ডেউচা সেতু। ছবি: পাপাই বাগদি
জোড়াতালি দিয়ে সংস্কার হলেও মহম্মদবাজারের ডেউচা সেতুর স্বাস্থ্য পুনরুদ্ধার সম্ভব নয়, তা বিলক্ষণ বুঝেছিলেন জাতীয় সড়কের দায়িত্বপ্রাপ্ত ইঞ্জিনিয়ারেরা। সেই জন্য ডেউচায় নতুন সেতু গড়ার প্রস্তাব পাঠানো হল কেন্দ্রীয় সড়ক পরিবহণ মন্ত্রকে। জাতীয় সড়কের ডিভিশন ১২–র এগ্জিকিউটিভ ইঞ্জিনিয়ার নিশিকান্ত সিংহ বুধবার বলেন, ‘‘ওখানে নতুন সেতু গড়ার প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে জাতীয় সড়ক কর্তৃপক্ষের কাছে। কিন্তু সেই সেতু কবে অনুমোদন পাবে, সেটা আমার পক্ষে বলা সম্ভব নয়।’’
গত ৬ ফেব্রুয়ারি সেতু সংস্কারের কাজ চলাকালীন রানিগঞ্জ-মোরগ্রাম ৬০ নম্বর জাতীয় সড়কে থাকা মহম্মদবাজারের দ্বারকা নদীর ব্যারাজ সংলগ্ন ডেউচা সেতুর উপরে ফাটল ও কিছুটা অংশ ধসে যাওয়া লক্ষ্য করেন করেন স্থানীয় বাসিন্দারা। তাতেই আতঙ্ক ছড়ায়। দুর্ঘটনা এড়াতে মহম্মদবাজার থানার পুলিশের পক্ষ সেতু দিয়ে ভারী যান চলাচল বন্ধ করে দেওয়া হয়। সরেজমিনে সেতুর স্বাস্থ্য পরীক্ষায় আসেন ইঞ্জিনিয়ারেরা। সেই পরিদর্শনের পরেই তাঁরা বোঝেন, নতুন সেতু তৈরি করা দরকার। বর্তমানে সেতুর উপর যানচাল বন্ধ না থাকলেও নিয়ন্ত্রিত। সেতুর দু’দিকে দুর্বল সেতু লেখা বোর্ড ঝুলিয়ে দেওয়া হয়েছে। ওই সেতুর উপর দিয়ে যাতে কোনও ভাবেই ঘণ্টায় ১০কিলোমিটারের বেশি গতিতে গাড়ি চলাচল না করে, সে দিকে লক্ষ্য রাখা হয়েছে।
প্রশাসনিক সূত্রে জানা গিয়েছে, দ্বারকা নদীর গতিপথ আটকে ১৯৫২ সালে ব্যারাজ তৈরি হয়। সেই সময়েই ব্যারাজের উপরেই ৮৩ মিটার দৈর্ঘ্যের সেতু তৈরি হয়। জাতীয় সড়ক গিয়েছে ওই সেতুকে মাঝে রেখেই। যানবাহনের ক্রমাগত চাপ বাড়তে থাকায়, বিশেষ করে পাথর শিল্পাঞ্চল থেকে হাজার হাজার লরি-ডাম্পার যাতায়াতে সেতুর হাল খারাপ হয়ে গিয়েছে। নিশিকান্ত সিংহ বলছেন, ‘‘ডেউচা সেতু যখন তৈরি হয়েছিল, তখন এই রাস্তায় যানবাহনের এত চাপ ছিল না। এখন শুধু অতিরিক্ত যানবাহনের চাপই নয়, রয়েছে অসংখ্য অতিরিক্ত পণ্যবাহী যানবাহনের যাতায়াত। নতুন করে সেতু না গড়ে এর স্বাস্থ্য ফেরানো সম্ভব নয়।’’
তবে শুধু ডেউচা নয়, তিলপাড়া ব্যারাজের উপরের থাকা সেতু, সদাইপুরে বক্রশ্বর নদের উপরের সেতু-সহ বীরভূম জেলায় ৬০ নম্বর জাতীয় সড়কে থাকা ৯টি সেতুর অবস্থাই খারাপ। জাতীয় সড়ক কর্তৃপক্ষের দাবি, ২০০৪ সালে ওই সেতুগুলি তাঁদের আওতায় আসে। তার পর থেকে সেতুগুলির সংস্কার হয়নি। প্রত্যেকটি সেতুর ৫০ বছর বয়সকাল থাকে। সেই বয়স পেরিয়ে গেছে। এখন প্রায় ৭০ বছর হয়ে গিয়েছে। আগে যে ধারণক্ষমতা হিসেব করে সেতুগুলি তৈরি করা হয়েছিল, বর্তমানে তার তুলনায় অনেক বেশি ভারী যানবাহন তা দিয়ে চলাচল করে। তাতেই সেতুগুলির অবস্থা দিন দিন খারাপ হয়েছে।
সেই সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে প্রতিটি সেতু সংস্কারের কাজ চলছে বর্তমানে। সেই কাজ করতে গিয়েই ডেউচা সেতুতে ফাটল দেখা যায়। তার পরেই নতুন করে সেতু তৈরির প্রস্তাব গিয়েছে কেন্দ্রের কাছে।