বিঘাখানেক জমিতে ফুলকপি চাষ করেছেন রঘুনাথপুর ১ ব্লকের রক্ষতপুর গ্রামের উৎপল মাজি। ফসলে পোকা লেগেছিল। উৎপলবাবু মোটেও ঘাবড়াননি। স্মার্টফোনে পোকালাগা ফসলের ছবি তুলে পোস্ট করে দিয়েছিলেন হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপে। চটজলদি উত্তর আসে এক কৃষি আধিকারিকের থেকে। সেই মতো কীটনাশক ছড়াতেই ঝাড়ে বংশে পোকার দল নিকেশ হয়ে গেল।
এ ভাবেই মুঠো ফোনের লাগসই ব্যবহারে জেলার চাষ আবাদ একটু একটু করে ‘স্মার্ট’ হয়ে উঠছে। সৌজন্যে জেলার কৃষি আধিকারিকদের সংগঠন সাটসা (স্টেট এগ্রিকালচারাল টেকনোলজিস্টস সার্ভিস অ্যাসোসিয়শন)-এর পুরুলিয়া শাখা। তাঁরা হোয়াটসঅ্যাপে ‘কৃষক সাথী’ নামে একটি গ্রুপ তৈরি করেছেন। সেখানে কোন রোগে গাছে কী ওষুধ দিতে হবে, কোন সার কী ভাবে ব্যবহার করতে হবে, কোন সময় কী চাষ করা যেতে পারে— এমন হাজারো উত্তর আর পরামর্শ মিলছে। রাজ্যের মধ্যে এমন উদ্যোগ এই প্রথম। গ্রুপটির অ্যা়ডমিনিস্ট্রেটর তথা সাটসার পুরুলিয়া শাখা সম্পাদক বাসব ভট্টাচার্য বলেন, ‘‘প্রতিদিন কম করে হলেও চল্লিশটি প্রশ্ন আসছে। ১২ জন কৃষি আধিকারিক আধ ঘণ্টার মধ্যেই সেগুলির উত্তর দিয়ে দিচ্ছেন।’’
প্রযুক্তি ব্যবহারে দূরশিক্ষণ ক্রমশ জোরদার হয়ে উঠছে। বাসববাবু জানান, বেঙ্গালুরুতে কৃষি দফতরের একটি প্রশিক্ষণ শিবিরে যোগ তাঁরা প্রথম দেখতে পান, ফোনের গল্পগাছা করার অ্যাপ্লিকেশনগুলিকেই কী ভাবে অনেক বড় কাজে ব্যবহার করা যেতে পারে। তার পরেই পুরুলিয়াতে সংগঠনগত ভাবে উদ্যোগী হওয়ার ভাবনাচিন্তা শুরু হয়।
কিন্তু স্মার্ট ফোন তো আর সমস্ত কৃষক ব্যবহার করেন না! ওই আধিকারিক জানান, ব্যাপারটা গোড়াতেই তাঁদের মাথায় এসেছিল। তাই গ্রুপের প্রায় আড়াইশো জন সদস্যের মধ্যে এলাকা ভিত্তিক ভাবে ১৯ জন চাষিকে ‘কি-পার্সন’ হিসাবে চিহ্নিত করা হয়েছে। নিজেরটা ছাড়াও অন্যদের সমস্যার উত্তর গ্রুপ থেকে জেনে বলে দেওয়া তাঁদের কাজ। বিনি সুতোর জাল এভাবেই বিছিয়ে যাচ্ছে খেত থেকে খেতে।
হাতের নাগালে মুশকিল আসান পেয়ে খুশি বাঘমুণ্ডির রাজা মাহাতো এবং নিতুড়িয়ার বাবুলাল টুডুরা। তাঁরা বলেন, ‘‘চাষে তো রোগ আর পোকার বালাই থাকবেই। আগে এর জন্য ব্লকে গিয়ে কৃষি দফতরে কথা বলতে হত। অনেকটা সময় চলে যেত। এখন সেই হ্যাপা নেই। চটপট ওষুধপত্রও দেওয়া যাচ্ছে।’’ রক্ষতপুরের উৎপলবাবুর কথায়, ‘‘বলতে পারেন এখন হাতের কাছেই ডাক্তার পেয়েছি।”
সম্প্রতি পুরুলিয়া শাখার দ্বি-বার্ষিক সম্মেলনে যোগ দিতে এসেছিলেন সাটসার অন্যতম রাজ্য যুগ্ম সম্পাদক গোষ্ট ন্যায়বান। তিনি বলেন, ‘‘রাজ্যের মধ্যে পুরুলিয়া প্রথম এই কাজ করেছে। অন্য জেলাগুলিতেও এটা চালু করা যায় কি না আমরা দেখছি।’’ তিনি জানান, প্রতিটি জেলার জল-মাটি-বাতাস আলাদা। সেই মতো স্থানীয় আধিকারিকেরা অবস্থা বুঝে ব্যবস্থার নিদান দিতে পারবেন আলাদা আলাদা গ্রুপে। পরিমল বর্মন, কৃষ্ণেন্দু হাইতদের মতো ব্লক সহ-কৃষি অধিকর্তারাও উৎসাহী এই বিষয়ে। তাঁরা বলেন, ‘‘ইন্টারনেট গ্রুপে যদি এ ভাবে আলোচনা করা যায় তাহলে এক জনের প্রশ্ন থেকে অনেকের সমস্যার উত্তর মিলে যাবে।’’