স্মারকলিপি আদিবাসী গাঁওতার। নিজস্ব চিত্র।
জমিদাতাদের চাকরি দিতে হবে, মূলত এই দাবিকে সামনে রেখে মঙ্গলবার বেলা দুটো নাগাদ দুবরাজপুরের বিডিওকে স্মারকলিপি দিল আদিবাসী গাঁওতা। তবে ওই দাবির পাশাপাশি ১০০ দিনের কাজ, গ্রামে ঢালাই রাস্তা গড়া, ঘাট বাঁধানো, পঞ্চজনের ভাতা চালু, জাহের থান বাঁধানো সহ ভাষা কোড চালুর মতো একগুচ্ছ দাবিও স্মারকলিপিতে রাখা হয়েছিল সংগঠনের পক্ষে।
বক্রেশ্বর তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের জলাধার গড়তে জমি দিয়েছিলেন বেশ কয়েকটি আদিবাসী গ্রামের মানুষ। তাঁদের অভিযোগ, তার বিনিময়ে উপযুক্ত ক্ষতিপূরণ বা চাকরি কোনওটাই পাননি। এমনকি মেলেনি ল্যান্ড লুজার শংসাপত্রও।
এ দিন দুপুরে দুবরাজপুর পাওয়ার হাউস মোড় থেকে ব্লক অফিস পর্যন্ত ধামসা মাদল, শালপাতা, তির-ধনুক ও নানা পোস্টার নিয়ে মিছিল বের হয়। ব্লক অফিসে পৌঁছে অবস্থান বিক্ষোভও করেন সংগঠনের সদস্যরা। নেতৃত্বে ছিলেন গাঁওতা নেতা রবীন সরেন। রবীনের দাবি ১৯৯৯ সালে বক্রেশ্বর তাপবিদ্যুতের জলাধার নীলনির্জন গড়ার সময় গোপালপুর নামে একটি গ্রামকে উচ্ছেদ করা হয়। সেই গ্রামে বেশ কিছু আদিবাসী ছিলেন। এছাড়াও বাঁধেরশোল মাজুরিয়া, বৈরাগীকোন্দা সহ কয়েকটি গ্রামের আদিবাসীদের জমি গিয়েছে। জমি নেওয়ার শর্ত অনুযায়ী তাঁদের চাকরি পাওয়ার কথা ছিল। কিন্তু তাঁদের অনেকে ক্ষতিপূরণই সঠিকভাবে পাননি। চাকরি তো নয়ই। বাম আমলের পরে তৃণমূল যখন ক্ষমতায় এল তখনও সমস্যা না মেটায় আন্দোলন শুরু হল।
এক বাম নেতাও বলেন, ‘‘বনদফতর, সরকারি ও ব্যক্তি মালিকাধীন ২৬৬৮ একর জায়গা নিয়ে বক্রেশ্বর নদের ক্যাচমেন্ট এলাকা জুড়ে তৈরি নীলনির্জন জলাধারের জন্য জমিহারাদের বড় অংশকে কাজের সুযোগ দেওয়া গেলেও এখনও একটা অংশ বঞ্চিতের দলে। তার মধ্যে আদিবাসীরাও আছেন।’’
দুবরাজপুরের বিডিও অনিরূদ্ধ রায় বলেন, ‘‘আমি দু বছর এই ব্লকের দায়িত্বে আছি। এই প্রথম এমন একটা অভিযোগ সামনে এল। তবে কোন জমিদাতারা এখনও বঞ্চিত তার তালিকায় ওঁরা দিতে পারেননি। ওটা পেলেই আমি জেলা প্রশাসন ও তাপবিদ্যুত কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করব। বিডিওর সংযোজন, ‘‘বাকি যে দাবিগুলি ছিল তার অধিকাংই সরকারের বিভিন্ন প্রকল্পের আওতায় রয়েছে।’’ তবে প্রচুর সংখ্যক মানুষ নিয়ে এসে হঠাৎ স্মারকলিপি দেওয়াকে রাজনৈতিক অবস্থান হিসেবেই দেখছেন রবীন সরেনের একদা ‘বন্ধু’ সুনীল সরেন। যিনি এখন বিজেপিতে যোগ দিয়েছেন। সুনীল এ দিন বলেন, ‘‘দুবরাজপুর ব্লকে আদিবাসীদের আরও অনেক সমস্যা রয়েছে। সেগুলো ছেড়ে লোক জমায়েতের পিছনে তৃণমূলের নজরে আসার একটা ইঙ্গিত রয়েছে।’’ রবীন অবশ্য তা মানতে চাননি। প্রসঙ্গ এড়িয়ে গিয়েছে তৃণমূলও।
পুলিশ জানিয়েছে, এতবড় মিছিল হবে তার কোনও অনুমতি নেয়নি আদিবাসী সংগঠনটি।