Coronavirus

নিভৃতবাস নিয়ে বিবাদ থামছে না

স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, বড়মহুলায় সরকারি নিভৃতবাস তৈরির প্রতিবাদে বিক্ষোভ চলছিল বাসিন্দাদের।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা 

সিউড়ি শেষ আপডেট: ০১ জুন ২০২০ ০৪:৪৪
Share:

প্রতীকী ছবি

নিভৃতবাস নিয়ে ফের তপ্ত জেলা। নিভৃতবাস করতে না দিলে সংক্রমণ ছড়ানোর কথা প্রশাসনের তরফে বারবার বলা হলেও হুঁশ ফিরছে না বাসিন্দাদের একাংশের। রবিবার সিউড়ি ১ ব্লকের বড়মহুলায় এবং শহরের বারুইপাড়া এলাকায় নিভৃতবাস নিয়ে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষ বাধে বাসিন্দাদের।

Advertisement

স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, বড়মহুলায় সরকারি নিভৃতবাস তৈরির প্রতিবাদে বিক্ষোভ চলছিল বাসিন্দাদের। অভিযোগ, পুলিশ গিয়ে বিক্ষোভ তুলতে লাঠিচার্জ করে এবং একজনকে আটক করে। প্রতিবাদে কড়িধ্যা গ্রাম থেকে রাজনগর যাওয়ার রাস্তায় পথ অবরোধ করেন সিউড়ি ১ ব্লকের বড়মহুলা গ্রামের বাসিন্দারা। রবিবার সকালে এই ঘটনার পরে কড়িধ্যা পঞ্চায়েতের উপপ্রধানের হস্তক্ষেপে অবরোধ ওঠে।

বড়মহুলা গ্রামের বাসিন্দাদের থেকে জানা গিয়েছে, ওই গ্রামের প্রাণী সম্পদ বিকাশ বিভাগের পাশেই একটি সরকারি নিভৃতবাস করা হয়েছে। যেখানে শনিবার প্রায় সাত জন পরিযায়ী শ্রমিককে রাখা হয়েছে। তারপর থেকে বড়মহুলার পার্শ্ববর্তী গ্রামের বাসিন্দারা ওই গ্রামের বাসিন্দাদের সঙ্গে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন করেছেন। এমনকি যোগাযোগ বন্ধ করতে বড়মহুলা গ্রাম থেকে রথভাসা হয়ে কড়িধ্যা যাওয়ার রাস্তায় গাছের গুঁড়ি ফেলা হয়েছিল বলে অভিযোগ। স্থানীয়দের আরও অভিযোগ, নিভৃতবাসে থাকা শ্রমিকেরা গ্রামের পুকুরের জল ব্যবহার করছেন। তাঁরা বেরিয়ে গ্রামের এদিক ওদিকে ঘুরে বেড়াচ্ছেন বলেও অভিযোগ।

Advertisement

রবিবার সকালে গ্রামে নিভৃতবাস কেন্দ্র করার প্রতিবাদে স্থানীয় বাসিন্দারা ওই এলাকায় বিক্ষোভ দেখাতে শুরু করেন। অভিযোগ, সেই সময় সিউড়ি থানার পুলিশ গিয়ে তাঁদের উপর লাঠিচার্জ করে এবং একজন গ্রামবাসীকে আটক করে নিয়ে যায়। এরপরেই স্থানীয় বাসিন্দারা বাঁশ লাঠি হাতে পথ অবরোধ করেন। প্রায় ঘণ্টাখানেক ধরে অবরোধ চলে। স্থানীয় বাসিন্দা গৌরাঙ্গ মণ্ডল, মিনা অঙ্কুর বলেন, ‘‘আমাদের গ্রামের লোক ওই নিভৃতবাসে থাকুক আমাদের কোনও আপত্তি নেই। কিন্তু বাইরের লোককে রাখতে দেব না।’’ এরপরেই ঘটনার স্থলে পৌছান কড়িধ্যা পঞ্চায়েতের প্রধান উজ্জ্বল সিংহ। তাঁকে দেখেও সাময়িক বিক্ষোভ দেখান বিক্ষোভকারীরা। পরে তাঁর আশ্বাসে অবরোধ উঠে যায়। উজ্জ্বলবাবুর কথায়, ‘‘নিভৃতবাস নিয়ে মানুষের একটা ক্ষোভ ছিল। তাছাড়া এক যুবককে পুলিশ আটক করেছিল। তবে পরে পুলিশ ওই যুবককে ছেড়ে দেয় ও নিভৃতবাস থেকে শ্রমিকদের সরিয়ে নেওয়া হয়েছে।’’

তবে নিভৃতবাস নিয়ে বার বার বিক্ষোভের ঘটনায় চিন্তিত জেলা প্রশাসনের কর্তারা। জেলা প্রশাসনের কর্তাদের দাবি, নিভৃতবাসের কারণে মানুষের আতঙ্কের কোনও কারণ নেই। বরং বর্তমান পরিস্থিতিতে সামাল দিতে হলে সাধারণ মানুষকে প্রশাসনের সহযোগিতা করতে হবে। জেলা পরিষদের মেন্টর অভিজিৎ সিংহ বলেন, ‘‘যে সমস্ত পরিযায়ী শ্রমিকরা ফিরছেন তাঁরা যে পঞ্চায়েত এলাকার লোক সেই পঞ্চায়েত এলাকার কাছাকাছি কোথাও রাখার ব্যবস্থা করতে হবে। এ ক্ষেত্রে বিরোধিতার কোনও জায়গা নেই। প্রশাসন শক্ত হাতে বিষয়টির মোকাবিলা করবে।’’

সিউড়ি শহরের ১৪ নম্বর ওয়ার্ডে কলেজে সরকারি নিভৃতবাস তৈরি করতে দেওয়া যাবে না। সেই কারণে পাড়ার মোড়ে বাঁশ লাগিয়ে বহিরাগতদের প্রবেশ নিষেধের পোস্টার লাগিয়েছিল স্থানীয়রা। সেই বাঁশ সরাতে গিয়ে পুলিশের সঙ্গে জনতার গণ্ডগোল বাধে। পুলিশকে লক্ষ করে ইট ছোড়া হয় বলেও অভিযোগ। ঘটনাটি ঘটেছে রবিবার সন্ধ্যায় সিউড়ির বারুইপাড়া এলাকায়। পুলিশ একজনকে আটক করেছে।

বাসিন্দাদের দাবি, বারুইপাড়া এলাকার বীরভূম মহাবিদ্যালয় কলেজে সরকারি নিভৃতবাস করার প্রতিবাদে তাঁরা পাড়ার মোড়ে বাঁশ বেঁধেছিলেন। সেই বাঁশ ভাঙতে গিয়ে বচসার সূত্রপাত হয়। পুলিশকে লক্ষ করে ইট ছোড়া হয় বলেও অভিযোগ। তারপরেই পুলিশ পাল্টা মৃদু লাঠিচার্জ করে বলে অভিযোগ স্থানীয়দের। এমনকি পুলিশ শূন্যে গুলি চালায় বলে দাবি করা হয়। জেলা পুলিশ সুপার শ্যাম সিংহ বলেন, ‘‘কোনও লাঠিচার্জ হয়নি। গুলি চালানোর কোনও প্রশ্ন নেই। লকডাউন না মেনে কিছু লোক জমায়েত হয়েছিল, পুলিশ সেই জমায়েত সরিয়ে দিয়েছে।’’

রবিবার রাতে শ্রমিকদের রাখা নিয়ে বিক্ষোভ হয় বোলপুর-শ্রীনিকেতনের সুরুলেও।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement