সিউড়ির স্বদেশি মাছ বাজারে বিক্রি হছে ছোট মাপের ইলিশ। নিজস্ব চিত্র
কেউ বলছেন নিয়মই জানেন না। কেউ বলছেন জোগান আছে বলে বিক্রি করছেন। কেউ বলছেন দাম কম বলেই বিক্রি হচ্ছে। এ ভাবেই নানা ‘অজুহাতের’ ফাঁক গলে সিউড়ির বাজারের দেদার খোকা ইলিশ বিক্রি হচ্ছে বলে অভিযোগ।
রাজ্য মৎস্য দফতরের নির্দেশিকা অনুযায়ী, ২৩ সেন্টিমিটারের থেকে ছোট ইলিশ মাছ ধরা এবং বিক্রি করা বেআইনি। অভিযোগ, এর থেকে অনেক ছোট আকারের ইলিশ সিউড়ির বাজারে বিক্রি হচ্ছে। ক্রেতারা জানাচ্ছেন, ৮০ গ্রাম থেকে শুরু করে ২০০ গ্রাম পর্যন্ত ওজনের খোকা ইলিশ মিলছে সিউড়ির বাজারে৷ এই ইলিশগুলি ৮-১০ সেন্টিমিটারের মতো দৈর্ঘ্যের হচ্ছে। ৮০০ গ্রাম থেকে ১ কেজি ওজনের ইলিশের দাম যেখানে কেজি প্রতি অন্তত ১,০০০ টাকা, সেখানে অর্ধেকেরও কম দামে মিলছে এই খোকা ইলিশ। ফলে, চাহিদাও আছে। বিক্রেতাদের একাংশের দাবি, বাজারে খোকা ইলিশের জোগান রয়েছে বলেই তাঁরা বিক্রি করছেন। বিক্রেতাদের আর অংশের দাবি, এমন কোনও নিয়মের কথা তাঁরা জানেনই না।
সিউড়ির টিনবাজার এলাকার একটি মাছের আরতের মালিক সূর্যদেব ধীবর বলেন, “ছোট ইলিশ বিক্রির ক্ষেত্রে কিছু নিয়ম আছে বলে শুনেছি। আমরা বিক্রি না করলেও বাজারে ছোট ইলিশের জোগান রয়েছে, বিক্রিও হচ্ছে। প্রশাসনিক স্তরে এখনও পর্যন্ত কোনও সমস্যা নেই।” নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক মাছ বিক্রেতা বলেন, ‘‘বাজারে খোকা ইলিশের চাহিদা রয়েছে। এর দামও বড় ইলিশের তুলনায় অনেকটাই কম। তাই আমরা বিক্রি করছি। ডায়মণ্ড হারবার বা দিঘা থেকে খোকা ইলিশ আসছে। আরত থেকে পাইকারি দরে মিলছে। তা হলে আমাদের বিক্রি করতে আর দোষ কী?’’
জেলা ইনফোর্সমেন্ট ব্রাঞ্চের ডিএসপি স্বপনকুমার চক্রবর্তী বলেন, ‘‘এই খোকা ইলিশগুলি অন্য জেলা বা রাজ্য থেকে আমাদের জেলায় আসছে। এখানে বিক্রি আটকে সমস্যার সমাধান করা সম্ভব নয়। বরং যে মাঝারি বা ছোট ব্যবসায়ীরা সেগুলি খোলা বাজারে বিক্রির জন্য নিয়ে আসছেন তাঁদের আরও ক্ষতির মুখে ঠেলে দেওয়া হবে। বন্দর এলাকা, যেখানে মৎস্যজীবীরা মাছ তুলে আনেন, সেখানেই নজরদারির ব্যবস্থা করতে হবে। নচেৎ এই বিক্রি আটকানো সম্ভব নয়।’’
‘‘ওয়েস্ট বেঙ্গল ইউনাইটেড ফিসারমেন অ্যাসোসিয়েশনের যুগ্ম সম্পাদক বিজন মাইতি বলেন, ‘‘এ ক্ষেত্রে গলদ নিয়মের মধ্যেই রয়েছে। কোনও মৎস্যজীবী যদি খোকা ইলিশ ধরে আনেন এবং তা যদি আটক করা হয়, তা হলে সেই ধরে আনা মাছ নিলামে তোলে মৎস্য দফতর। নিলামে যে দাম ওঠে তার ৫০ শতাংশ ওই মৎস্যজীবীকে দেওয়া হয় এবং বাকি ৫০ শতাংশ যায় মৎস্য দফতরের কাছে।’’ এই নিয়মের ফলে যিনি বেআইনি কাজ করছেন তিনি শাস্তি পাওয়ার পরিবর্তে এক রকম ভাবে পুরস্কৃতই হচ্ছেন বলে অভিযোগ বিজনের। এর ফলে ছোট মাছ ধরার প্রবণতা বাড়ছে বলেও দাবি করেন তিনি।’
বিজন জানান, মৎস্য দফতরের নিয়ম অনুযায়ী ৯০ মিলিমিটারের থেকে ছোট ফাঁক বিশিষ্ট জাল ব্যবহার করা নিষেধ। কিন্তু ছোট মাছ ধরার তাগিদে অনেক ‘অসাধু’ মৎস্যজীবী ৬০-৭০ মিলিমিটার ফাঁক বিশিষ্ট জাল ব্যবহার করেন। বিজন বলেন, ‘‘এই ধরনের কাজকর্ম চলতে থাকলে ইলিশ মাছই হয়তো লুপ্ত হয়ে যাবে। কিন্তু আমরা আমাদের সংগঠনের সদস্যদের নিয়ম সম্পর্কে জানাতে পারি। তাঁদের কার্যকলাপ আটকানোর ক্ষমতা আমাদের হাতে নেই। আমরা একাধিক বার প্রশাসনকে জানিয়েছি এই ধরনের ঘটনা আটকানোর জন্য। প্রয়োজনে আমরা তাঁদের সব রকম সহযোগিতা করতে রাজি আছি। কিন্তু মৎস্য দফতরের আরও অনেক বেশি সক্রিয় হওয়া প্রয়োজন। ছোট ইলিশ ধরা ও বিক্রি করার ক্ষেত্রে শাস্তিও অনেক কড়া হওয়া উচিত।’’
জেলা মৎস্য দফতরের এক আধিকারিক বলেন, ‘‘বীরভূম জেলায় খোকা ইলিশ ধরা হয় না, বাইরে থেকে আসে। ফলে, এ ক্ষেত্রে বাজারে বিক্রির বিষয়টিতে আমাদের বিশেষ কিছু করার থাকে না।’’