরে সিমলাপাল–খাতড়া রাস্তায় অবরোধ চলে। সিমলাপাল থানার পুলিশ গিয়ে তাঁদের বুঝিয়েও অবরোধ তুলতে পারেনি। পরে সিমলাপালের বিডিও সৌম্যব্রত বন্দ্যোপাধ্যায়, বিএমওএইচ মহুয়া মহান্তি অবরোধস্থলে যান। তাঁরাও বোঝানোর চেষ্টা চালান। পরে অবরোধকারীরা বিডিও এবং বিএমওএইচের হাতে তাঁদের দাবিদাওয়া সম্বলিত স্মারকলিপি তুলে দেন। আধিকারিকরা তাঁদের আশ্বাস দেওয়ায় বেলা সাড়ে ১১টা নাগাদ তাঁরা অবরোধ তুলে নেন।
অবরোধকারীদের তরফে অভয় রানা, গণেশ পাল, শ্যাম পাল, লব প্রামানিক বলেন, “দিন দিন জনসংখ্যা বাড়ছে। এলাকার বহু গ্রামের মানুষ লক্ষ্মীসাগর প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রের উপর নির্ভরশীল। কিন্তু চিকিৎসা পরিষেবা সে ভাবে মিলছে না। চিকিৎসক-কর্মীদের বদলি করা হলে নতুন করে নিয়োগও করা হচ্ছে না। ফলে পরিষেবা ব্যাহত হচ্ছে।’’ তাঁদের দাবি, বারবার ব্লক স্বাস্থ্য আধিকারিকের কাছে বিষয়টি জানিয়েও কাজ না হওয়ায় শেষে বাধ্য হয়ে তাঁরা রাস্তা অবরোধ করেছেন। সিমলাপালের বিডিও বলেন, “স্বাস্থ্য পরিষেবা নিয়ে গ্রামবাসী কিছু সমস্যার কথা জানিয়েছেন। বিষয়টি বিএমওএইচ দেখছেন।’’ সিমলাপালের বিএমওএইচ মহুয়া মহান্তি অবশ্য পরিষেবার ঘাটতির অভিযোগ মানতে চাননি। তিনি বলেন, “ওই প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে দু’জন চিকিৎসককে নিয়োগ করা হয়েছে। অন্তর্বিভাগ পরিষেবাও চালু রয়েছে। রোগীদের সাধ্যমতো পরিষেবা দেওয়া হয়।’’ যদিও সিমলাপাল ব্লক তৃণমূল নেতা তথা বাঁকুড়া জেলা পরিষদ সদস্য দিলীপ পন্ডা অবশ্য দাবি করেছেন, এলাকার কিছু মানুষকে ভুল বুঝিয়ে এই অবরোধে নামানো হয়েছিল।
অন্যদিকে, এলাকার দু’টি রাস্তা সংস্কারের এবং পর্যাপ্ত পানীয় জলের দাবিতে রানিবাঁধের অম্বিকানগরে রাস্তা অবরোধ করেন সিপিএমের নেতা-কর্মীরা। এ দিন সকাল ৬টা থেকে বেশ কিচ্ছুক্ষণ ধরে অবরোধ চলে। নেতৃত্বে ছিলেন রানিবাঁধের সিপিএম বিধায়ক দেবলীনা হেমব্রম। অবরোধের জেরে খাতড়া থেকে ঝিলিমিলি ভায়া অম্বিকানগর রাস্তায় যান চলাচল কিছুটা ব্যাহত হয়। পরে তাঁরা অবরোধ তুলে নেন। দেবলীনাদেবীর অভিযোগ, “অম্বিকানগর থেকে গুণপুরা, রুদড়া থেকে ধানাড়া রাস্তা খানাখন্দে ভরে গিয়েছে। দীর্ঘদিন ধরেই রাস্তায় সংস্কার করা হয়নি। এলাকায় পানীয় জলের সঙ্কট দেখা দিয়েছে। গ্রামে গ্রামে নলকূপও খারাপ হয়ে পড়ে রয়েছে। সমস্যাগুলি দ্রুত সমাধান চেয়েই অবরোধ করা হয়।’’ জেলা পরিষদের পূর্ত কর্মাধ্যক্ষ শ্যামল সরকাররের পাল্টা দাবি, “ওই দু’টি রাস্তা প্রধানমন্ত্রী সড়ক যোজনায় তৈরি। কেন্দ্রীয় সরকার ওই প্রকল্পে টাকা না দেওয়ায় ওই রাস্তাগুলি সংস্কার করা যাচ্ছে না।’’ তাঁর কটাক্ষ, বিধানসভো ভোটের প্রস্তুতিতে মানুষকে অবরোধে আটকে সিপিএম যে রাজনীতি করছে, তা মানুষ প্রত্যাখ্যান করছে।
এ দিকে, জঙ্গলমহলের এই দু’টি রাস্তা অবরোধে সকাল থেকে নাকাল হন ওই রাস্তায় যাতায়াতকারী বহু মানুষ। অনেককে ঘুরপথে যাতায়াত করতে হয়েছে। স্বাস্থ্য পরিষেবার দাবিতে লক্ষ্মসাগরে যে ভাবে ঘণ্টার পর ঘণ্টা অবরোধ হয়েছে তাতে ক্ষুব্ধ নিত্যযাত্রীদের একাংশ। তাঁদের ক্ষোভ, “এই ভাবে রাস্তা অবরোধ করে সাধারণ মানুষকে বেকায়দায় ফেলে লাভটা কী হল?” জেলা পুলিশের এক আধিকারিক অবশ্য দাবি করেন, রানিবাঁধের অম্বিকানগরে অবরোধের জন্য সে ভাবে সমস্যা হয়নি। কিন্তু লক্ষ্মীসাগরে অবরোধের জন্য ওই রাস্তা পুরোপুরি বন্ধ হয়ে পড়েছিল। কিন্তু গ্রামবাসী জেদ করে থাকায় অবরোধ তুলতে জোর খাটানো হয়নি।