দুর্গন্ধে জেরবার, ‘মাস্ক’ পরে চিকিৎসা

কবে আন্দোলন থেকে সরে অস্থায়ী কর্মীরা কাজে যোগ দেবেন, সে ব্যাপারে সদুত্তর দিতে পারেননি জেলার স্বাস্থ্য-কর্তারা।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ৩০ সেপ্টেম্বর ২০১৯ ০১:১৯
Share:

অতিষ্ঠ: জরুরি বিভাগে জঞ্জাল। অগত্যা ওয়েটিং রুমে। নিজস্ব চিত্র

অস্থায়ী কর্মীরা কাজে যোগ না দেওয়ায় রবিবারেও জঞ্জালের মধ্যেই কাটাতে হল রোগী থেকে চিকিৎসকদের। জরুরি বিভাগ থেকে বিভিন্ন ওয়ার্ড— সর্বত্রই তিন দিন ধরে জমে থাকা আবর্জনায় দুর্গন্ধময় হয়ে পড়েছে বিষ্ণুপুর সুপার স্পেশালিটি হাসপাতাল। সেখানে হাসপাতাল সুপার-সহ স্বাস্থ্যকর্মীরা এ দিন সাফাই করতে গেলে আন্দোলনকারীরা তাঁদের বাধা দেন বলে অভিযোগ। ওন্দা ও ছাতনার সুপার স্পেশালিটি হাসপাতালেও শনিবার থেকে চলা কর্মবিরতি এ দিনও ওঠেনি। সেখানেও রোগীরা একই সমস্যায় পড়েছেন।

Advertisement

এ দিকে, কবে আন্দোলন থেকে সরে অস্থায়ী কর্মীরা কাজে যোগ দেবেন, সে ব্যাপারে সদুত্তর দিতে পারেননি জেলার স্বাস্থ্য-কর্তারা। বাঁকুড়ার জেলা মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক প্রসূনকুমার দাস বলেন, ‘‘ওঁদের আন্দোলন চলছে। স্বাস্থ্য ভবন সব জানে। আমরাও পরিস্থিতির উপরে নজর রাখছি।’’ বাঁকুড়ার জেলাশাসক উমাশঙ্কর এস জানান, আজ সোমবার ঠিকাসংস্থা ও আন্দোলনকারীদের প্রতিনিধিকে ডাকা হয়েছে। তিনি বলেন, ‘‘প্রশাসনিক আধিকারিকেরা তাঁদের সঙ্গে বৈঠক করে সমাধান খোঁজার চেষ্টা করবেন।’’

ঠিকা সংস্থার বিরুদ্ধে বোনাস দেওয়া-সহ এক গুচ্ছ দাবি তুলে বাঁকুড়া জেলার ওই তিন হাসপাতালের অস্থায়ী স্বাস্থ্যকর্মীরা আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছেন। অন্যদিকে ওই ঠিকা সংস্থার সঙ্গে যোগাযোগ করা যায়নি বলে জেলা স্বাস্থ্য দফতর দাবি করছে। এর ফলে সাফসুতরোর কাজ বন্ধ হয়ে যাওয়ায় অস্বাস্থ্যকর পরিবেশ হয়ে উঠেছে পুরো হাসপাতাল। প্রশ্ন উঠেছে—প্রশাসন কেন কড়া হচ্ছে না? জেলাশাসক বলেন, ‘‘সোমবার থেকে আন্দোলনকারীরা কাজ শুরু করলে ভাল। না হলে হাসপাতালের সাফাই কর্মীদের দিয়েই পরিষ্কার করানো হবে। সেখানে কেউ বাধা দিলে তাঁর বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’’

Advertisement

এ দিন হাসপাতালে গিয়ে দেখা যায়, জরুরি বিভাগে আবর্জনা জমে থাকায় দুর্গন্ধে অতিষ্ঠ হয়ে মাস্ক পরে চিকিৎসক ও নার্সেরা ঘরের বাইরে গিয়ে রোগী দেখছেন। বিষ্ণুপুর হাসপাতালের সুপার সুব্রত রায় জানান, জরুরি বিভাগের অপারেশন থিয়েটার ব্যবহারের অযোগ্য হয়ে ওঠায় সহকারী সুপার ও স্বাস্থ্যকর্মীদের নিয়ে তিনি সাফ করতে গিয়েছিলেন। তাঁর অভিযোগ, ‘‘আমরা সাফাই করতে গেলে আন্দোলনকারীরা বাধা দেন। কিন্তু জরুরি পরিষেবা তো বজায় রাখতে হবে। জানি না, কী ভাবে, কবে এর সুরাহা হবে।’’

বিষ্ণুপুর সুপার স্পেশালিটিতে ভর্তি ঝাটিবনির সুনীল মান্না বলেন, ‘‘জ্বর ছাড়ছে না। কিন্তু দুর্গন্ধের জন্য ভাবছি বাড়ি ফিরে যাব।’’ গড়দরজার লালু বাউরিও একই কথা শোনান। গড়বেতার খড়কুশমার বাসিন্দা ইমান ভাঙ্গি বলেন, “শৌচালয়ের নোংরা জল চারপাশে গড়াচ্ছে। মনে হচ্ছে আরও অসুস্থ হয়ে পড়ছি।’’ নাসেরা জানান, তাঁরাও অসুস্থ হয়ে পড়ছেন। এ ভাবে চললে, রোগীদের কে দেখবে? চিকিৎসকেরা বলেন, ‘‘ক্রিটিক্যাল কেয়ার ইউনিটও নোংরা হয়ে রয়েছে। এই পরিস্থিতিতে রোগীদের কিছু হয়ে গেলে, তার দায় তো ডাক্তারদের উপরেই এসে পড়বে!’’

সুপারের মন্তব্য, ‘‘রোগী থেকে চিকিৎসক-নার্স সবাই আমাকে অভিযোগ করছেন। আমিও আন্দোলনকারীদের বোঝানোর চেষ্টা করছি। স্বাস্থ্য দফতর পদক্ষেপ না করলে হাসপাতাল চালানো মুশকিল হয়ে পড়ছে।’’

অন্য দিকে, অস্থায়ী কর্মীদের ইনচার্জ বিশ্বনাথ ঘোষ বলেন, “পুজোর সময় হাতে টাকা না পেলে কর্মীরা কাজে লাগবে না বলে দিয়েছেন। তাই আমার কিছু করার নেই। সরাসরি ঠিকা সংস্থার আধিকারিক এসে কর্মীদের সঙ্গে আলোচনায় বসুন।”

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement