ছুটিতে ডাক্তার, ভরসা নার্স

স্থানীয় বাসিন্দারা জানাচ্ছেন, বাঘমুণ্ডি ব্লক সদর থেকে কড়েংয়ের দূরত্ব কমবেশি ১১ কিলোমিটার। সেরেংডি, বুড়দা-কালীমাটি ও সুইসা-তুন্তুড়ি গ্রাম পঞ্চায়েতের একাধিক গ্রামের মানুষের ভরসা এই স্বাস্থ্যকেন্দ্র।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

বাঘমুণ্ডি শেষ আপডেট: ০৫ ডিসেম্বর ২০১৮ ০০:২২
Share:

বাঘমুণ্ডির কড়েং প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে চিকিৎসা করছেন কর্মীরা। নিজস্ব চিত্র

গত সপ্তাহে অযোধ্যা পাহাড়ের হিলটপে অযোধ্যা স্বাস্থ্যকেন্দ্র পরিদর্শনে গিয়ে চিকিৎসকের দেখা পাননি জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের দুই প্রতিনিধি। পরের দিন সেখানে গিয়ে বিএমওএইচ দেখেন চিকিৎসক নেই। রোগী দেখছেন নার্স। তিন দিনের ব্যবধানে মঙ্গলবার বাঘমুণ্ডিরই কড়েং প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে গিয়েও একই দৃশ্যের পুনরাবৃত্তি দেখতে হল বিএমওএইচকে। এখানেও চিকিৎসক নেই। রোগী দেখছেন ফার্মাসিস্ট। তুন্তুড়ি প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে আবার ভরসা সেই নার্সই।

Advertisement

স্থানীয় বাসিন্দারা জানাচ্ছেন, বাঘমুণ্ডি ব্লক সদর থেকে কড়েংয়ের দূরত্ব কমবেশি ১১ কিলোমিটার। সেরেংডি, বুড়দা-কালীমাটি ও সুইসা-তুন্তুড়ি গ্রাম পঞ্চায়েতের একাধিক গ্রামের মানুষের ভরসা এই স্বাস্থ্যকেন্দ্র। এলাকায় বেসরকারি চিকিৎসা পরিষেবা নেই। স্বাস্থ্য পরিষেবা বলতে ১০ শয্যার এই প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রই।

এ দিন সকালে সেই স্বাস্থ্যকেন্দ্রে ডাক্তার দেখানোর জন্য গিয়েছিলেন স্থানীয় বুড়দা-কালিমাটি গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকার বুকাডি গ্রামের বাসিন্দা গিরিধারী কুমার। কপালে ফোঁড়ার জন্য বেশ কষ্ট পাচ্ছেন। স্বাস্থ্যকেন্দ্র থেকে বেরিয়ে বললেন, ‘‘ডাক্তারবাবুকে পেলাম না। এখান থেকে বাঘমুণ্ডি অনেকটাই দূরে। তাই ফার্মাসিস্টকেই দেখালাম।’’ সেরেংডি গ্রাম পঞ্চায়েতের ভুরসু গ্রাম থেকে স্ত্রী কবিতা কুমারকে নিয়ে ডাক্তার দেখানোর জন্য নিয়ে দিয়েছিলেন রামলাল কুমার। তিনি বলেন, ‘‘স্ত্রীর শরীর খারাপ। তাই ডাক্তারের কাছে নিয়ে যাই। কিন্তু ডাক্তারবাবু নেই। ফার্মাসিস্টকেই দেখালাম।’’ কবিতাদেবী বলেন, ‘‘কখনও ডাক্তারবাবুকে পাই, কখনও পাই না।’’

Advertisement

স্থানীয় সূত্রে খবর পেয়ে এ দিন ওই স্বাস্থ্যকেন্দ্রে যান বাঘমুণ্ডির বিএমওএইচ অমরেন্দ্র রায়। জানা গিয়েছে, তিনি গিয়ে স্বাস্থ্যকর্মীদের সঙ্গে কথা বলেন। তাঁরা জানান, সোমবার থেকেই ডাক্তারবাবু নেই। বিএমওএইচ বলেন, ‘‘এলাকা থেকে খবর পাই, ওই স্বাস্থ্যকেন্দ্রে চিকিৎসক নেই। গিয়ে দেখি, ফার্মাসিস্টই সামলাচ্ছেন। চিকিৎসক ছুটিতে গিয়েছেন, অথচ আমার জানা নেই। আমি বিষয়টি ঊর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছি।’’ ফার্মাসিস্ট জয়ন্ত চট্টোপাধ্যায় জানান, ‘‘ডাক্তারবাবুর মায়ের শরীর খারাপ বলে তিনি ছুটিতে গিয়েছেন। আমরাই এখন সামলাচ্ছি।’’

একই ছবি এই ব্লকের আর এক প্রান্তে তুন্তুড়ি প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রেও। এই স্বাস্থ্যকেন্দ্রের দূরত্ব কড়েং থেকে কমবেশি ১১ কিলোমিটার। স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, সেখানে নার্সই বেশির ভাগ দিন রোগী দেখেন। এ দিন এই স্বাস্থ্যকেন্দ্রে পৌঁছেও বিএমওএইচ দেখেন বহির্বিভাগ সামলাচ্ছেন স্বাস্থ্যকেন্দ্রের একমাত্র নার্স। বিএমওএইচ বলেন, ‘‘এই স্বাস্থ্যকেন্দ্রের চিকিৎসক ব্লক সদর সামলাতেন। কিন্তু তিনি সম্প্রতি পদত্যাগপত্র জমা দিয়েছেন বলে জানি। চিকিৎসকের অভাবের বিষয়টি ঊর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষের কাছে জানিয়েছি।’’

জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক অনিলকুমার দত্ত জানান, পুরুলিয়া জেলায় প্রায় ৯০টি চিকিৎসকের পদ শূন্য রয়েছে। তিনি বলেন, ‘‘কড়েং প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রের চিকিৎসকের মায়ের শারীরিক অসুস্থতার জন্য তিনি হঠাৎ ছুটিতে চলে গিয়েছেন বলেই এই সমস্যা হয়েছে। তুন্তুড়ির চিকিৎসক বাঘমুণ্ডির দায়িত্বেও ছিলেন। চিকিৎসকের অভাবেই কোনও কোনও জায়গায় সমস্যা হচ্ছে।’’ চেষ্টা করেও কড়েং এর চিকিৎসকের সঙ্গে যোগাযোগ করা যায়নি।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement