ফাইল চিত্র।
লোকসভা ভোটের মতো বিধানসভায় কেন বাঁকুড়া জেলায় সাফল্য পাওয়া গেল না, বুথ স্তর থেকে এ নিয়ে পর্যালোচনা রিপোর্ট চাইলেন বিজেপির রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ। সেই সঙ্গে যে কোনও দিন রাজ্যে পুরনির্বাচন ঘোষণা হতে পারে জানিয়ে দলকে আগাম প্রস্তুতি নিতে নির্দেশ দিলেন তিনি।
বিধানসভা নির্বাচন পরবর্তী পরিস্থিতি পর্যালোচনা করতে শনিবার বিষ্ণুপুর ও রবিবার বাঁকুড়া শহরে বৈঠক করেন দিলীপবাবু। রবিবার সকালে তিনি বিষ্ণুপুরের মৃন্ময়ীমন্দির ও ছিন্নমস্তা মন্দিরে পুজো দিয়ে পোড়ামাটির হাটে দলীয় কর্মীদের সঙ্গে চায়ের আড্ডা দেন। পরে বাঁকুড়ায় দলের বাঁকুড়া সাংগঠনিক জেলার কার্যকর্তাদের নিয়ে বৈঠক করেন। ছিলেন বাঁকুড়ার সাংসদ সুভাষ সরকার, বাঁকুড়া সাংগঠনিক জেলা সভাপতি বিবেকানন্দ পাত্র, দলের জেলা কমিটির সদস্য, মণ্ডল সভাপতি, জেলার বিধায়ক ও পরাজিত প্রার্থীরাও।
লোকসভা নির্বাচনে বাঁকুড়া জেলার দু’টি কেন্দ্রই জেতে বিজেপি। ওই নির্বাচনে জেলার ১২টি বিধানসভা কেন্দ্রেও ভোট প্রাপ্তির নিরিখে এগিয়ে ছিল বিজেপি। কিন্তু বিধানসভা ভোটে জেলার জঙ্গলমহলের রাইপুর, রানিবাঁধ, তালড্যাংরা কেন্দ্রের সঙ্গে শিল্পাঞ্চল বলে পরিচিত বড়জোড়া কেন্দ্র জেতে তৃণমূল। বাকি আটটি বিধানসভা বিজেপি জেতে। কিন্তু সেখানেও লোকসভার তুলনায় জয়ের ব্যবধান অনেক কমেছে।
বিজেপির অন্দরের খবর, এ দিনের বৈঠকে ফলাফল খারাপ হওয়ার জন্য দলের সাংগঠনিক ব্যর্থতাকেই কারণ হিসেবে দাবি করেছেন দিলীপবাবু। বহু মণ্ডলেই কর্মীরা মাটি কামড়ে লড়াই করতে পারেননি বলেও উল্লেখ করেছেন। বিষ্ণুপুরে এ দিন সাংবাদিকদের তিনি বলেন, “হয়তো সংগঠনকে সে ভাবে পোক্ত করতে পারিনি বুথস্তরে। কার্যকর্তাদের অভিজ্ঞতাও কম ছিল। ভোটের সময় ও গণনার সময় যে ধরনের লড়াই দেওয়া উচিত ছিল আমাদের, কার্যকর্তারা তা দিতে পারেননি। অনেক জায়গায় প্রার্থী ও কার্যকর্তাদের অনেকেই গণনাকেন্দ্র ছেড়ে চলে গিয়েছিলেন।’’ তৃণমূলের বাঁকুড়া জেলা সভাপতি শ্যামল সাঁতরার কটাক্ষ, ‘‘জঙ্গলমহলের সাধারণ মানুষ বুঝতে পেরেছেন বিজেপি কী? তাই তাঁরা তৃণমূলকেই নিয়ে এসেছেন।”
তৃণমূল থেকে বিজেপিতে যাওয়া অনেকেই ‘বেসুরো’ হয়েছেন। এই জেলাতেও তেমন দেখা গিয়েছে। সে প্রসঙ্গে দিলীপবাবুর প্রতিক্রিয়া, ‘‘সেটা তাঁদের ব্যক্তিগত বিষয়। ভোটের আগে ভেবেছিলেন, এ দিকের পাল্লা ভারী, তাই এসেছিলেন। এখন আবার ওই দিকেই সুবিধা রয়েছে বুঝে ফিরছেন। আগে তাঁদের ওই দিকে অক্সিজেনের অভাব বোধ হচ্ছিল, এখন এ দিকে নিশ্বাস বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। আসলে সমস্যাটা তাঁদের নাকের ভিতরে।’’
ভোট-পরবর্তী পরিস্থিতিতে জেলায় রাজনৈতিক ‘সন্ত্রাসের’ ঘটনা ঘটছে কি না, সেই রিপোর্টও দলের নেতাদের কাছ থেকে সংগ্রহ করেন দিলীপবাবু। কিছু দিন আগেই বড়জোড়া থানায় স্মারকলিপি দিয়ে বিজেপি নেতৃত্ব অভিযোগ করেন, বড়জোড়ার পখন্না পঞ্চায়েত এলাকার প্রায় একশো জন বিজেপি কর্মী ঘরছাড়া। বিজেপির বাঁকুড়া সাংগঠনিক জেলা সভাপতির দাবি, ‘‘রাইপুরে আমাদের কিছু কর্মী ঘরছাড়া রয়েছেন। সেখানে দলের এক নেতার বাড়িতে হামলা হয়েছে।’’
ঘটনাচক্রে দিলীপবাবুর সঙ্গে বৈঠকের পরেই রাইপুর বিধানসভার কেন্দ্রের বিজেপির পরাজিত প্রার্থী সুধাংশু হাঁসদার ফেসবুকে পোস্ট হয়— ‘শারীরিক ও পারিবারিক সমস্যার কারণে কিছুদিন রাজনৈতিক ক্ষেত্র থেকে সরে থাকছি’। সুধাংশুবাবু ফোন ধরেননি, মেসেজ়ের জবাব দেননি। বিজেপির বাঁকুড়া সাংগঠনিক জেলা সভাপতি বলেন, ‘‘সুধাংশুবাবু বেশ কিছু দিন ধরে অসুস্থ। এ দিনও তিনি অসুস্থতার কথা জানিয়েছেন। কিন্তু রাজনীতি থেকে সরে যাওয়ার কথা বলেননি। তাঁর সঙ্গে কথা বলব।’’
ঘরছাড়া প্রসঙ্গে দিলীপবাবু বলেন, “কারা কোথায় ঘরছাড়া রয়েছেন সেই তথ্য বিভিন্ন জেলা থেকে সংগ্রহ করে আমরা বিভিন্ন কমিশনে জানাচ্ছি। প্রশাসনের ঢিলেমির জন্যই এই ঘটনা ঘটছে। তৃণমূল রাজ্যে শান্তি ফেরাতেই চায় না।” একই সঙ্গে তিনি দাবি করেছেন, ‘‘বিধানসভায় এখন আমাদের ৭৫টি আসন রয়েছে। বিধানসভায় দম বন্ধ করে দেব। বাইরেও আন্দোলন করব।”
অভিযোগ উড়িয়ে জেলা তৃণমূল সভাপতি শ্যামল সাঁতরা দাবি করেন, “জেলায় কোথাও কোনও সন্ত্রাস নেই। ভোটে জিততে না পেরে নিজেদের ব্যর্থতা ঢাকতেই এ সব মিথ্যা অভিযোগ তুলছে বিজেপি।”
বাঁকুড়া জেলা পুলিশ সুপার ধৃতিমান সরকারের বলেন, “কেউ ঘরছাড়া রয়েছেন বলে সুনির্দিষ্ট অভিযোগ পেলে পুলিশ পদক্ষেপ করবে। দরকার পড়লে পুলিশের হেল্পলাইনেও ফোন করে অভিযোগ জানানো যাবে।’’